সংবিধানের স্থপতি ড. আম্বেদকার - শুভজিৎ দে

ভীমরাও রামজি আম্বেদকার ছিলেন একজন ভারতীয় আইনবীদ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াও তাঁর আরও অনেক পরিচয় আছে। তিনি বাবাসাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন সকলের কাছে। ভারতের সংবিধানের খসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতিত্ব করেছিলেন, এছড়াও তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বাবাসাহেব আম্বেদকার ভারতের সংবিধানের মুখ্য স্থাপক ছিলেন, তিনি জন্মগ্রহণ করেন 14ই এপ্রিল 1891 সালে, আজ তার 129 তম জন্মবার্ষিকী।




1947 সালের 15 জুলাই বৃটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ‘স্বাধীন ভারত’ হিসেবে আইন পাশ করা হলে গণপরিষদ সার্বভৌম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। দেশ বিভাজনের ফলে গণপরিষদও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ড. আম্বেদকর পূর্ব পাকিস্তানের ভোটার কর্তৃক জয়লাভ করে গণ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে দেশ বিভাজনের ফলে তার সদস্যপদও খারিজ হয়ে যায়। এ সময় ড. এম.আর জয়াকর গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করায় ড. আম্বেদকার কংগ্রেসের সমর্থনে পুনরায় মহারাষ্ট্র থেকে গণ পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয়।

এদিকে ভারতের জাতীয় পতাকা তৈরির দায়িত্ব ড. আম্বেদকরের উপর ন্যস্ত হবার সুযোগে তিনি রাজর্ষি সম্রাট অশোকের রাজকীয় স্মারক ‘অশোক চক্র’ জাতীয় পতাকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।

29 আগস্ট গণপরিষদ কর্তৃক সর্বশ্রী কৃষ্ণস্বামী আয়ার, এন ধাবরাও, স্যার বি.এন.রাও, যুগল কিশোর খান্না, সৈয়দ সাদুল্লা, এস.এন.মুখার্জী ও কেবলকৃষ্ণকে সদস্য এবং ড. আম্বেদকরকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে একটি খসড়া সংবিধান কমিটি গঠন করা হয়। 1948 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি খসড়া সংবিধান সম্পূর্ণ করে গণপরিষদের সভাপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের কাছে হস্তান্তর করেন। অতঃপর সংবিধানটি জনমত যাচাইয়ের জন্য 6 মাস সময় নেয়ার পর 1948 সালের ৪ঠা নভেম্বর ড. আম্বেদকর খসড়া সংবিধানটি গণপরিষদে পেশ করেন।

এই সংবিধান রচনা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক নীতিবিরোধী কিছু কিছু ধারা পার্টির হাই কমান্ডের চাপের মুখে সংযোজন করতে হয়েছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতাদের পরামর্শও শুনতে হয়েছে। ফলে অনেক সময় নিজেদের অভিরুচি ও স্বাধীন বিবেচনা মাফিক কাজ করতে পারেননি বলে সংবিধান কমিটির সদস্য এম.সাদুল্লা ও অনেকেই স্বীকার করেন। তবু এই সংবিধান ভারতের সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে তৈরির জন্য যত বেশি সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে।

1949 সালের 26শে নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধানকে স্বাধীন ভারতের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করে সভাপতির ভাষণে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ ড. আম্বেদকরকে খসড়া সংবিধান কমিটির সদস্য ও চেয়ারম্যান নির্বাচন করাকে একটি নির্ভুল সিদ্ধান্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তার এই অভিমত কারণ বোঝা যায় সংবিধানেরর প্রস্তাবনা অংশটি দেখলে, যেখানে বলা হয়েছে - 

“আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম,
সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র  হিসাবে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করছি এবং তার নাগরিকের জন্য
সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার ;
চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা, 
মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার সমতা সৃষ্টি
এবং তাঁহাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্য সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের গণপরিষদে আজ, 26 নভেম্বর, 1949 তারিখে, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং আমাদিগকে অর্পণ করিতেছি।”

তথ্যসূত্র - Wikipedia

Comments

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে