মহাশূন্যে প্রথম পা রাখার 45 বছর - শুভজিৎ দে
বিজ্ঞানের প্রধান স্তম্ভ যে দুটি তা হচ্ছে দশমিক ও শূন্য। আর তার আবিষ্কর্তা হচ্ছেন এক ভারতীয় বিজ্ঞানী নাম তার আর্যভট্ট। যদিও তার এই আবিষ্কার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, তা নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকলেও আমরা আর্যভট্টকেই তার আবিষ্কর্তা মনে করে থাকি। E= mc2 বা নিউটনের যে সূত্রে বিজ্ঞান আজ আবর্তিত হয়ে চলেছে তা অনেকটাই অধরা থেকে যেত যদি শূন্য ও দশমিক আবিষ্কার না হত। সেই আর্যভট্টের নামেই তাই ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নামাঙ্কিত হয় তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ।
চিত্রঋণ - Wikipedia
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত ‘নাইকে-অ্যাপাচে’ নামে দ্বিস্তরীয় এক রকেট (প্রথম রকেট) কেরলের ছোট্ট জেলেদের গ্রাম থুম্বা থেকে সাফল্যের সঙ্গে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশে প্রথম স্বাক্ষর রেখেছিল।তিরুবনন্তপুরমের প্রান্তসীমায় অবস্থিত থুম্বা অক্ষীয় রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে সেই সময় কোন বাড়ি ছিল না। সেখানকার বিশপের বাড়ি থেকে অধিকর্তার অফিস হিসেবে কাজ চালানো হত। প্রাচীন সেন্ট মেরি ম্যাকডালিন গির্জা ভবনটিকে কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হত এবং 1963-র 21 নভেম্বর খালি চোখে রকেটের ধোঁয়ার লাইনে নজর রাখা হয়েছিল। গরুর গাড়ি এবং সাইকেলের মাধ্যমে রকেটের যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উৎক্ষেপণ স্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল।
এর 12 বছর পর 1975 সালে ভারত এক রাশিয়ান রকেটের মাধ্যমে প্রথম পরীক্ষামূলক উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’ উৎক্ষেপণ করে। 1972 সালে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই উপগ্রহ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অবশেষে 1975 সালের 19 এপ্রিল কাপুষ্টিন ইয়ার থেকে কসমস-3 এম লঞ্চ ভেইকেলের মাধ্যমে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থাৎ বর্তমান রাশিয়ার সাহায্যে উৎক্ষেপণ করা হয় আর্যভট্ট উপগ্রহ টিকে। উপগ্রহটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অর্থাৎ ইসরোর মহাকাশবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার কাজ চালানোর জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। উপগ্রহটি রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে উৎক্ষেপণ করা হলেও এর প্রধান দায়িত্ব ইসরোর উপর ছিল। পরিকাঠামোর অভাবে বিজ্ঞানীরা ব্যাঙ্গালোরের ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংগঠনের একটি শৌচাগারকেও তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এই উপগ্রহের ভর ছিল আনুমানিক 350 কিলোগ্রাম এবং ক্ষমতা প্রায় 45 ওয়াট। আর্যভট্ট স্যাটেলাইটটি 5 বছর 11 মাস সক্রিয় ছিল এবং 1981 সালের মার্চ মাসে এর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। পুরনো পোস্টাল স্ট্যাম্পে আর্যভট্ট স্যাটেলাইটের ছবি ছিল, এমনকি পুরোনো দু টাকার নোটেও আর্যভট্ট স্যাটেলাইটের ছবি ছিল দেখা যায়।
থুম্বায় প্রথম শিশু পদক্ষেপ নেওয়ার পর ভারতীয় মহাকাশ উদ্যোগ বহু চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে অনেক মাইলফলক স্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাপী উপগ্রহ উৎক্ষেপণ ও উপগ্রহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংগঠন ইসরো এক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হিসেবে উঠে এসেছে। জাতি চন্দ্রাভিযানের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে, নতুন নতুন উপগ্রহ নির্মাণ করেছে, এমনকি, অন্যদের জন্যও এই কাজ করেছে। বিদেশি উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে এমনকি, সাফল্যের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহেও মহাকাশ যান প্রেরণে সফল হয়েছে। ঐ অভিযানের পর থেকেই মহাকাশের প্রতি ইসরো (ISRO) তথা সমগ্র ভারতবাসীর আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। অর্থাৎ তারপর থেকেই মহাকাশে ইসরোর পদার্পণ শুরু হয়। সেই প্রথম উৎক্ষেপণ আজ 45 বছর পূর্ণ হল।
তথ্যসূত্র
Wikipedia
বেশ তথ্য সমৃদ্ধ
ReplyDelete