Posts

Showing posts from October, 2019

বঙ্গ সংস্কৃতি : পটচিত্র - শুভজিৎ দে

Image
গ্রাম বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের অন্যতম আকর্ষণ পটচিত্র। পটচিত্রের শুরু কবে তার সঠিক সময়কাল জানা সম্ভব হয়নি। অনুমান করা হয় পটচিত্রের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। পট এর আভিধানিক অথর্ -বস্ত্র, যা সংস্কৃত ‘পট্ট’ শব্দ থেকে এসেছে। লম্বা কাপড়ে দীর্ঘ রেখা টেনে ছবি আঁকাই হচ্ছে পটচিত্র। পটচিত্র আঁকার কাজে ব্যবহৃত হত দেশজ রঙ এবং মোটা কাপড়। তবে, কাপড়ে পটচিত্র আঁকার প্রচলন কমে যায় কাগজ আবিষ্কারের পর থেকেই। পট চিত্রশিল্পীদের ডাকা হয় ‘পটুয়া’ নামে। তাঁরা যে শুধু চিত্রশিল্পীই তা নয়, তাঁরা চিত্র প্রদর্শনীর সময় সুরে সুরে গানে গানে কাহিনী বিবরণ করেন । পটচিত্রের সময় যে গান গাওয়া হয় তা ‘পটের গান’ নামে পরিচিত। ‘পটুয়া’রা সাধারণত মাপকাঠি কিংবা মডেল সামনে বসিয়ে নিয়ম-রীতি মেনে ছবি আঁকেন না। দীর্ঘ রেখা টেনে কাহিনী চিত্রায়িত করেন নিজেদের মতো করে। শিল্প-সমোঝদারদের কাছে গুরুত্ব পায়নি এই পটচিত্র। পটচিত্রের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য কিংবা স্বকীয়তা রয়েছে। রেখা টানার সময় সেখানে কোনো অনুভূতি প্রকাশের প্রয়োজন মনে করেন না, বিভিন্ন রকমের অবয়ব এঁকে গল্প সাজান ধারাবাহিকভাবে।পটচিত্রগুলো সুনিপুণ হয় না। কারণ, সাধারণ কয়েক ধাপে আঁকা হয়। প্রথম

স্মৃতিতে আজও বেঁচে; প্রসঙ্গ নবাব ও মেটিয়াবুরুজ - শুভজিৎ দে

Image
      নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ            যব ছোড় চলে লখনৌ নগরী...শুধু নগরী নয়। তাঁকে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল প্রাণের চেয়ে প্রিয় অওয়ধ। নবাবি চলে যাওয়ার মুহূর্তেও চোখে জল আসেনি। কারণ মনে করতেন, একমাত্র সঙ্গীত এবং কবিতাই প্রকৃত পুরুষের চোখে জল আনতে পারে। তিনি অওয়ধের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। রাজ্যহারা নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ জীবনের শেষ তিরিশ বছর কাটিয়েছিলেন কলকাতাতেই। সময় যত এগোচ্ছে, এই শহরের ওপর তাঁর সাংস্কৃতিক প্রভাব তত ফুটে উঠছে। একদা শ্রীপান্থ এই বিষয়ে প্রথম বই লিখেছিলেন, এখন আরও অনেকেই— ইংরেজি-বাংলা, দুই ভাষাতেই। নবাবের বাড়ি পত্রিকা থেকে পাওয়া নবাবের সমাধি সে  উনিশ শতকের কথা। তখন বাংলা বানানে লখনউ শহরটাও ছিল অন্য রকম: ‘লক্ষ্ণৌর বাদশা কয়েদ থেকে খালাস হয়ে মুচিখোলায় আসায় শহর বড় গুলজার হয়ে উঠলো।’ লিখছেন হুতোম। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ দিয়েই মুখপাত শ্রীপান্থের ওয়াজিদ-দর্শনের। অযোধ্যার সদ্য-রাজ্যহারা নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কোম্পানির পেনশন নিয়ে লখনউয়ের কোনও প্রাসাদে নিশ্চিন্তে থাকতেই পারতেন। তা না করে ছুটলেন কলকাতা। ইচ্ছে, কাউন্সিলের কর্তাদের কাছে সওয়াল করবেন সিংহাসন উদ্ধারের জন্য।

কলকাতায় প্রথম টেলিফোন - শুভজিৎ দে

Image
         ( প্রথম দিকের টেলিফোন )                                      ‘ক্রিং ক্রিং __ক্রিং ক্রিং ...’          আহা কী মধুর সে শব্দ । কোনো গান নয়, বা বাদ্যযন্ত্রের অপূর্ব রাগ নয়। স্রেফ যান্ত্রিক ক্রিংক্রিং-- আর তাতেই মজে গিয়েছিল কলকাতা শহর। টেলিফোনের কী অপূর্ব অনুবাদই না হয়েছিল বাংলায়- দূরভাষ। কতরকম বিবর্তনের ভিতর দিয়ে গিয়ে, কতরকম রূপ পালটে টেলিফোন দৌড়েছিল প্রায় দেড়শো বছর। আজও চলছে বটে, তবে ধিকিধিকি। সেই দুরন্তবেগ ক্রমহ্রাসমান।  ( বৈদ্যুতিক বাতি ও টেলিফোনের বিজ্ঞাপন ) বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কারই সমাজজীবনে ঢের পরিবর্তন এনেছে। তবে টেলিফোন সমাজজীবন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সম্পর্কের নিবিড় আলাপচারিতাকে পর্যন্ত নিজের প্যাঁচানো তারে বেঁধেছিল। টেলিফোন আসায় প্রেমের বয়ান গেল বদলে। প্রেমপত্রের অধীর অপেক্ষা গিয়ে ঠেকল ক্রিংক্রিং- ধ্বনিমাধুর্যে। গোটা বিশ্বও যেন সেই এক ধ্বনিতে বাঁধা। কলকাতা তো বটেই।   ( Morce Code টেলিগ্রাফ যন্ত্রে ব্যবহৃত সংকেত ) ( টেলিগ্রাফ যন্ত্রে ) ১৮৭৬ সালে গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। বেলসাহেবের সেই বেল খুব দ্রুতই বিশ্বময় জনপ্রিয় হয়ে

আওরঙ্গজেবকে যেমন চিনলাম ও চামকর যুদ্ধ - শুভজিৎ দে

Image
মুঘল সম্রাটদের মধ্যে কেবল একজনই ভারতীয়দের মধ্যে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন - তিনি আলমগীর আওরঙ্গজেব। আবু মুজাফ্‌ফর মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর খুব সম্প্রতি আওরঙ্গজেবকে নিয়ে গবেষণা অনেক দূর এগিয়েছে । আমি যাঁর বই পড়ে এই লেখাটি লিখছি তার ( অড্রে ট্রুস্কে ) সাথে অবশ্যই পড়তে হবে M. Athar Ali, Satish Chandra, S.M. Azizuddin Husain, Irfan Habib, Harbans Mukhia, এবং Jhon Richards এর কাজ । বহু গবেষক আওরঙ্গজেবের সময়ের নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন যেমন, স্থাপত্য বিষয়ে Catherine Asher, মন্দির ভাঙ্গা নিয়ে Richard M. Eaton, শিখ সম্পর্ক নিয়ে Louis Fenech, শিরহিন্দিদের নিষিদ্ধ করা নিয়ে Yohanan Friedmann, দাক্ষিণাত্য অভিযানের যুদ্ধ বিষয়ে Jos Gommans, মুঘল-মারাঠা দ্বন্দ্ব নিয়ে Stewart Gordon, হিন্দু সন্যাসীদের নিয়ে B.N. Goswamy, হিন্দু সন্যাসী আর শিখদের নিয়ে J.S. Grewal, ফতাওয়াইআলমগিরি নিয়ে Alan Guenther, রাজপুত দের সাথে সম্পর্ক নিয়ে Robert Hallissey, জৈনদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে Shalin Jain, কেশবদেব মন্দির বিতর্কে Heidi Pauwels, গানবাজনা বিষয়ে katherinr Butler Scholfield ( nee Brow

আকবরকে কি দ্য গ্রেট বলা চলে ? - শুভজিৎ দে

Image
আকবর ভারতবর্ষের ইতিহাসে খুবই কম সংখ্যক কিংবদন্তির নামের পূর্বে “মহান” অথবা ইংরেজি “The Great” প্রত্যয়ে ভূষিত হয়েছেন। আমি সেই তিন মহানের নাম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি - আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (তিনি এদেশের মানুষ না হয়েও, তিনি এই ভারতভূমি তে 'মহান' সম্মানে ভূষিত হন) সম্রাট অশোক এবং সম্রাট আকবর। তাদের নামের পূর্বে এই “মহান” ভূষণ অতি সহজে অলংকৃত হয়নি। এর জন্য তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক অবিস্মরণীয় সব কর্মকান্ড করতে হয়েছিল। এই ভারত এর  ভূমিতে  একের পর এক অসংখ্য জ্ঞানী গুণী জন্ম নিয়েছেন। যেমন, কণিস্ক, চন্দ্রগুপ্ত, পৃথ্বীরাজ, রানা প্রতাপ, বাজীরাও, শিবাজী, রণজিৎ সিং, রাজা রাজা চোল-এর মত আরও অনেকজন। কিন্তু ভারতীয় ইতিহাসবিদরা কেউ তাদেরকে “মহান” অথবা “The Great” বলে আখ্যায়িত করেন নি। এটার একটাই কারন হতে পারে। “মহান” উপাধি প্রাপ্ত হওয়া খুবই শক্ত কাজ। মহান উপাধিতে ভূষিত হতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে নির্মম খুনী হতে হবে। এবং আপনাকে অবশ্যই ইতিহাসের মূল স্রোতে কোন না কোনভাবে আঘাতকারী হতেই হবে। এই গ্রেটদের নামের তালিকায় প্রথমেই আসবে আলেকজান্ডার এর নাম, যিনি সমস্ত বিশ্বজ