আকবরকে কি দ্য গ্রেট বলা চলে ? - শুভজিৎ দে

আকবর

ভারতবর্ষের ইতিহাসে খুবই কম সংখ্যক কিংবদন্তির নামের পূর্বে “মহান” অথবা ইংরেজি “The Great” প্রত্যয়ে ভূষিত হয়েছেন। আমি সেই তিন মহানের নাম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি - আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (তিনি এদেশের মানুষ না হয়েও, তিনি এই ভারতভূমি তে 'মহান' সম্মানে ভূষিত হন) সম্রাট অশোক এবং সম্রাট আকবর। তাদের নামের পূর্বে এই “মহান” ভূষণ অতি সহজে অলংকৃত হয়নি। এর জন্য তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক অবিস্মরণীয় সব কর্মকান্ড করতে হয়েছিল।

এই ভারত এর  ভূমিতে  একের পর এক অসংখ্য জ্ঞানী গুণী জন্ম নিয়েছেন। যেমন, কণিস্ক, চন্দ্রগুপ্ত, পৃথ্বীরাজ, রানা প্রতাপ, বাজীরাও, শিবাজী, রণজিৎ সিং, রাজা রাজা চোল-এর মত আরও অনেকজন। কিন্তু ভারতীয় ইতিহাসবিদরা কেউ তাদেরকে “মহান” অথবা “The Great” বলে আখ্যায়িত করেন নি।

এটার একটাই কারন হতে পারে। “মহান” উপাধি প্রাপ্ত হওয়া খুবই শক্ত কাজ। মহান উপাধিতে ভূষিত হতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে নির্মম খুনী হতে হবে। এবং আপনাকে অবশ্যই ইতিহাসের মূল স্রোতে কোন না কোনভাবে আঘাতকারী হতেই হবে।

এই গ্রেটদের নামের তালিকায় প্রথমেই আসবে আলেকজান্ডার এর নাম, যিনি সমস্ত বিশ্বজয়ের অভিলাষে অগণিত মানুষ হত্যার পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে রাজা পুরু (Porus) এর কাছে অনাকাঙ্খিত ভাবে প্রায় পরাজিত হন তিনি। নিজের জীবন এবং বাকি বেঁচে থাকা বেশিরভাগ সৈন্য যারা ম্যালেরিয়ায় ভুগছিল তাদের বাঁচানোর জন্য লজ্জাজনক ভাবে পালিয়ে যান।কিন্তু আমাদের ভারতের মহান ইতিহাসবিদগণ এটাকে পোরাসের পরাজয় বলে মনে করেন। মনে হচ্ছে তারা দেশ ও  ইরফান হাবিবের মত ইতিহাসবিদ কম, কবি ও সৃষ্টিশীল লেখক বেশী। কিন্তু অপরপক্ষে গ্রীক ইতিহাসবিদগণ আলেক্সজান্ডারের এই পরাজয় কিছু লেখায় স্বীকার করেছেন! কিন্তু এই ব্যাপারটি ছাড়াও মূল বিষয়টি হচ্ছে তিনি আক্রমণ করেছেন এবং অসংখ্য প্রাণ হত্যা করেছেন তাই তিনি “মহান“।

তার পরেই আসে রাজা অশোকের নাম যিনি তার শাসনাকালে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেন এবং হঠাৎ করেই তার অনুশোচনা উদয় হয়। এমনকি একজন জনপ্রিয় সৃষ্টিশীল ইতিহাসবিদ পরিচালক রাজা অশোকার অগণিত স্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম এক স্ত্রীর সাথে তার প্রেমের গল্প নিয়ে একটি চলচিত্র পর্যন্ত তৈরী করেছেন।কিন্তু মোদ্দাকথা হচ্ছে তিনি “মহান” উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন কারণ অনুতপ্ত হওয়ার পূর্বে তিনি অগণিত তাজা প্রানের রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন যা তখনকার সময়ের অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল। তাছাড়া তিনি হিন্দুত্ববাদের মূল স্রোত থেকে পথ বিচ্যুত হয়েছিলেন।

সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরে আরও কয়েকশ বছর ঐ রকম কৃতিত্বের কেউ পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি। তারপরে এলো বর্বর লুটেরাদের যুগ। যারা পশ্চিম এশিয়া থেকে এসেছিল ইসলামের ঝাণ্ডা হাতে এবং সন্ত্রাসী জিহাদি কর্মকান্ডের পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল। তাহলে তাদের মধ্যে কে “মহান” উপাধির মত এমন লোভনীয় গুণবাচক বিশেষণে বিশেষিত হবেন তা নিয়ে দীর্ঘ শতাব্দী ধরে ভারতীয় সেকুলার বামপন্থী ইতিহাসবিদদের একটা বিতর্ক চলছিল। অবশেষে এল সেই কুখ্যাত মুঘল বাবর যার পিতা তীমুর ও মাতা ছিলেন চেঙ্গিস খানদের বংশধর। একজন নৃশংস লুটেরা, ধর্ষক, খুনী, সমকামী শিশু যৌনচারী। এই সেই জেহাদি বাবর যার ভারতের প্রত্যেক স্কুলের ইতিহাস বইয়ের প্রথম পাতায় তার প্রতিচ্ছবি থাকার মত বিরল সম্মান রয়েছে।

বাবরের মত সমকামী যৌনাচারীর পৌত্র যিনি ইতিহাসের বর্বরতা ও নারকীয়তার সমস্ত কল্পনাশক্তিকে হার মানিয়েছেন তিনি হলেন 'আকবর দ্যা গ্রেট'।স্বাভাবিকভাবেই তিনি মহান উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন!তার এই নারকীয় ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ এ যুগের ওসামা বিন লাদেনও করে দেখাতে পারেনি। খুব সম্প্রতি ISIS এর আবু বকর আল বাগদাদিও হয়তো তা করে দেখাতে পারবেন না।

যে সকল প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদগণ  নিরপেক্ষতার অজুহাতে সম্পূর্ন নির্ভরযোগ্যহীন সূত্র দিয়ে তাকে মহান রূপে চিত্রিত করতে চাইছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করে আমি গর্বিত। এই রকম দেশ বিরোধী ইতিহাসবিদদের মতন বিশ্বাস ঘাতক থাকলে কোন দেশের বাইরের শত্রুর প্রয়োজন নেই।এখন বুঝতে পারি ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিশ্বাসঘাতকেরাই প্রভাবশালী।ভারতের উচ্চশিক্ষায় ইতিহাসের পরিসর মনে হচ্ছে প্রায় সম্পূর্ন রূপে বিশ্বাস ঘাতকেরাই দখল করে আছে।

আমার প্রচেষ্টা হবে এই সকল হত্যাকারী, কসাইয়ের আসল চিত্রটি যা আপনাদের সামনে উন্মোচন করে তার জায়গায় মহারানা প্রতাপ ও শিবাজীর মত মহান দেশ প্রেমিকদের বসিয়ে দেয়া। এই আর্টিক্যালে আমরা আকবের জীবনের সমস্ত তথ্য প্রদান করব এবং বোঝার চেষ্টা করব কেনই বা ভারতীয় সুদর্শন নায়ক ঋত্বিক রোশন আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করে গর্ববোধ করেন।কেনই বা অনেক মেরুদণ্ডহীন মানুষ যোধা-আকবরের মিথ্যা কল্পনা প্রসূত গল্পকে খুবই প্রশংসা করে থাকেন।

আমার বক্তব্যের ভিত্তি কোন দক্ষিণপন্থী ”ইতিহাসবিদ নয়, ( ইতিহাসে দক্ষিণপন্থী হওয়াকে সব সময় ভুল হিসেবে গণ্য করা হয়)। কিন্তু ভিনসেন্ট স্মিথের মত আকবরের উচ্চ প্রশংসাকারী যিনি “ Akbar- the great Mughal” রচনা করেছেন যা আকবরের উপর লেখা সবচেয়ে প্রামানিক বলে বিবেচনা করা হয় এবং পাশাপাশি অবশ্যই আবুল ফজলের মত পরগাছাকেও বিবেচনা করব যিনি “আইন- ই-আকবর“এবং আকবর নামা” রচনা করেছেন।আমি তাদের সমস্ত কিছুই পর্যালোচনা করব যা এমনকি ঐ পরগাছাও লুকাতে পারেনি।...পাঠকেদের অনুরোধ করব আপনারা নিজে থেকে সে সব গ্রন্থগুলো পড়ে নেবেন, আমি যেগুলির উল্লেখ করব।আমি এখানে শুধু কিছু বিবেচ্য খন্ড চিত্র তুলে ধরবো।

মহান আকবরের ভিত্তিঃ

বিখ্যাত ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তার বইয়ের শুরুতেই বলেছেন

“Akbar was a foreigner in India. He had not a drop of Indian blood in his veins…Akbar was more of a Turk than Mogul.”...অর্থাৎ আকবর ছিলেন একজন বিদেশী যার শিরায় এক ফোঁটাও ভারতীয় রক্ত নেই, আকবর ছিলেন মুঘল কম তুর্কি বেশী। তার বাপ, দাদা থেকে শুরু করে বংশের সবাই তাদের শাসনামলে ছিলেন শীর্ষ জেহাদি সন্ত্রাসী। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল লূটতরাজ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা তাকে ভারতবর্ষের গর্ব বলে মনে করি! বাবর ছিলেন একজন মদ্যপ। পুত্র হুমায়ুন অতিরিক্ত আফিম গ্রহণের ফলে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ছিলেন। কিন্তু আকবর মদ ও আফিম দুটোতেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অত্যাধিক মাদক গ্রহণের দরুন আকবরে দুই পুত্র মারা গিয়েছিল।

মহান আকবরের উন্নত চরিত্রের চর্চাঃ

বন্ধুরা কেন কাল্পনিক 'যোধা-আকবর' সিনেমায় ঋত্বিক রোশন আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন জানেন ? কারণ, ভারতের সেকুলার ও জিহাদি মুসলিম ইতিহাসবিদরা বলেছেন আকবর ছিলেন এই ধরণীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ।

কিন্তু ভিনসেন্ট স্মিথের মতে-

“আকবর উচ্চতায় ছিলেন গড়পড়তা এবং বাম পায়ের দুর্বলতার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তার মাথা ডান কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকত। তার নাক ছিল ছোট ও সামনের হাড় ছিল মোটা। তার নাসিকা গহ্বর দেখলে মনে হত তিনি রেগে আছেন। অর্ধেক মটর দানার সাইজের সমান একটি আঁচিল ছিল যা ঠোঁট ও নাসিকা গহ্বরের সাথে যুক্ত। সে দেখতে কালো ছিল।”

জাহাঙ্গীর লিখেছেন, আকবর নেশাগ্রস্ত অথবা উত্তেজিত অবস্থায় তাকে শেখ বলে ডাকতেন। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে আঁকবর একজন নেশাগ্রস্থ ও বদরাগী মানুষ ছিলেন।

আকবরের সহচর ইয়াকুবা লিখেছেন,

আকবর এতই মদ পান করতেন যে মাঝে মাঝে আসা অভ্যাগত অতিথিদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি মাঝে মাঝে তাড়ি (তালের রস দিয়ে তৈরী নেশা জাতীয় পানীয়) পান করতেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পান করতেন তখন তিনি উম্মাদের মত আচরণ করতেন।

মহান আকবরের শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

জাহাঙ্গীর লিখেছেন, আকবর মাঝে মাঝে বিদ্বানদের মত আচরণ করতেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন।

মাতৃ জাতীর প্রতি মহান আকবরের শ্রদ্ধাবোধঃ

আবুল ফজল লিখেছেন,

আকবর রাজা হিসেবে প্রথম দিকের বছরগুলিতে পর্দার পেছনে থাকতেন। এর মানে কি দাঁড়ায় আমরা সহজেই বুঝতে পারি। আবুল ফজল আকবরের হারেম সম্পর্কে বর্ননা করেছে, "সেখানে ৫০০০ নারী ছিল এবং প্রতিটি নারীর আলাদা থাকার ঘর ছিল" এছাড়াও আকবরের ৩৬ জনেরও বেশী স্ত্রী ছিল।

'রুকাইয়া সুলতানা বেগম' সম্রাট আকবর এর প্রথম বিবি। তিনি ছিলেন বাবর এর নাতনি ও হুমায়ুন এর ভাইঝি অর্থাৎ আকবরের কাকা হিন্দাল মির্জার মেয়ে। 'জোধাবাই', তিনি আকবরের ১ম রাজপুত বিবি। নিজের পরিবার এবং রাজপুত রাজ্যের সাধারণ হিন্দু জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচাতে 1562 খ্রিস্টাব্দের 6ই ফেব্রুয়ারী তিনি আকবরের যৌনদাসী হতে রাজী হন। জিহাদি আকবর তাকে গরু খাইয়ে কলেমা পড়িয়ে 'মরিয়ম উজ-জামানী' নাম দিয়ে মুসলিম বানান।

এছাড়াও আকবরের বিবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সেলিমা সুলতান বেগম, বেগম রাজ কানওয়ারি বাই, বেগম নাথি বাই, কুশমিয়া বানু বেগম, বিবি দৌলত শাদ বেগম, রাজিয়া সুলতান বেগম, আরও 28 জনেরও বেশি বিবি।

আকবরের শাহজাদা সুলভ কামুকতাঃ

আকবরের বিকৃত যৌনলিপ্সা বর্ননা করতে গিয়ে আবুল ফজল তার 'আইন-ই-আকবরী' তে লিখেছেন-

"শাহেন শাহ্ আকবরের ঘরের সামনেই একটা শুঁড়িখানা স্থাপন করা হয়। সেখানে মুঘল হারেম থেকে অসংখ্য হিন্দু যৌনদাসীদের জড়ো করা হত যা গণনা করা কঠিন হয়ে পড়ত। সভাসদগণও মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে থেকে নৃত্যপটীয়সী যৌনদাসীদের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন।যদি কেউ কোন কুমারী যৌনদাসীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইতেন তাহলে তাকে অবশ্যই আকবরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত। সুন্দরী  দুর্ভাগা স্বল্পবসনা যৌনদাসীদের নিয়ে কখনো কখনো আমীর উজিরদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত।একবার আকবর তিনি নিজেই কয়েকজন সদ্য অপহরণ করে আনা কিশোরী যৌনদাসীদের ডাকলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কে কুমারিত্ব ছেদন করতে চাও ?"

এখন কথা হচ্ছে কীভাবে হাজার হাজার সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিশোরী যৌনদাসী একই সময়ে জড়ো হবে ? অবশ্যই সে সকল ভাগ্যহীনা নারীরা ছিল হিন্দু পরিবারের যারা যুদ্ধবন্দী অথবা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করে, সহায় সম্পত্তি লুট করে এবং একে একে তাদের আশ্র্য়হীন নিঃস্ব করে দিয়ে কোরানে বর্ণিত 'গণিমতের মাল' হিসেবে জোর করে মুঘল হারেমের যৌনদাসী বানানো হত।

'আকবর নামা'তে আবুল ফজল আরও বলেছেন,

“যখন কোন উজির-ওমরাহ হারেম খানার (মুঘল রাজপ্রাসাদের বেশ্যালয়) কোন বেগমকে অথবা সভাসদগণের বা দালালদের নিজস্ব বিবিদের অথবা কোন কুমারী নারীকে উপভোগ করার ইচ্ছা-বাসনা করবে, তখন তাদেরকে মুঘল হারেমটির যে বিশেষ অংশে সেই নারী থাকে সেই অংশটি যার অধীনে বা তত্ত্বাবধানে আছে তার কাছে আর্জি পেশ করতে হবে।...তার পরে সেই আর্জি প্রাসাদের কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছুবে। তাদের আর্জি মঞ্জুর হলেই হারেমের অন্দরমহলে প্রবেশের অনুমতি পাবে তারা এবং সেখানে তারা এক মাস পর্যন্ত সময় অতিবাহিত করতে পারবে।"

তাহলে ভাবুন অবস্থাটা ! এখানে এটাই স্পষ্ট যে, 'যোধা-আকবর' সিনেমার যোধার ভালবাসার আকবর, তার সভাসদগনের স্ত্রীদেরও জোর করে উপভোগ করত মাসের পর মাস ধরে।এ সব উদাহরণ দেয়া হচ্ছে আকবরের সেই  ইতিহাসবিদের লেখা থেকে, কোন নিন্দুকের মিথ্যা অপবাদ থেকে নয়।

রণথম্ভোর চুক্তির প্রথম শর্ত ছিল যে, আকবরের সেনা বন্দী শত্রু রাজপুত সৈনিকদের মুক্ত করে দেবে বিনিময়ে রাজপুতরা তাদের নারীদের বঁধুবেশে মুঘল হারেমে প্রেরণ করবে। তাই অবাক হবার কিছু নেই যে যাদের আত্মমর্যাদা বোধ ছিল তাদের কাছে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুই শ্রেয়তর মনে হবে।

আকবর তার সভাসদ এবং দালালদের প্রতি দালালী (Griman) হিসেবে তাদের মধ্যে  যৌনদাসী বিতরণ করত।এভাবে আজকের জেহাদি সংগঠন ISIS এর মত আকবর ও তার সেনার কাছেও বিধর্মী নারী নিছকই উপভোগের সামগ্রী ছিল।

আকবরের শাসনামলে মিনা বাজার খুবই জনপ্রিয় ছিল।যেখানে প্রতি নববর্ষের রাতে বিভিন্ন  পরিবারের নারীদের হয় ফুসলিয়ে, প্রতারনা করে অথবা জোর পূর্বক জাঁহাপনার সম্মুখে হাজির করা হতো জোর করে হারেমে তাদের স্থান দিতে বেছে বেছে নেওয়ার জন্য।

বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ আকবরঃ

মুঘল সেনাপতি বৈরাম খাঁ 1561 সালের 31 জানুয়ারি মক্কা যাবার পথে গুজরাটের পাতনে খুন হন।শিয়া মুসলিম বৈরাম খাঁর জন্ম আফগানিস্তানের বাদাখশানে 1501 সালে।তিনি ছিলেন 'কারা ফনলু' গোত্রের 'বাহারলু'বংশের মানুষ।এই কারা ফনলু গোত্রটি কয়েক দশক পশ্চিম পারস্য শাসন করে। বৈরাম খাঁর পূর্বপুরুষরা সম্রাট বাবরের খেদমতে নিযুক্ত ছিল।মাত্র 16 বছর বয়সে বৈরাম মুঘল সাম্রাজ্যে যোগ দেন বাবরের সময়।ভারতবর্ষে মুঘলদের যে জয়জয়কার সূচিত তাতে প্রধান ভূমিকা ছিল তার।সম্রাট হুমায়ুনের আমলে তিনি বেনারস, গুজরাট, বাংলায় সফল অভিযানে অংশ নেন। হুমায়ুন যখন পারস্যে নির্বাসিত ছিলেন তখন বৈরাম কান্দাহার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেন এবং নয় বছর কান্দাহারের শাসকের দায়িত্ব পালন করেন।

আকবর যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খল।হুমায়ুন তাঁর মৃত্যুর আগে কেবল পাঞ্জাব, আগ্রা ও দিল্লি উদ্ধার করে গিয়েছিলেন, কিন্তু সাম্রাজ্য সুসংহত করে যেতে পারেন নি।আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁর সহযোগিতায় আকবর সব বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন।বৈরাম খাঁ গুজরাট, বাংলা, বিহার, কাশ্মীর ও কাবুল জয় করার পর তিনি দাক্ষিণাত্য আক্রমণ করেন। আকবরের রাজ্য বকলমে বৈরাম খাঁর রাজ্য উত্তরে হিমালয়, পশ্চিমে কান্দাহার, দক্ষিণে বেরার এবং পূর্বে বঙ্গদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

আকবরের শাসনামলেই ঐতিহাসিক দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আফগান নেতা আদিল শাহের সেনাপতি হিমু অক্টোবর 1556 সালে দিল্লি আক্রমণ করলে সেনাপতি বৈরাম খার নেতৃত্বে মুঘল সৈন্যরা পানিপথের প্রান্তরে হিমুকে পরাজিত ও জবাই করেন।আকবরের বয়স যখন অল্প তখনই সম্রাট হুমায়ুন তার মৃত্যুর আগে তার প্রিয় সেনাপ্রধান বৈরাম খাঁ’কে রাজ্যের ভার দিয়ে যান এবং বলেন যতদিন না আকবর রাজ্যের ভার গ্রহণের যোগ্য হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বৈরাম খাঁ এই দিল্লির শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। আকবর দায়িত্ব নিয়ে সিংহাসনে বসার পরপরই বৈরাম খাঁকে বলেন বিশ্রাম নিতে মক্কায় চলে যাওয়ার জন্য।আর এই মক্কা যাবার পথেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ বিশ্বাসঘাতক আকবরের নির্দেশে 31 শে জানুয়ারী 1561 বৈরাম খাঁকে হত্যা করা হয়।

তার হত্যার পর আকবর বৈরাম খাঁর বিবি সালিমা বেগম সুলতানাকে জোর করে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন আকবরের পিতা হুমায়ূনের বোন গুলরুখ বেগমের মেয়ে, অর্থাৎ আকবরের পিসতুতো বোন।ইতিহাসবিদরা দাবী করেন আকবরের সাথে বৈরাম খাঁর মতানৈক্য হওয়ার কারনে তাকে বাধ্য করা হয় মক্কার উদ্দেশ্যে গমন করার জন্য এবং পথিমধ্যেই আকবরের কিছু গুপ্ত ঘাতক দল তাকে আক্রমণ করে।

নৃশংস খুনী  আকবরঃ

বলা হয়ে থাকে আকবর নাকি ভারতবর্ষের সবচেয়ে দয়ালু শাসক ছিলেন। 14 বছর বয়সে তিনি তার বাপ দাদার পূর্ব পুরুষের ধারা অনুযায়ী দয়াশীলতার নমুনা দেখিয়েছিলেন। 6ই নভেম্বর  1556 সালে হিমুর সাথে পানিপথের যুদ্ধে তিনি ছিলেন। মুঘলরা বড় ধরনের পরাজয়ের সম্মুখীন ছিল কিন্তু হঠাৎ করে একটি তীর হিমুর চোখে বিদ্ধ হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পরেন এবং তার সৈন্যরা আসন্ন পরাজয় ধারণা করে পালিয়ে যেতে শুরু করে।অজ্ঞান অবচেতন হেমুকে দয়ালু আকবরের সামনে আনা হয়। বৈরাম খান আকবরকে আদেশ দেন তার শীরচ্ছেদ করার জন্য যাতে করে সে “গাজী” উপাধি লাভ করেন। 

তাই আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্য এবং শান্তির প্রতীক মুহাম্মদ-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আকবর অজ্ঞান অবচেতন হেমুর শীরচ্ছেদ করেন এবং গাজী উপাধি পান। তার সৈন্যদল তাকে অনুসরণ করে হেমুর দেহটাকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে এবং তার মস্তক কাবুলে পাঠানো হয় আর তার দেহ দিল্লীর গেটে ঝুলিয়ে রাখা হয় আকবরের দয়াশীলতার নমুনা হিসেবে।

ঠিক তার পর পরই তার সৈনিকরা দিল্লীতে প্রবেশ করে।পরে যুদ্ধের বিজয়কে উদযাপন করার জন্য তাদের পরিবারের পুরনো প্রথানুযায়ী আকবরের দ্বারা বন্দি হেমুর সেনাদের কাটা মুন্ডু/মস্তক দিয়ে একটি স্তম্ভ নির্মান করা হয়।তাদের এই ISIS জিহাদি মার্কা হত্যাকাণ্ড উদযাপনে বাড়তি রঙ দেবার জন্য হেমুর অসহায় বৃদ্ধ বাবাকেও হত্যা করা হয়।তাহলে দিল্লির নারীদের কি অবস্থা হয়েছিল সেটা বলার প্রয়োজন নেই।আকবর ইতিমধ্যেই যুদ্ধ জয়ের গণিমতের মাল দিল্লির হিন্দু নারীদের নিয়ে তার বিশাল হারেম খানার পরিকল্পনা করে ফেলেছিল!

আবুল ফজলের ভাষ্যনুযায়ী,

"কাবুলের বিখ্যাত 'রিজভি সাইদ' পরিবারের সন্তান ঘায়ুর বেগ কাবুলি-এর পুত্র ছিলেন বিদ্রোহী মহাবত খান ওরফে খান জামান। যিনি পরিবার সহ 1585 এর জুলাই মাসে ভারতে আসে। খান জামান তার সেনাধ্যক্ষ জীবন শুরু করেন শেহজাদা সেলিমের নিজস্ব বাহিনীতে। তার বিদ্রোহকে কে প্রতিহত করার জন্য তার বিশস্ত্ব মুহাম্মদ মিরককে বন্দী করা হয় এবং তাকে হাতীর সমুখে আনা হয়। হাতীটি তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এই ভাবে পাঁচ দিন চলতে থাকে এবং তার পরে তাকে হত্যা করা হয়।

আবুল ফজল এই কথাগুলো খুবই গর্ব করে বর্ণনা করেছে। তার ভাষায় বিন্দু মাত্র নিন্দার কোন ছিটেফোঁটা ছিল না।

১৫৬৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ৭০ হাজার মুঘল সৈন্য নিয়ে চিত্তোড় দুর্গ দখল করার পরে আকবরের হুকুমে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চালানো হয়।...সেখানে প্রায় ৩০,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়।...১৫,০০০ রাজপুত রমণী নিজেদের সতীত্ব বাঁচাতে, নিজেদের যৌন দাসী হবার হাত থেকে বাঁচাতে 'জহর ব্রত' পালন করে আগুনে ঝাঁপ দেন।প্রায় ৮,০০০ হিন্দু নারী শিশুকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।...মুসলিম সৈন্যরা সোয়াব বা পুণ্য আদায়ের জন্যে হিন্দু নারীর মৃতদেহগুলিকেই ধর্ষণ করছিল ২ দিন ধরে।...ঠিক যেমন ১৯৪৬ এ বাংলাদেশের নোয়াখালীর হিন্দু গণহত্যার পর করা হয়েছিল বামপন্থী প্রজা কৃষক পার্টির নেতা ডায়রার পীর গোলাম সারোয়ার আর তার মুসলিম বাহিনী দ্বারা।

আকবর অত্যাচার ও হত্যা করার নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন, ঠিক যেন আজকের ইসলামিক জেহাদি ISIS রা করে।মুজাফফার শাহ্‌কে হাতি দিয়ে পিষ্ট করে হত্যা করা হয়।হামহাবনের জিহ্বা কেটে ফেলা হয়।মাসুদ হুসেইনের চোখ সেলাই করে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তার ৩০০ জন সমর্থককে আকবরের সামনে আনা হয়, তারপরে তাদের মুখের উপর গাধা, ভেড়া ও কুকুরের চামড়া দিয়ে ঢেকে দিয়ে তাদের জবাই করে হত্যা করা হয়।

আকবরের ন্যায়পরায়ণতার বোধঃ

ঐতিহাসিক কর্নেল তোড বর্ণণা দেন, কিভাবে আকবর হলদিঘাটের যুদ্ধের পর নিজ পায়ে শিব লিঙ্গের প্রতিমা ভেঙ্গে সেখানে জায়নামাজ পেতে দেন সৈন্যবাহিনীকে নামায পড়ার জন্য।ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কি অপূর্ব নিদর্শন রেখেছিলেম তিনি সেদিন !!!

আকবরের বদরাগী মেজাজ বর্ণনা করতে গিয়ে আবুল ফজল বলেছেন,

একবার আকবর দুপুরের একটু আগে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার বিছানার কাছে এক ভৃত্য ঘুমোচ্ছে।...এতে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং তাকে মিনারের চূড়া থেকে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেন।

১৬০০ সালে আগস্টে আকবর সেনারা পৃথিবীর দুর্ভেদ্য দুর্গগুলির একটি আসিরগাহ দুর্গ ঘিরে ফেলে কিন্তু উভয় পক্ষ একটা সমঝোতায় আসেন।ভিনসেন্ট স্মিথের ভাষ্যানুযায়ী এই দুর্গটিকে ভেঙ্গে ফেলার এক অভিনব ফন্দি তিনি এঁটে রেখেছিলেন।.তিনি মিরান বাহাদুরকে আমন্ত্রণ জানান এই বলে যে,

- শাহেনশাহ্‌ তার সাথে সমঝোতা করতে চান এবং তিনি তার মাথার দিব্যি দিয়ে বলেন যে তাকে নিরাপদে ফিরতে দেয়া হবে।

সেই কারনে মিরান বাহাদুর শান্তির প্রতীক হিসেবে একটি সাদা কাপড় উঁচিয়ে বের হয়ে আসেন এবং আত্মসমর্পন করেন।মিরান তিনবার আকবরকে কুর্নিশ করেন এবং আকবর হঠাৎ তাকে জোর করে ঠেলে মাটীতে শুইয়ে দেন সিজদা অথবা কুর্নিশ পূর্ন করার জন্য।তারপর মাথায় পা তুলে দেন তিনি।সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আকবরের সামনে মাথা ঝুঁকাবে, এটাতেই আকবর অভ্যস্ত ছিল।

তার পরে তাকে কথার খেলাপ করে গ্রেফতার করেন আকবর এবং মিরান বাহাদুরকে চাপ প্রয়োগ করেন তার সেনাপতিকে হুকুম দিতে সবাইকে আত্মসমর্পন করার জন্য।কিন্তু সেনাপতি মালিক অম্বর এই হুকুম মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তার পুত্রকে পাঠান আকবরের সাথে আলোচনা করার জন্য, জানতে চান কেন আকবর তার কথা দিয়ে কথা রাখলেন না।

আকবর সেনাপতির যুবক পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন,

তোমার পিতা স্বেচ্ছায় আত্মসম্পর্ন করবে কি করবে না ???

জবাবে সেই তরুণ বলেন

এই কথা শোনা মাত্রই আকবর  তলোয়ার দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ঐ তরুণকে হত্যা করেন।পরিশেষে এমনই আরও অনেক ছল চাতুরী আর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ধোঁকাবাজি করে সেই দূর্গ দখল করতে সমর্থ হয়।

[...বিঃদ্রঃ এই সকল ঘটনা গুলি ঘটেছিল তার মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে কারন অনেকে আবার মনগড়া গল্প ফেঁদে বলে উঠতে পারে যে পরে আকবরের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।]

একই ভাবে ক্ষমতা ও আধিপত্যের লালসায়, তিনি বুন্দেলখন্ডের (গণ্ডোয়ানা)  রানি দূর্গাবতী সাথেও যুদ্ধ করেন এবং তার মানুষদের হত্যা করেছিলেন।রানী দুর্গাবতী তিন তিন বার মুঘলদের হারিয়ে দেন।কিন্তু আকবর একদিন রাতের বেলায় রানীর সেনাকে আক্রমণ করেন।রাতের বেলায় ভারতীয়রা যুদ্ধ করত না।অতর্কিতে আক্রমণ করলেও রানী একটি হাতির পিঠে যুদ্ধক্ষেত্রে আসেন।আকবর ৩০০ তীরন্দাজ রেখেছিলেন শুধু রানীকে মারার জন্যে, ২৪ শে জুন ১৫৬৪ ভোররাতে নির্দয় ভাবে তীরে তীরে বিদ্ধ করে মারা হয় দুর্গাবতীকে।.এরপর ৩৪০০০ গোণ্ড জনজাতির মানুষকে এক রাতে জবাই করা হয় মহান আকবরের নির্দেশে।

মহান আকবর বনাম মহারানা প্রতাপঃ

আকবরের বেতনভুক্ত ইতিহাসবিদগণ ব্যাখ্যা দিতে ব্যার্থ হয়েছেন যে কিভাবে এবং কেন আকবর ও মহারানা প্রতাপ একই সময়ে উভয়েই মহান ছিলেন ???...যেখানে তারা দুজনে দুজনার চরম দুশমন ছিলেন। এমনকি ভিনসেন্ট স্মিথও বলেছেন বিজয়ের লালসা ছাড়া আকবরের কোন যৌক্তিক কারণই ছিল না চিত্তোড় আক্রমণ করার।মহারানা প্রতাপ যিনি তার দেশ ও জাতীর জন্য লড়াই করেছেন এবং চেষ্টা করেছেন সকল রাজপুতদের একত্র করে তাদের বোঝাতে যেন তারা এই বিদেশী শত্রুর সাথে নারী বিনিময় চুক্তি না করে।আর অন্য দিকে আকবর ছিল স্বার্থপর জেহাদি সন্ত্রাসী যিনি চাইতেন যে করেই হোক যতটা সম্ভব লুটররাজ ও  নারী দখল করে হারেম ভরিয়ে তুলতে।

আজকাল দেখা যাচ্ছে, বিশ্বাস ঘাতকের রক্তে জন্ম নেয়া কথিত বুদ্ধিজীবীগণ বলতে শুরু করেছেন যে মহারাণা প্রতাপের মত কিংবদন্তীরা শুধু মাত্র তাদের রাজ্যের জন্য লড়াই করেছে।এবং আকবরের মত যারা হত্যাযজ্ঞ করেছে, যেমন অতীতের  আকবর ও আওরঙ্গজেব; তারা দেশের একতার জন্য কাজ করেছে! কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ, ও কিছু নপুংসক হিন্দু যোদ্ধাদের বিশ্বাস ঘাতকতার যুগে শিবাজী ও মহারানার মত কিছু মহান বলীয়ানরাই জাফরানী রঙের পতাকা উঁচিয়ে ধরে ছিলেন (এই পতাকা ছিল ভারতীয় জাতীয়তার প্রতীক ,কোন হিন্দুত্বের প্রতীক নয়)এবং নিশ্চিত করেছিলেন এই সকল খুনি, বর্বর, দস্যুদের দৌরাত্ম কখনই স্থায়ী হতে পারে না এবং শীঘ্রই তা ধ্বংস হবে।

আকবর বিকৃত করেছিলেন  ইসলামকেও!!

তৎকালীন এবং বর্তমান মুসলিমরা বোকার মত বিশ্বাস করে যে আকবর ইসলামের যে মহানুভবতার প্রতিনিধিত্ব করেছে তা অনুকরণীয়।কিন্তু আউরঙ্গজেব, তার বাপ, দাদা, পরদাদা, পরপর দাদা থেকে শুরু করে তাদের সমস্ত বংশধরেরা ইসলামের নামে শুধুই খুন, ধর্ষন, লুট, ধোঁকাবাজি, বর্বরতা ইত্যাদি সকল হীন কাজ করেছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি এবং ক্ষমতার জন্য।এই দেশকে নিজের দেশ ভেবে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্যে একটি কাজও তারা করেনি

।উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আকবর ছিল একজন মদ্যপ, নেশাসক্ত, নারী লোভী এবং তিন ডজনের বেশী স্ত্রী ছিল- কিন্তু এ বিষয়গুলো সব ছিল ইসলামে স্পষ্টত ভাবে হারাম।

আকবর গুজব রটিয়ে দিয়েছিল যে তিনি নিজেই ছিলেন আল্লাহ্‌র প্রেরিত পুরুষ।...তিনি মানুষদের বলতে বাধ্য করতেন তাকে আল্লাহ-ও-আকবর বলে ডাকতে। মুর্খ নির্বোধরা সেটাকে বিশ্বাস করেছিল যে আল্লাহ্‌-ও-আকবর বলে তারা আল্লাহ্‌কে প্রশংসা করছে।এখানে আকবর নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করছে।...কাউকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য ইসলামে কখনই আল্লাহ্‌-ও-আকবর বলে সম্বোধন করা হয় না।...আবুল ফজলে বলেছেন তিনি নিজেকে সর্বব্যাপী হিসেবে উপস্থাপন করতেন।

ইমামে রাব্বানী হযরত মোজাদ্দেদ আলফেছানি শায়েখ আহমদ ফারুক সেরহিন্দ (রাঃ)।...তিনি ১৪ই শাওয়াল ৯৭১ হিজরিতে ভারতের সিরহিন্দ শহরে জন্ম গ্রহন করেন।আকবর ও জাহাঙ্গীর দুই অত্যাচারী ইসলামি জেহাদি সম্রাটের মধ্যবর্তী সময়ে মোজাদ্দেদ হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেন তিনি।তার মতে সম্রাট আকবর ছিলেন ইসলাম ধর্মের জেহাদি চিন্তার বিরোধী এবং জেহাদের কাজ ঠিক মত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন না।আর তার ধর্মীয় শাসনামলেই সম্রাট আকবর ইসলাম ধর্মের পরিবর্তে নতুন এক ধর্মের প্রবর্তন করেন।

ইহা ছিল স্পষ্টতই এক কুফরী ধর্ম অথচ এই নতুন ধর্মের নাম দেওয়া হলো ”দ্বীন-ই-ইলাহী”।ইসলামী পুস্তকে কথিত আছে আলফেছানি শায়েখ আহমদ ফারুক সেরহিন্দ-ই আকবরকে আশীর্বাদ করার অছিলায় লাঠি দিয়ে মাথায় সাত বার স্পর্শ করে এবং আকবর অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
[গ্রন্হ সহায়তা-হযরত মোজাদ্দেদ আলফেছানী(রঃ) এর চিঠি পত্রের সংকলন গ্রন্হ "মকতুবাদ শরীফ (১ম খন্ড)" এবং মোঃ মামুনুর রশীদ রচিত "নূরে সেরহিন্দ" গ্রন্হ। প্রকাশক-সেরহিন্দ প্রকাশনী, উয়ারি, ঢাকা।]

দীন-ই-ইলাহির মূলমন্ত্র ছিল ”লা ইলাহা ইল্লালাহু আকবারু খলিলুল্লাহ”।...যারা আকবরের নুতন ধর্মে দাখিল হত তাদেরকে এরূপ শপথ বাক্য উচ্চারন করতে হতো-

”আমি অমুকের পুত্র অমুক এতদিন বাপ দাদাদের অনুকরনে ইসলাম/হিন্দু ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাম, এখন সেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পূর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করে ‘দীন-ই-ইলাহি’ গ্রহন করছি এবং এই ধর্মের জন্য জীবন,সম্পদ ও সম্মান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি।”

দীন-ই-ইলাহির লোকেরা চিঠিপত্রের শিরোনামে ‘আল্লাহ-ও-আকবর’ লিখত এবং পরস্পরের সাক্ষাতের সময় সালামের পরিবর্তে একজন বলত ‘আল্লাহ-ও-আকবর”এবং অপরজন এর জবাবে বলত ‘জাল্লাজালালুহু’।বাদশাহ আকবর তাদেরকে শিজরা স্বরূপ তার নিজের একখানি প্রতিকৃতি প্রদান করতেন।তারা বাদশাহর এই প্রতিকৃতি পরম শ্রদ্ধাভরে নিজ নিজনপাগড়ীতে বসিয়ে রাখত।

এই নুতন ধর্মে সুদখোরি ও জুয়া ছিল হালাল।খাস দরবারে জুয়া খেলার জন্য একটি ঘর নির্মান করা হয় এবং জুয়াড়ীদেরকে রাজকোষ থেকে সুদি কর্জ দেয়া হত।মদ্যপান করাও এই ধর্মে হালাল সাব্যস্ত করা হয়।বাদশাহ স্বয়ং দরবারের নিকট একটি শরাবখানা খুলে দেন।নওরোজ অনুষ্ঠানে অধিকাংশ আলেম,কাজী ও মুফতিগনকে শরাব পান করতে বাধ্য করা হত।এই সব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন লোকের নামে পেয়ালা নির্বাচিত হত।

সহবাসের পর স্নান করা ইসলামে ফরজ, কিন্তু সহবাসের আগে নয়।কিন্তু এই ধর্মে হিন্দুদের ম'ত সহবাসের আগে ও পরে গোসল করা হালাল করা হয়।এই ধর্মে পতিতাবৃত্তি ছিল হালাল।তাই পতিতাদের বসতি স্হাপন করে ব্যাভিচারকে আইন সঙ্গত করা হয়।পতিতালয় গুলির নাম দেয়া হয় ‘শয়তানপুর’।এই সব স্হানে সৈন্য প্রহরারও ব্যবস্হা করা হয়।

এই ধর্মের মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে এই বিধান জারি করা হয় যে,

মৃত্যু হলে তার গলায় কাচা গম ও পাকা ইট বেধে তাকে জলে নিক্ষেপ করতে হবে এবং যেখানে জল পাওয়া যাবে না সেখানে মৃতদেহ জ্বালিয়ে দিতে হবে অথবা পূর্ব দিকে মাথা ও পশ্চিম দিকে পা করে দাফন করতে হবে।

আকবর তার নিজের বিশ্বাস 'দীন-ই-ইলাহি' চালু করেছিলেন যা মূলত নিজেকে মহা পুরুষ রূপে এবং নির্বোধ মতাদর্শ প্রচার করার জন্য।অবাক হবার কিছুই নেই বীরবল সহ তার তোষামোদ কারীরা তা সানন্দেই গ্রহণ করেছিল।কিন্তু এই গণ্ডমূর্খের মতাদর্শ তার মৃত্যুর পর পরই হারিয়ে যায়।

কেন সকলে আকবরের প্রশংসা করেছেন তার কারনটা কারো অজানা নয়।যেহেতু সে নিজের আত্মঘোরে হিন্দুত্ববাদ ও ইসলামকে নিয়ে মজা করেছে সেহেতু বাইবেলপন্থী এবং সেকুলাররা আকবর ছাড়া আর এমন কাউকে পায়নি যাকে সম্মানের এমন উচ্চ শিখরে বসাবে।মূলত আকবর ছিলেন সচতুর মুসলিম শাসকদের মধ্যে একজন যিনি হিন্দু, মুসলিম এবং এমনকি খ্রিস্টানদের নিয়েও খেলতে পারতেন এবং নিজেকে পরম পুরুষ বলে দাবী করতে পারতেন।

আপনারা ভিনসেন্ট স্মিথের বইয়ে আরও বৃত্তান্ত পাবেন।

ভিনসেন্ট স্মিথ আকবরের প্রশংসা করে বলেছেন,

আকবর ছিল কথা বার্তায় বেশ পটু। তার ভাষা অলংকার সমৃদ্ধ হলেও তিনি তার জীবনে যে স্তরের বর্বরতা নিদর্শন রেখেছেন তা ছিল চরম বিপরীত।স্বঘোষিত নবীর যর্থাত লক্ষণই বটে!এমনকি আকবর গুজব ছড়িয়ে ছিলেন যে আল্লাহ্‌ তাকে ঐ জলের মধ্যে রোগ উপশম করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন।যে জল তার পা ধোয়ার কাজে ব্যবহার করার হতো।

এখানে 'সহি বুখারী' ও 'সহি মুসলিম হাদিয়া'র কয়েকটি লাইনের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে নবী মুহাম্মদও একই দাবী করেছেন।এভাবেই সে লোকদের তার পা ধোয়ার জল পাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং সে জল গ্রহণের জন্য লম্বা লাইনও হয়ে যেত।

সে যেভাবেই হোক আকবর ইসলামকে ঠিক রাখার জন্য শুধু মাত্র নির্বোধ হিন্দুরের জন্যই এই ব্যবস্থা করেছিলেন কোন মুসলিমদের জন্য নয়।বীরবল সহ তার সভাসদগণ তাকে খুশী রাখার জন্য বাধ্য হয়ে সেই জল পর্যন্ত খেতেন।অশিক্ষিত হিন্দু মায়েরা তাদের বাচ্চাদের তার পায়ের নীচে রাখতেন এবং আকবর নিজেকে ফকিরের মত ভান করে তাদের গলায় পা দিয়ে তাদের দোয়া দিতেন।...মূলত এই রঙ্গভঙ্গগুলো ছিল তার সৃষ্ট নতুন ধর্মের বুজরুকি।

মহান আকবর ও জিজিয়া ব্যাবস্থাঃ

ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী কোরানের ৯:২৯ আয়াতে অমুসলিমদের জন্য কর হিসেবে জিজিয়া করকে বৈধ করেছেন আল্লাহ ওরফে নবী মোহাম্মদ স্বয়ং।অমুসলিমদের জিজিয়া প্রদান করতে হয় মুসলিমদের হাত থেকে লুট, ধর্ষন এবং হত্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য।...জিজিয়া একইসাথে আর্থিক ওমসম্মানহানিকর।বিধর্মীদের দু’দিক দিয়েই কোনঠাসা করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার জন্যই জিজিয়া করের অবতারণা।বলা হয়ে থাকে এই ব্যাবস্থা আকবর রদ করেছিল কিন্তু তার একটিও কোন দালিলিক প্রমাণ নেই।

বিশেষ কারনে এই ব্যবস্থা উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল রণথম্ভোর চুক্তির অন্যতম অংশ হিসেবে যেখানে বলা হয়েছিল, জিজিয়া কর দেবার বদলে তারা নিজেদের রাজপুত মা, বোন, মেয়েদের রাজ হারেমে (বেশ্যালয়) প্রদান করবে।

বিখ্যাত ইসলামী বিশ্লেষক আল-জামাকশারী জিজিয়া কর প্রদানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন:

"তাদের (অমুসলিমদের) নিকট থেকে জিজিয়া নেয়া হবে অবমাননা ও মর্যাদাহানিকরভাবে। জিম্মিকে সশরীরে হেঁটে আসতে হবে, ঘোড়ায় চড়ে নয়।...যখন সে জিজিয়া প্রদান করবে, তখন কর-আদায়কারী বসে থাকবে আর সে থাকবে দাঁড়িয়ে।...আদায়কারী তার ঘাড় ধরে ঝাঁকি দিয়ে বলবে, ‘জিজিয়া পরিশোধ কর।’...এবং জিজিয়া পরিশোধের পর আদায়কারী ঘাড়ের পিছনে একটা চাটি মেরে তাকে তাড়িয়ে দেবে।

ভারতে ইসলামের শুরু থেকেই ভারতের ইসলামী পণ্ডিতরাও একই পন্থা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
হযরত মোজাদ্দেদ আলফেছানী(রঃ) সিরহিন্দী সম্রাট আকবরকে তার পাঠানো চিঠিতে লেখেন-

"ইসলামের সম্মান ‘কুফরী’ (অবিশ্বাস) ও ‘কাফির’ (অবিশ্বাসী) কে অপমান করার মধ্যে নিহিত।...যে কাফিরকে সম্মান দেয় সে মুসলিমকে অমর্যাদা করে।...তাদের উপর জিজিয়া আরোপের উদ্দেশ্য হলো, এমন করে তাদেরকে অবমানিত করা যাতে তারা ভাল পোশাক পরতে বা জাঁকজমকের সাথে বাস না করতে পারে।...তারা ভীতসন্ত্রস্ত ও কম্পমান থাকে।’

তবে এই একথা সত্য যে আকবরকে অনেকে অনুরোধ করেছিল এই জিজিয়া ব্যাবস্থা তুলে নেবার জন্য এবং রাজনৈতিক কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা শিথিলও করা হয়।কিন্তু সম্পূর্ন রদ করার সাহস তিনি কোনদিনও করেননি কারণ তার সহি ইসলামকে সঠিক জায়গায় রাখতে হবে না !!!

আকবর ও তাহার পুত্রঃ

যে সকল মুসলিম শাসকেরা ভারত বর্ষ শাসন করেছে তাদের মাঝে পিতার সাথে বিদ্রোহ করার একটা বড় ধরনের অটুট প্রথা প্রচলিত ছিল।হুমায়ুনের প্রতি বাবরের ছিল চরম অনাস্থা ও বিদ্বেষ।তেমনি আকবর ছিলেন জাহাঙ্গীরের কাছে, জাহাঙ্গীর ছিলেন শাহাজাহানের কাছে , শাহাজাহান ছিলেন আওরঙ্গজেবের কাছে।জাহাঙ্গীর তথা সেলিম ১৬০২ সালে নিজেকে শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এলাহাবাদে তার নিজস্ব রাজ দরবার স্থাপন করেন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , তার কয়েক বছর আগেই আকবর তার জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে হিন্দুদের অবজ্ঞা ও অপমান করে এবং মুসলিমদের বোকা বানিয়ে প্রয়াগরাজ নাম পরিবর্তন করে এলাহাবাদে নামকরণ করেন।

জাহাঙ্গীর পিতার মৃত্যুর জন্য প্রার্থণা করতেন এবং এমনকি নিজের মুদ্রা নীতিও চালু করেছিলেন।ঐতিহাসিক স্মিথ বলেছেন যে, জাহাঙ্গীরের (1601-1604) এই বিদ্রোহ সফল হলে সে তার পিতা আকবরকে হত্যা করত।সে তার পিতাকে হত্যা করার সুবর্ণ সুযোগটি হারায়, কিন্তু তার নাতি আওরঙ্গজেব তার স্বপ্ন পুরণ করে। 

এই জাহাঙ্গীর নিষ্ঠুরতা এবং  নারী সম্ভোগের ক্ষেত্রে তার পিতা আকবরকেও পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন।জাহাঙ্গীর ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে 'আকবরনামা'র রচয়িতা 'আবুল ফজলকে' হত্যা করেন, এবং লিখে যান-

"I employed the man Bir Singh Bundela who killed Abul Fazal and brought his head to me and for this it was that I incurred my father's deep displeasure"।

১৬০৬ সালে পঞ্চম শিখ গুরু 'অর্জুন দেব' কে শিখদের ইসলাম ধর্মের শিক্ষা দিতে বলেন।গুরু অর্জুন তাতে অস্বীকার করলে ৫ দিন ধরে তাকে গরম বালি দিয়ে স্নান করানো হয়।সারা গায়ে ঘা হয়ে পোকা ধরে গেছিল তার।শেষে রাভি নদীতে তাকে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

জাহাঙ্গীরের নারী লোলুপতা ছিল সর্বজন বিদিত।বলিউডের নায়ক দিলিপ কুমার 'মুঘল-এ-আজম (আনারকলি সেলিম)' সিনেমা বানিয়েও তাতে পর্দা চরাতে পারেন নি।

১৩ই ফেব্রুয়ারী ১৫৮৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে রাজা ভগবান দাসের পুত্রী রাজকুমারী "মন্ধবতী বাই" কে গণহত্যার ভয় দেখিয়ে নিজের যৌনদাসী বেগম বানান তিনি।তারপর একে একে সেই বছর-ই রাজপুত রাজকুমারী 'জগৎ ঘোসাইন বেগম' কে বিয়ে করেন।তারপর জুলাই ৭, ১৫৮৬ তে বিকানির এর মহারাজা রাজা রাই সিং এর পুত্রী 'পদ্মাবতী বাই',তার ৭ দিন পরে জুলাই ১৪, ১৫৮৬ তে কাশগরের সুলতান আবু সইদ খানের মেয়ে 'মল্লিকা শিখর বেগম,তার তিন মাস পর ৫ই অক্টোবর, ১৬৮৬ তে আফগানিস্তানের হেরাতের সুলতান খ্বাজা হুসেইনের কন্যা 'সাহিব ই জামাল বেগম',১৫৮৭ তে জয়সলমীরের মহারাজা ভীম সিং এর কন্যে 'মল্লিকা জাহান বেগম',১৫৮৮তে তে রাজা দয়া মালব্যর কন্যা "আনারকলি বেগম",অক্টোবর ১৫৯০ তে মির্জা সাঞ্জার হাজারার মেয়ে 'জোহরা বেগম',১৫৯১ তে মেরতিয়ার রাজা কেশও দাসের কন্যা 'করমনাশী বেগম',১১ই জানুয়ারি ১৫৯২ তে আলি শের খানের মেয়ে 'কানোয়াল রানি',সেবছরই অক্টোবর ১৫৯২ তে কাশ্মীরের রাজা হুসেন চাকের মেয়ে 'শাহ বেগম',মার্চ ১৫৯৩ তে ইব্রাহিম হুসেন মির্জার মেয়ে 'নূর ইন নিসা বেগম',সেবছরই সেপ্টেম্বর ১৫৯৩ তে খান্দেশের রাজা আলি খান ফারুকির মেয়ে 'খান্দেশি বেগম',এক মাস পর অক্টোবর ১৫৯৩ তে বালুচিস্তানের আবদুল্লা খান বালুচের মেয়ে 'বালুচি বেগম',জুন ২৮, ১৫৯৬ তে কাবুল এবং লাহোরের সুবেদার জাইন খান খোটার মেয়ে 'খাস মহল বেগম',ফেব্রুয়ারি ১৬০৮ সালে কোয়াসিম খানের মেয়ে 'সালিহা বানু বেগম',তিন মাস পর জুন ১৭, ১৬০৮ সালে আম্বেরের যুবরাজ জগত সিং এর মেয়ে 'কোকা কুমারি বেগম',মে ২৫, ১৬১১ তে জাহাঙ্গীর তার দেহরক্ষী 'শের আফগান' কে হত্যা করে তার কান্দাহারের অপরূপা পার্সি সুন্দরী বিধবা 'মেহের উন নিসা' বা 'নুরজাহান' বা 'নূর মহল' কে জোর করে হারেম খানায় না রাখতে পেরে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেন।

এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে নীল বিক্রি করতে ফেব্রুয়ারী ১৬১১ সালে ৫ বছরের জন্যে লাহোরে আসা দুই ইংরাজ ব্যবসায়ী William Finch এবং Edward Terry-র লেখা থেকে জানতে পারা যার যে,

'নুরজাহান' জাহাঙ্গিরকে নানান ওষুধ খাইয়ে নপুংসক করে দেন বিয়ের ২-৩ বছর পর।...তা না হলে যে জাহাঙ্গীর তার পিতা আকবরের মতন আর কত মেয়ের সর্বনাশ করতেন কে জানে।

এছাড়াও জাহাঙ্গীর আকবরের ৫০০০ এর বেশি সুন্দরী অভিজাত নারী দিয়ে ঠাসা মুঘল হারেম (বেশ্যাখানা) কে ১১০০০ এর বেশি জোর করে ধরে, বা গণহত্যার ভয় দেখিয়ে দখল করা  নারী দ্বারা পরিপূর্ণ করেছিলেন।জাহাঙ্গীরের মৃত্যুকালে মুঘল হারেমে যৌনদাসীর সংখ্যা ১২০০০ ছাড়িয়ে যায়।

["The Mughal World: India's Tainted Paradise" Eraly, Abraham, Publisher: Phoenix, 2008 ] ["The Mughal Harem" K.S. Lal,Published by Aditya Prakashan, New Delhi, India, 1998]

আকবর যাদের শত্রু বলে সন্দেহ করতেন, তাদের করুণ পরিণতিঃ

আকবরের একজন কর্মচারী ছিল যার একমাত্র কাজ ছিল আকবর যাদের অপছন্দ করবে তাদের বিষ খাইয়ে হত্যা করা। কোন কোন ইতিবাদবিদেরা বলেন আকবরেরও ঐ একই পরিণতি হয়েছিল, জাহাঙ্গীর তাকে বিষ খাইয়ে মেরেছিল।আকবর তার জীবদ্দশায় তার বিশ্বস্ত এবং কম বিশ্বস্ত অনেককে হত্যা করেছে শুধু মাত্র সন্দেহের বশে। তারপর তাদের পরিবারের ওপর নামিয়ে এনেছে চরম নির্যাতন। এর তালিকায় আছে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা- বৈরাম খান, খান জেমাল, আসাফ খান, শাহ মনসুর, মানসিংহ, কামরানের পুত্র, মাখদুম মুল্ক, শেখ আবদুর নবী, ফারহগুন্দি, মইজুল মুল্ক, এবং আরও অনেকে যারা তার সন্দেহের মধ্যে ছিল।এই তালিকা ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের বই থেকে পাওয়া যায়।

আকবর, খান জেমালকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে তার হারেমে যৌনদাসী বানাবার জন্য বন্দী করে এবং পরে সে গুজব রটিয়ে দেয় যে জেমালের স্ত্রী আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল তখন সে তাকে রক্ষা করে হারেমে স্থান দেয়।
চরম অকৃতজ্ঞ আকবর তার মাতাস্বরূপ বৈরাম খাঁর স্ত্রীকেও নিজের যৌনদাসী বানিয়েছিল। ১৫৬১ সালে আকবর বৈরাম খাঁ কে হজে পাঠিয়ে পথেই তাকে গুপ্ত ঘাতক দিয়ে হত্যা করে। তারপর তার স্ত্রী "সালিমা সুলতানা বেগম"কে হারেমে বন্দি করে কিছুদিন লাগাতার ধর্ষণ করে। কিন্তু তৈমুর লং এর বংশধর 'মহম্মদ মির্জা'র মত আমীরের মেয়েকে হারেমে বেশিদিন রাখলে সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারেন ভেবে নিকাহ করতে বাধ্য হন।

...আকবরের নবরত্নের এক রত্ন মানসিংহ একটি শক্তিশালী  নৌবাহিনী তৈরি করতে চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করার জন্যে। কিন্তু প্রস্তুতি পর্ব চলাকালীন মানসিংহ স্বপ্নে রাজা রামচন্দের আদেশ পান রামসেতু অতিক্রম না করার জন্যে। আকবরকে এই কথা জানালে আকবর ক্রুদ্ধ হয়ে গুপ্ত ঘাতক দ্বারা মানসিংহকে জবাই করে হত্যা করেন।

দানশীল আকবরঃ

আকবরের শাসনামলে মৃত ব্যাক্তির সমস্ত সম্পত্তি বাদশা দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হত এবং এই সম্পত্তির উপর তার পরিবারের কোন অধিকার থাকত না। পরবর্তীতে হয়তো লোক দেখানো দয়া দেখিয়ে সেই পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সামান্য কিছু সহায়তা দেয়া হত।এমনকি তার মায়ের মৃত্যুর এক বছর আগেই আকবর নিজেই এই পৃথিবীতে তার মায়ের বোঝা কমিয়ে দিয়েছিল তার সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে। যদিও তার মায়ের ইচ্ছে ছিল তার সমস্ত সম্পত্তি পরিবারের সবার মাঝে সুষম ভাবে বণ্টন করা হবে।

আকবর ও তার নবরত্নঃ

বিক্রমাদিত্যের বিখ্যাত গল্পের মত আকবরের রাজদরবারের নবরত্ন সম্পর্কিত সকল গল্পই ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। আসল কথা হচ্ছে আকবর তার মন্ত্রী পরিষদের সকল মন্ত্রী ও সভাসদগণদের খুবই বোকা মনে করত। আকবর একসময় বলেছিল,

"সে আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ জানায় এই কারনে যে তার রাজদরবারে কোন যোগ্য লোক পাননি অথবা সেখানে এমন কেউই ছিল না যে মনে করত বাদশা যা কিছু করেন তা সভাসদগণের মেধা দিয়ে করেন, তার নিজের বুদ্ধি দিয়ে নয়।"

(১) টোডরমল:- টোডরমল ছিল আকবরের অর্থমন্ত্রী। শের শাহ সূরীর দরবারে সামান্য হিসাব রক্ষক হিসেবে তিনি তার জীবন শুরু করেন। আসলে তিনি হিন্দু হয়েও ছিলেন আকবরের সকল নোংরামির সঙ্গী। আকবরের নেক নজরের জন্য টোডরমল নৃশংসভাবে কর আদায় করত। কিন্তু টোডরমল যে দেব দেবীদের পূজা করত আকবর সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। এতে টোডরমল মনে দারুণ আঘাত পায় এবং অর্থমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে বেনারসে চলে যায়!

(২) আবুল ফজল:- 'আকবরনামা'র রচয়িতা 'আবুল ফজল' ছিল নরপশু আকবরের শ্রেষ্টতম খাঁটি চাটুকার। আকবরের আনুকল্য পাবার জন্যেই সে আকবরকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়ে যতসব আজগুবি কাহিনী রচনা করে। শেষ পর্যন্ত আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীরই তাকে হত্যা করে। "আইন-ই-আকবরি" তে আকবরের নোংরা হিন্দুবিরোধী কর, নীতি ও ব্যাবস্থাগুলির প্রশংসা করে তিনি উজির পদে আসীন হন। এপ্রিল ১৫৪৩ সালে আবুল ফজলের বাবা 'শেখ মুবারক নাগরী' আগ্রায় ভারতের প্রথম  মাদ্রাসা স্থাপন করেন। সেই মাদ্রাসাতেই 'খাওয়াজা ওবাইদুল্লাহ আহরার' এর কাছে জেহাদি ইসলামের দর্শন শিক্ষা লাভ করে আবুল ফজল। ১৫৭৫ সালে আকবরের রাজসভায় স্থান পেয়ে, ১৫৮০-৯০ আকবরের দাক্ষিণাত্য অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে তিনি জেহাদে অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেনাবাহিনীকে। [Blochmann, H. (tr.) (1927, reprint 1993). The Ain-I Akbari by Abu'l-Fazl Allami, Vol. I, Calcutta: The Asiatic Society, pp.548–50]

(৩) ফাইজি:- ইনি ছিলেন 'আবুল ফজলে'র বড় ভাই এবং একজন সাধারণ মানের কবি। ১৫৫৮ সালে তাকে আকবর 'মালিক-ই-সূরা' উপাধি দেয়। ফাইজি আকবরের অগণিত পুত্রদের আরবি এবং কোরান পড়াত। কিভাবে চাটুকারি করে তার মালিককে খুশী রাখা যায় এই বিদ্যেটা ফাইজি বেশ ভালভাবেই রপ্ত করেছিল। অনেক ইতিহাসবিদ দাবী করেন তার সময় সে ছিল শ্রেষ্ট কবি। আমি এই বিষয়ে একটা কথাই বলব আকবরের বিদ্যের বহর আর রুচিবোধ যে স্তরে ছিল তাতে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে তার রাজদরবারে কবিদের স্তরও সেই রকমই সাংঘাতিক রকমের নিম্নমানেরই হবে। ৩০ বছর বয়সে হিন্দু কাহিনী "নল ও দময়ন্তী"র আরবিতে অনুবাদ করে হিন্দু ধর্মকে যতরকমভাবে নোংরা বানানো যায় তার চেষ্টা করেছে ফাইজি। [Reynolds, Francis J., ed. (1921). "Feisi, Abul-Feis ibn Mubarák". Collier's New Encyclopedia. New York: P.F. Collier & Son Company.]

(৪) বীরবল:- ১৫২৮ সালে উত্তপ্রদেশের কাল্পি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম হিন্দু সমাজের বিশ্বাসঘাতক "মহেশ দাস"। বাবা গঙ্গা দাস ব্রাহ্মণ হবার পরেও ছেলেকে পার্সি ভাষা শিক্ষার জন্যে সূফী দরগায় পাঠিয়ে দেন। সেখানেই তাকিয়াবাজি জেহাদে দীক্ষিত হয় মহেশ। ১৫৫৬ সালে মুঘল দরবারে "বীর ভাঁড়/বীর বল" নাম নিয়ে জায়গা হয় তার। ১৫৭২ সালে বীরবল প্রথম জেহাদি রূপে 'হুসেন কুলি খান' এর সেনাবাহিনীর মনসবদার রূপে আকবরের ভাই 'হাকিম মির্জা'কে শায়েস্তা করতে যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর গুজরাট অভিযানেও ২ হাজারি মনসবদার হিসেবে বীরবল নৃশংসতার সমস্ত সীমা পার করে। ১৫৮৬ সালে সিন্ধু নদীর তীরের 'ইউসুফজাই' উপজাতির লোকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সেনাপতি 'জাইন খান'কে সাহায্য করতে বীরবলকে পাঠানো হয়। পথে পাকিস্তানের 'সোয়াট উপত্যকায়' অপেক্ষারত বিদ্রোহী আফগানদের আক্রমণে বীরবলের পরাজয় হয়েছিল খুবই লজ্জাজনকভাবে, ৮০০০ মুঘল সৈন্য মারা যায় এবং নিহত বীরবলের দেহ খুঁজেই পাওয়া যায় নি। বীরবল-আকবরের কৌতুকগুলো হচ্ছে জেহাদি বীরবলের নামে মিথ্যা অলীক গল্প মাত্র। আমরা দক্ষিণ ভারতে তেনালিরামন নামেও একই রকম কাল্পনিক গল্প শুনতে পাই। লেখক সলমন রুশদি তার The Enchantress of Florence বইতে বীরবলকে সাদাসিধে ভাঁড় রূপে দেখালেও, প্রকৃতপক্ষে বীরবল ছিল এক রক্তলোভী জেহাদি নরপিশাচ। [Richards, John F. (1995). The Mughal Empire. Cambridge University Press. pp. 49–52. ISBN 978-0-521-56603-2. Retrieved 29 June 2013.]

(৫) মানসিংহ:- ১৫৫০ সালের ২১ শে ডিসেম্বর আম্বের প্রদেশের এই রাজপুত রাজা জন্মগ্রহণ করেন। 'মির্জা রাজা' নামে পরিচিত মানসিংহ মুঘল সেনাবাহিনীর পাঁচ হাজারী মনসবদার ছিলেন। ১৬০৫ সালে তিনি সাত হাজারী মনসবদার হন। 'মানসিংহে'র মত বিশ্বাসঘাতক ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয়টি জন্ম নেয়নি। ১৮ই জুন ১৫৭৬ সালে মহারাণা প্রতাপের সঙ্গে হলদিঘাটের যুদ্ধে 'মানসিংহ মুঘল সেনাকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু রানা প্রতাপকে হত্যা করতে সে ব্যর্থ হয় এবং আকবর মানসিংহকেই এর জন্যে দায়ী করে। মানসিংহ ১০ হাজার মুঘল অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে রানা প্রতাপের ৩ হাজার অশ্বারোহী বাহিনীকে হারিয়ে দিলেও রানা প্রতাপকে হত্যা করতে পারেনি, কারণ রানা প্রতাপকে রক্ষা করছিল 'রানা পাঞ্জা' নামে এক 'ভীল' উপজাতি যোদ্ধা তার ৩০০ 'ভীল' সেনা নিয়ে। ১৫৮৫ সালে নৃশংসভাবে আফগান 'ইউসুফজাই' উপজাতি বিদ্রোহে দমন, ১৫৯০ তে উড়িষ্যা অভিযানে, ১৫৯৪ তে বাংলা বিহার অভিযানে চরম নৃশংসতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানসিংহ। সে তার বোনকে জাহাঙ্গীরকে আজীবন ভোগ করতে দেয়। এবং এমনকি পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর মানসিংহের উপর চাপ সৃষ্টি করে তার দৌহিত্রীকে (নাতনী) মোঘল হারেমে রাখার জন্য। রাজী না হলে, জাহাঙ্গীরের নির্দেশে গুপ্তঘাতকরা মানসিংহকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে এবং ভগবান দাস (মানসিংহের পিতা) আত্মহত্যা করে।

(৬) আবদুল রহিম খান:- আকবরের অভিভাবক বৈরাম খানের পুত্র 'আবদুল রহিম খান-এ-খানা' ছিলের মুঘল রাজসভার একজন উর্দু কবি। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করতেন এবং আকবরকে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে সমস্ত কাজ করতে সাহায্য করতেন। আকবর বৈরাম খানকে খুন করার পর আবদুলের সৎ মা 'সালিমা সুলতানা বেগম'কে মুঘল হারেমের যৌনদাসী বানিয়েছিলেন। তবুও আবদুল নপুংসকের মত মুঘল দরবারে পদ, স্বাচ্ছন্দ্য, সম্মানের লোভে পড়ে ছিলেন। বলা হয় তিনি ছিলেন কৃষ্ণের ভক্ত, এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কিছু দোহা লেখা ছাড়াও ১৫৯০ সালে বাবরের জীবনী 'বাবরনামা' কে তিনি তুর্কি ভাষা থেকে পার্সিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেন। দিল্লির মথুরা রোডে হুমায়ূনের সমাধির পাশেই এই আবদুলের সমাধিও আছে।

(৭) ফকির আজিয়াউদ্দিন:- তিনি ছিলেন আকবরের দরবারের এক সূফী ফকির এবং ইসলামী ধর্ম বিশেষজ্ঞ। আকবরের আমলে ভারতে ইসলাম ধর্ম এবং গোঁড়া হিন্দু এলাকাগুলিতে সূফী মতবাদ প্রচারের প্রধান কারিগর ছিলেন এই আজিয়াউদ্দিন। অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ইসলামিক জেহাদ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি, ফলে সকলের কাছেই ফকির হিসেবে সমাদর পেতেন। আকবরের আমলে হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস থেকে শুরু করে, হিন্দু নারীদের দিয়ে মুঘল হারেমখানা পূর্ণ করে সোয়াব (পুণ্য) আদায়ের জন্যে তিনি সবসময় আকবরকে প্ররোচিত করতেন। একজন সূফী ফকির হবার পরও তার নারী লালসা ছিল সর্বজনবিদিত। ইসলামী ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও মুঘল হারেমে তার ছিল অবাধ যাতায়াত। আজকের ISIS জঙ্গিদের মত প্রতিটি যুদ্ধের পর পরাজিত হিন্দু ভারতবাসীদের নৃশংসভাবে হত্যা করার বুদ্ধি তিনিই আকবরের মাথায় ঢুকিয়ে দিতেন কাফের মেরে জেহাদ করে বেহেস্ত প্রাপ্ত করবার জন্যে। আকবরের প্রবর্তিত ধর্ম দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনেও এই ফকিরের অবদান ছিল প্রধান।



আলাদা করে তথ্যসূত্র দিলাম না। কারণ লেখার মাঝেই সূত্রসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আরো কিছু লিংক দিলাম সহযোগী তথ্যসূত্র হিসেবে।

১। https://timesofindia.indiatimes.com/home/self-goals-a-bigger-threat-to-bjp-than-opponent-rahul/deep-focus/How-Akbar-went-from-great-to-not-so-great/articleshow/47402293.cms?

২। https://www.quora.com/Was-Akbar-a-kind-ruler-or-cruel

৩। http://indiafacts.org/dispelling-the-myth-of-akbar-the-great/

৪।http://www.newworldencyclopedia.org/entry/Akbar_the_Great

৫। https://www.britannica.com/biography/Akbar

৬। https://www.mensxp.com/special-features/today/31179-the-brutal-way-in-which-mughals-killed-this-sikh-warrior-of-punjab-will-make-you-rethink-cruelty.html

৭। http://sikhsangat.org/2015/brutality-of-isis-is-the-copy-of-what-mughals-did-with-sikhs-of-punjab/

৮।https://www.speakingtree.in/allslides/knowing-aurangzeb-rare-facts-about-indian-historys-brutal-emperor-571926

৯।http://postcard.news/cruel-muslim-ruler-ever-human-history/

১০। http://www.rediff.com/news/2007/feb/16francois.htm



http://www.rediff.com/news/2007/feb/16francois.htm

Comments

  1. সত্যই কী মহান বলা চলে?
    আর কিছু মাথায় আসছে না!এতদিন আকবর সবার good books এ ছিল! আজ হঠাৎ তার এরাম বর্বর চরিএ যা Isis কেও হার মানায় বুঝেওঠা দূষ্কর কোনটা ঠিক কোনটা ভুল!
    তবে একটা প্রশ্নছিল হুমায়ুনকে নিয়ে হুমায়ুন শ্রবন শক্তি হারিয়ে ছিল আপনার লেখায় উল্লেখ আছে! তবে যে তিনি সিড়ি থেকে নামার সময় আজানের আওয়াজ পান সিড়িতেই নামাজ পড়তে বসেন এবং পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়! প্রশ্ন হল তিনি যদি শ্রবন ক্ষমতা হারান তাহলে আজানের আওয়াজ শুনলেন কী করে?

    ReplyDelete
  2. আলো অন্ধকার নিয়ে জীবন । অকবরের ও তাই । আমরা সবাই তার ভালো দিকটি জেনে এসেছি, অন্ধকার দিকটি তুলে দিলাম, পাঠক হিসেবে আপনার কাছে আকবরের মুল্যায়নটি আসল, আপনি ওনাকে এখন কি ভাবে দেখছেন ।

    দ্বিতীয়টি হচ্ছে, হুমায়ুনের শ্রবণ শক্তি নিয়ে প্রশ্ন, ওনার মৃত্যু নিয়ে আমার কাছে একটু অন্যমত আছে, উনি সিড়ি দিয়ে পা পিছলে পড়ে মারা যান, তা ঠিক তবে তিনি যে আজানের আওয়াজ শুনে নামতে গিয়ে মারা যান, তা নিয়ে গবেষকরা একমত নন ।

    ReplyDelete
  3. স্যার আমি এখানে নতুন নতুন তথ্য পাবলিশ করতে চায়। কিভাবে পাবলিশ করবো?

    ReplyDelete

Post a Comment

If you have any doubt, please let me know.

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে