131 তম জন্মবার্ষিকীতে চ্যাপলিন : দ্য কিং অব লাফটার - শুভজিৎ দে

' হাসি হলো ঔষধ, যেটা দুঃখ থেকে মুক্তি দেয়' বা  ' শেষে সব কিছুই ঠাট্টা ' এমন কথা কজনে বলার সাহস দেখায়, একটি কথাও না বলে কেবল অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মানুষকে বসিয়ে রাখার অমন ক্ষমতা সে সময় অন্য কারোর ছিল না, সেই কাজটি নিরলস ভাবে করে আমাদের ঋণী করে গেছেন চ্যাপলিন।

চার্লি চ্যাপলিন, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা। হলিউড সিনেমার শুরুর সময় থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত তিনি তার অভিনয় ও পরিচালনা দিয়ে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেন। চ্যাপলিনকে চলচ্চিত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়। চলচ্চিত্র শিল্প জগতে চ্যাপলিনের প্রভাব অনস্বীকার্য।

চিত্রঋণ Wikipedia

পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। যদিও তার জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে, তবে প্রচলিত রয়েছে 1889 সালের 16 এপ্রিল লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন।

1891 সালের স্থানীয় আদমশুমারি থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্না চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটনের অন্তর্গত। ইতিমধ্যে তার বাবা চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়রের সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। চ্যাপলিনের শৈশব কাটে প্রচণ্ড দারিদ্র্য আর কষ্টের মধ্য দিয়ে।

পিতৃহারা চ্যাপলিন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন। শৈশব সম্পর্কে চার্লি চ্যাপলিন বলেন, যদি ভাগ্য সহায় না হতো, তাহলে আমি লন্ডনের পথে পথে চুরি করে বেড়াতাম। তার মা-বাবা দু’জনেই মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই এ পেশাতে আসা তার কাছে সহজ ছিল। চ্যাপলিন সেই সময়ের জনপ্রিয় লোকদল ‘জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’-এর সদস্য হিসেবে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর 14 বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশ ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসেবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময়- তা সবাইকে জানিয়ে দেন। 1914 সালে 25 বছর বয়সে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এ সিনেমাটি প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট। এ সিনেমাতে চার্লি অভিনয় করেন খামখেয়ালি উচ্ছৃংখল প্রকৃতির যুবকের চরিত্রে।

1914 সালে তার নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে মানুষকে হাসানোর মতো দুরূহ কাজটি শুধু অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যিনি করতেন অত্যন্ত সফলভাবে। সাদাসিধে ভবঘুরে একটা মানুষ, যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে লোকটির অদ্ভুত গোঁফ। তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন আর ঘটাচ্ছেন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা। আর এসব দেখেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।

1914-1967 পর্যন্ত 81টি ছোটবড় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। শেষ ছবি মার্লন ব্রান্ডো আর সোফিয়া লরেন অভিনীত ‘এ কাউন্টেন ফ্রম হংকং’। চ্যাপলিন জাহাজের স্টুয়াটের ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। সাধ ছিল কিন্তু সাধ্য ছিল না। কন্যা ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে ‘দ্যা ফিক’ নামে ডানাওয়ালা এক বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করে চলে গেছেন অন্যত্র। শেষ জীবনের কয়েক বছর কেটেছে অসুস্থতায়। 25 ডিসেম্বর 1977 চ্যাপলিন ঘুমের মধ্যেই চিরতরে বিদায় নেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাকে ফ্রান্স সরকার 1971 সালে লেজিওঁ দনরের কমান্ডার ও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ 1975 সালে নাইটহুডে ভূষিত করেন। মৃত্যুর পরও চ্যাপলিন তার নির্মিত দ্য গোল্ড রাশ, সিটি লাইট্‌স, মডার্ন টাইমস ও দ্য গ্রেট ডিক্টেটর চলচ্চিত্র দিয়ে অমর হয়ে আছেন।

তথ্যসূত্র 

Wikipedia

Comments

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে