কলকাতায় প্রথম বাইসাইকেল আসে 131 বছর আগে - শুভজিৎ দে

আজ 3 জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস, 2018 সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রসংঘর সাধারণ সভা 3 জুন তারিখটিকে বিশ্ব সাইকেল দিবস হিসাবে উদযাপন করতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, সেই থেকে প্রতি বছর ঐ দিন বিশ্ব সাইকেল দিবস পালিত হয়ে চলেছ। এখন সব নানা ধরনের মোটরবাইকের যুগ। যন্ত্রে আবদ্ধ জীবন। এই মোটরবাইকের পূর্বপুরুষ বাইসাইকেল, আজ আলোচনা এই বাইসাইকেল নিয়ে।

চালক সহ BONE SHAKER
চিত্রঋণ - Wikipedia

বাইসাইকেলের পূর্বপুরুষ হচ্ছে ভেলোসিপিড (VELOCEPEDE) নামক কাঠের দুচাকার এক যন্ত্র। যাতে প্যাডেল থাকত না, মাটিতে পা দিয়ে ধাক্কা মেরে তা চালাতে হতো। এই যন্ত্রের জন্ম হয় ফ্রান্সে 1800 খ্রিঃ নাগাদ। কলকাতায় এই যন্ত্রটি কবে আসে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। রাধারমণ মিত্রের কলকাতা দর্পণ গ্রন্থ থেকে জানা যায় " এক জনৈক ইংরেজ ভদ্রলোক জানান তিনি স্ট্যান্ড রোডের কাছে দুটি ভেলোসিপিডের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখেছে, এই কথা তিনি জানান 1827 সাল নাগাদ। "

ভেলোসিপিড নামক কাঠের দুচাকার এক যন্ত্র।
চিত্রঋণ - Wikipedia

এই ভেলোসিপিড যন্ত্র জার্মানি ঘুরে ইংল্যান্ডে পৌঁছায় 1865 সালে। কিন্তু এ যন্ত্রে তখন লোহার চাকা লাগানো থাকতো। ঐ যন্ত্র চড়ে কিছুটা ঘুরলেই চালক এর শরীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে যাবে। তাই ইংল্যান্ড এর নাম হয় " BONE SHAKER "

BONE SHAKER 
চিত্রঋণ - Wikipedia

অতঃপর হাওয়াহীন নিরেট চাকা যুক্ত করা হয় BONE SHAKER এর সাথে, যার একটি চাকা বড় ও একটি চাকা অন্যটির তুলনায় অনেক ছোটো। এই গাড়ির তখন নাম হল PENNY FARTHING এটা 1880 সালের কথা।

PENNY FARTHING
চিত্র ঋণ - Wikipedia

ইতিমধ্যে গঙ্গায় বয়ে গেছে বহু জল, এই PENNY FARTHING সাইকেলে চাপলে, পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় তার বেঢপ গঠনের জন্য, পরবর্তীকালে PENNY FARTHING এর দুই চাকা সমান করে তৈরি হয় আজকের নিরাপদ বাইসাইকেল (SAFETY BICYCLE) 1885 সালে। তার দুই বছর পর স্কটল্যান্ডবাসী জন বয়েড ডানলপ নামে এক ব্যক্তি হাওয়া যুক্ত টায়ারের আবিষ্কার করে বাইসাইকেল কে জনপ্রিয় করে তোলেন।

জন বয়েড ডানলপ
চিত্রঋণ - Wikipedia

বাইসাইকেল কলকাতায় দেখা যায় 1889 এ। এদেশে বাইসাইকেলের প্রবক্তা বলা যেতে পারে হেমেন্দ্রমোহন বোস কে, যিনি একজন বাঙালি ব্যবসায়ী।

হেমেন্দ্রমোহন বোস
চিত্রঋণ - Wikipedia

তিনি মূলত সুগন্ধীদ্রব্য, সাইকেল, মোটর গাড়ি, রেকর্ড, টর্চ লাইট এবং ছাপাখানার ব্যবসা করেছিলেন। তিনি শিল্পে বাঙালির কর্মক্ষেত্র তৈরি করেন এবং বহু বিষয়ে নিজস্ব ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিস্ময়কর যান্ত্রিক প্রগতির বিভিন্ন নিদর্শনকে এদেশ প্রবর্তন করেন। হেমেন্দ্রমোহন কুন্তলীন তেল ও সুগন্ধী দ্রব্য দেলখোসের প্রচার এবং সাহিত্যসৃষ্টিকে উৎসাহ দেবার জন্য ১৩০৩ বঙ্গাব্দে কুন্তলীন পুরস্কার প্রবর্তন করেন এবং অনেক সাহিত্যিককে নিজের প্রতিভা বিকাশে সুযোগ দেন। গল্প লিখে প্রথম বছরের পুরস্কার পেয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম মুদ্রিত গল্প 'মন্দির' কুন্তলীন পুরস্কার বিজয়ী। হেমেন্দ্রমোহন খেলাধুলাতেও উৎসাহী ছিলেন। স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার ৫২ নং আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে বহু জ্ঞানীগুনীর আসা যাওয়া ছিল।

হেমেন্দ্রমোহন বোসের অন্য 
এক ব্যবসার জন্য বিজ্ঞাপন।
চিত্রঋণ - Wikipedia

রাধারমণ বাবু আর এক স্থানে বলছেন হেমেন্দ্রমোহন বোস এই সাইকেল চড়া শিখিয়েছিলেন, স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে, প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে এবং নীলরতন সরকার মহাশয়কে। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতায় প্রথম সাইকেল দোকান ছিল ইংরেজদের, এবং তাও ধর্মতলা স্ট্রিটে। তারপর কলকাতায় সাইকেল বিপণনের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট। হরিদাস নন্দী হলেন প্রথম বাঙালি যিনি কলকাতায় সাইকেল এর দোকান দেন। তাঁর দোকান এখনও আছে ওয়েলিংটন স্কোয়ারের দক্ষিণে, আগে বিদেশ থেকে সাইকেল আমদানি করা হলেও বর্তমনে দেশীয় সাইকেল প্রস্তুত ও বিক্রয় হয়।

হরিদাস নন্দীর সাইকেল বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন
চিত্রঋণ - Wikipedia




তথ্যসূত্র 

কলকাতা দর্পণ - রাধারমণ মিত্র

শ্রীপান্থের কলকাতা - শ্রীপান্থ

পুরনো কলকাতার কথাচিত্র - পূর্ণেন্দু পত্রী
বিভিন্ন বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম

Comments

Post a Comment

If you have any doubt, please let me know.

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে