Posts

Showing posts from February, 2020

তিলোত্তমা শহরের চার্চনামা - শুভজিৎ দে

Image
কলকাতা শহরে খ্রিষ্টানদের উপাসনার জন্যে প্রথম যে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল তা কোনও গির্জা নয়, ছোট একটা উপাসনাগৃহ৷ এখনকার জিপিও-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অঞ্চলে ছিল ইংরেজদের প্রথম কুঠি ও দুর্গ৷ তার মধ্যেই ছিল সেই উপাসনাগৃহ৷ তার পর বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছে আর্মেনিয়ান চার্চ (১৭০৭), সেন্ট অ্যান’স চার্চ (১৭০৯), মিশন চার্চ (১৭৭০), সেন্ট জন্ স্ চার্চ (১৭৮৭), পর্তুগিজ চার্চ (১৭৯৯), সেন্ট অ্যান্ড্রূজ চার্চ (১৮১৮), সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল (১৮৪৭), সেন্ট জেমস চার্চ (১৮৬৮), সেন্ট মেরিজ চার্চ (১৮৮৭), গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ (১৯২৫) আরও অনেক গির্জা৷ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ কলকাতায় আজও নজর কাড়ে বেশ কিছু গির্জা। বড়দিনের আগে থেকেই এগুলি আলোকমালায় সেজে উদাসী শীতের মরসুমে আবারও শহরে উৎসবের মেজাজ ফিরিয়ে আনে। কলকাতায় বড়দিন উৎসব ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে কথা সঠিক ভাবে জানা না গেলেও, অনুমান করা হয় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা এ দেশে আসার পর থেকেই উপাসনার জন্য তৈরি হয়েছিল প্রার্থনাকক্ষ। তবে ইংরেজরা এ দেশে আসার অনেক আগেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান ও পর্তুগিজরা বাংলায় এসেছিল। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ফিরিঙ্গি বণিকদের

ন' দশক পার, এখনও Not-Out : হাওড়ার বড়ঘড়ি - শুভজিৎ দে

Image
একাধিক সাহিত্যে , বহু বাংলা সিনেমায় এই বড় ঘড়িকে দেখানো হয়েছে। আসলে বাঙালির জীবনে এই ঘড়ি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। অসংখ্য গল্প আর নস্টালজিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বড় ঘড়িকে ঘিরে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তো বড়ঘড়ি বেশ জড়িয়ে আছে। হবু স্ত্রী এর সঙ্গে দেখা করার জায়গা ছিল তো এই বড় ঘড়ি। আসলে বড় ঘড়ি যে, আস্তে আস্তে আমাদের জীবনে ল্যান্ডমার্কের থেকেও অনেক বড় নস্টালজিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুবার আমি নিজেও যখন কবাডি খেলার জন্য বাইরে যেতাম, তখন ফোন না থাকায়, আগের দিন মাঠে অনুশীলন শেষে সতীর্থ সবাইকে বলে দিতাম এখানে অপেক্ষা করতে। ফোন ব্যবহার শুরু করলেও কলেজের বিভাগীয় ভ্রমণের জন্য সব জুনিয়র দের এখানেই অপেক্ষা করতে বলি, এই জায়গাটা থেকেই যেন এই অঞ্চলের জি.পি.এস. সিস্টেম শুরু হয়। বছর কয়েক আগে 2010 নাগাদ একবার কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও দ্রুত তা মেরামত করা হয়। ঘড়িটি স্থাপনের 94 বছর পরেও এতদিন ধরে অক্লান্তভাবে সঠিক সময় দিয়ে চলেছে আজও। দেখা যায়, এখনও অনেক যাত্রী নিজেদের ঘড়ির সময় বড় ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে নেন। পাশাপাশি 9 দশকের বেশি সময় ধরে অসংখ্য মানুষের মিলনস্থল হিসেবেও স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হ

বাংলার স্থাপত্যকীর্তি : চালা মন্দির শৈলি - শুভজিৎ দে

Image
প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে সৌধ নির্মাণের প্রথা অব্যাহত রয়েছে। নগরায়ণের অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে উপাসনার ক্ষেত্রেও স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কাল থেকে নির্মিত অনেক সৌধ প্রাকৃতিক কারণে কিংবা বিরুদ্ধবাদীদের আঘাতে বর্তমানে নিশ্চিহ্ন প্রায়। যদিও বিরুদ্ধমতাবলম্বীদের আচরণে বৈপরীত্যের নজির অতীতেও যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমন আছে। যেমন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের বিষ্ণুমন্দির নির্মাণে অকুণ্ঠ সহয়তা; হিন্দু ও মুসলিম শাসক কর্তৃক মঠ-মন্দির, দরগা নির্মাণে সহয়তাদান ইত্যাদি। বাংলার চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সোনালি ফসলের ক্ষেত্র অথবা উঁচুনিচু অনুর্বর প্রান্তর ও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বনভূমি। প্রবাহমান নদী-নালার জলধারায় সঞ্জীবিত ভূভাগের স্থানে স্থানে আজও চোখে পড়ে নানান ধর্মীয় ইমারত। কালের প্রবাহে অযত্ন ও কংক্রিটের জঙ্গলে কর্মব্যস্ত মানুষ ডুব দেওয়ায় সেসব স্থাপত্যসৌধের অধিকাংশ জীর্ণ হয়ে পড়লেও যেগুলি টিকে আছে, তার থেকে অনুমান করা যায় প্রাচীন বাংলার জীবনচর্চা ও শৈল্পিকবোধের পরিচয়। পরবর্তীকালে মূলত খ্রিস্টিয় পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলায় নবপর্যায়ে মন্দির নির্মাণের সূত্রপাত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতা বিংশ শতক

কালাপানির অন্ধকার থেকে "শহীদ" ও "স্বরাজ" দ্বীপপুঞ্জ - শুভজিৎ দে

কালাপানি অঞ্চল ভারত ও নেপালের মধ্যকার বিতর্কিত একটি অঞ্চল যা উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় অবস্থিত বর্তমানে ভারত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অঞ্চলটি হিমালয়ের কালী নদীর অন্যতম প্রধান জলপথ কালাপানি বা শার্দা নদী দ্বারা চিহ্নিত যার উচ্চতা ৩৬০০-৫২০০ মিটার পর্যন্ত। কালাপানি উপত্যকাটির সর্বোচ্চ চূড়া লিপুলেখ পাস যার মধ্য দিয়ে প্রাচীন তীর্থস্থান যাত্রার কৈলাস-মানস সরোবরপথ তৈরি হয়েছে। পথটি উত্তরাখণ্ডের ভুতিয়া গোত্রদের দ্বারা তিব্বতে বাণিজ্য করার অন্যতম সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কালী নদী পশ্চিম দিকে ভারত এবং নেপালকে বিভক্ত করেছে। তবে ভারত দাবী করে, নদীর তীরবর্তী শাখাসমূহ সীমানায় অন্তর্ভুক্ত নয়। সীমানাটি জলবিভাজিকার সাথেই অবস্থিত। ভারতের এই অবস্থানটি ব্রিটিশ ভারতের সময় অনুমানিক ১৮৬৫ থেকে চলে আসছে। এই অঞ্চলের কাছেই টিঙ্কার পাস নামে নেপালের আরো একটি পাস রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ভারত লিপুলেখ পাসটি বন্ধ করে দিলে অধিকাংশ বাণিজ্য টিঙ্কার পাস দিয়ে সংগঠিত হত।১৯৯৭ সালে যখন ভারত ও চীন উভয়ে লিপুলেখ পাসটি উন্মুক্ত করে দিতে সম্মত হয় তখন নেপাল কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধীতা শুরু

ক্লাইভ হাউস - শুভজিৎ দে

Image
বলুনতো, কলকাতায় দোতলা ফুটবল মাঠ কোথায় আছে ? - আচমকাই এমন এক প্রশ্ন আমায় করেছিলেন আমার স্যার । বুঝতে পারিনি, আর বুঝবই বা কি করে তখন খুব ছোটো । পরে জানলাম জায়গাটির নাম ক্লাইভ হাউস ।  ক্লাইভ হাউস একটু বড় হতে স্যারের সাথে যাওয়া, স্যার আমাদের নিয়ে গেলেন ঢিপির (MOUND) ধারে । বিষয়টি তখন পরিস্কার হয়, আমি নির্বাক । ঢিপির বেশ খানিকটা নীচে ঢিপি লাগোয়া মাঝারি আকারের খেলার মাঠ, স্থানীয় ছেলেরা দল বেঁধে ক্রিকেট খেলছে, একটা বল উড়ে আসে ঢিপির ওপর, বলটা ফিরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি স্যার হাসছেন, বললেন নীচের মাঠটা দেখলি, এখন পিছন ঘুরে দেখ, তাকিয়ে হতবাক হবার পালা । ঢিপিটা এত বড় ও সুবিস্তৃত খেয়াল করি নি, অল্প গাছপালার আড়ালে আরও একটা খেলার মাঠ, নীচের মাঠটির থেকে এটা আরও অনেক বড়, অকৃত্রিম, বানানো নয়, সবুজ ঘাস । একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে । ডিসেম্বরের নরম রোদ্দুর ঘাসে পড়ে যেন ঠিকরোচ্ছে । দক্ষিন থেকে হালকা ঢাল উত্তরের দিকে । এটাও খেলার মাঠ । দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল খেলা হয়, ফুটবল গ্রাউন্ড হিসেবেও বেশ নামডাক আছে । এভাবেই নীচে স্বাভাবিক সমতলে ও সমতল থেকে প্রায় 11 ফুট উঁচুতে অনেকটা off set এর আঙ্গিকে দুটি অকৃত্

এক ইংরেজ সাহেবের হিন্দু হওয়ার গল্প : হিন্দু স্টুয়ার্ট - শুভজিৎ দে

Image
১৭৭৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে কোম্পানির সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাডেট বা সৈনিক হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলায় আসেন চার্লস স্টুয়ার্ট। তারপর ধীরে ধীরে পদোন্নতি হয়ে শেষে মেজর জেনারেল হিসাবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সেই সময় তার বার্ষিক মাইনে ছিল প্রায় দু’হাজার পাউন্ড ! সেই আমলে এই বিপুল পরিমান অর্থ নিজের এক অদ্ভুত শখের পেছনে খরচ করতেন ভদ্রলোক। সারা ভারত থেকে ভারতীয় পুরাতত্বের নানা নিদর্শন এনে জড়ো করতেন নিজের বাসায়। বিশেষ করে হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি। তবে শুধু মাত্র সংগ্রাহক দৃষ্টি দিয়ে এই কর্মকান্ড কে দেখলে ভুল হবে। প্রথম গল্পটা থেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে সনাতন রীতি রেওয়াজ ও ধর্মাচরণ আপন করে নিয়েছিলেন সাহেব। সেই থেকেই তার নাম হয়েছিল “হিন্দু স্টুয়ার্ট” !  (হিন্দু স্টুয়ার্ট এর সমাধি) সেই সময় অনেক ইউরোপীয়ানরাই দেশে এসে দেশি রীতি রেওয়াজ আপন করে নিতেন। শুরু হয়েছিল পর্তুগিজদের দিয়ে। বিশেষ করে পর্তুগিজ সেনাবাহিনীর নিচের দিকের কর্মীরা পর্তুগিজ এলাকা থেকে পালিয়ে এসে বিভিন্ন দেশীয় নবাব বাদশাদের কাছে চাকরি নিতেন। নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি তো হতোই – তার সাথে পদমর্যাদাতেও লাভ হত