যার আদলে তৈরী রাণী রাসমণির স্বপ্নের দক্ষিণেশ্বর মন্দির - শুভজিৎ দে
টালিগঞ্জ দক্ষিণ কলকাতার একটি অঞ্চল। এর উত্তরসীমায় পূর্ব রেলওয়ের দক্ষিণ শহরতলি লাইন, পূর্বে লেক গার্ডেন্স ও গলফ গ্রিন দক্ষিণে পশ্চিম পুটিয়ারি ও পূর্ব পুটিয়ারি এবং পশ্চিমে নিউ আলিপুরও বেহালা অবস্থিত। এই টালিগঞ্জ নামেরও আছে এক ইতিহাস। প্রথমে জানা যাক তা, কলকাতার দ্য ফার্দিনান্দ দে লেসপ্স মেজর উইলিয়াম টলির নামে টালিগঞ্জের নামকরণ হয়। এই টলি সাহেবই 1775-76 সালে কলকাতার সঙ্গে অসম ও পূর্ববঙ্গের যোগসূত্র হিসাবে টালির নালা খনন ও ড্রেজ করার কাজ শুরু করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই টালির নালাটিও টলি সাহেবের নামেই নামাঙ্কিত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টলি সাহেবকে এই নালা দিয়ে যাতায়াতকারী নৌকাগুলি থেকে টোল আদায় ও নালার ধারে একটি গঞ্জ বা বাজার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল।
1776 সালে তার এই স্বপ্নের প্রকল্পটি সম্পন্ন হয় এবং পরের বছরেই এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই এই সতেরো মাইল দীর্ঘ খালটি টালির নালা (ইংরেজিতে টলি’জ ক্যানেল) ও তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি টালিগঞ্জ নামে পরিচিত হয়। নালার পূর্ব পাড়ে বর্তমান টালিগঞ্জ রোডের কাছেই কোথাও এই বাজারটি অবস্থিত ছিল। বর্তমানে টালির নালার দুধারে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল টালিগঞ্জ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই টালিগঞ্জ অঞ্চল অবশ্য পরিচিত অন্য এক কারণে, তা কলকাতা কেন্দ্রীক চলচ্চিত্র শিল্পের জন্যে । অবশ্য এখানেই শেষ নয়, রয়েছে অন্য এক ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের টানে আমার ছুটে যাওয়া টালিগঞ্জের ছোটো রাশবাড়ি বা গোপালজীর মন্দির বা হরিহর মন্দির।
(রাধাগোবিন্দজীর মন্দির)
1776 সালে তার এই স্বপ্নের প্রকল্পটি সম্পন্ন হয় এবং পরের বছরেই এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই এই সতেরো মাইল দীর্ঘ খালটি টালির নালা (ইংরেজিতে টলি’জ ক্যানেল) ও তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি টালিগঞ্জ নামে পরিচিত হয়। নালার পূর্ব পাড়ে বর্তমান টালিগঞ্জ রোডের কাছেই কোথাও এই বাজারটি অবস্থিত ছিল। বর্তমানে টালির নালার দুধারে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল টালিগঞ্জ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই টালিগঞ্জ অঞ্চল অবশ্য পরিচিত অন্য এক কারণে, তা কলকাতা কেন্দ্রীক চলচ্চিত্র শিল্পের জন্যে । অবশ্য এখানেই শেষ নয়, রয়েছে অন্য এক ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের টানে আমার ছুটে যাওয়া টালিগঞ্জের ছোটো রাশবাড়ি বা গোপালজীর মন্দির বা হরিহর মন্দির।
(কোষ্ঠি পাথরের ফলকযুক্ত প্রধান প্রবেশ পথ)
এক সময়ে গঙ্গা-ভাগীরথী নদী ব্যান্ডেলের কাছে ত্রিবেণীতে 3টি শাখায় ভাগ হয়ে যেত। দক্ষিণ পশ্চিম দিকে সপ্তগ্রামের পাশ দিয়ে বজবজ, ফলতা, ডায়মন্ডহারবার হয়ে সমুদ্রে মিশত সরস্বতী নদী। যমুনা নদী বয়ে যেত দক্ষিণ-পূর্ব দিয়ে। সরস্বতী আর যমুনার মাঝখানে বয়ে যেত হুগলি নদী। এই হুগলি নদীর আদি খাতটিকে বলা হত আদিগঙ্গা (বর্তমানে টালিনালা), আর এই আদিগঙ্গার পাশেই রয়েছে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির যে মন্দিরের আদলে তৈরি সেই রাধাগোবিন্দ মন্দির।
বজবজ এক সময়ে ছিল সুন্দরবনের অংশ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত খুকি মার মন্দির, 1897 সালে স্বামী বিবেকানন্দেরস্মৃতিবাহক পুরোনো বজবজ স্টেশন তুলে ধরে বজবজের ঐতিহাসিক মাহাত্ম্যকে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বজবজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে বাওয়ালি রাজবাড়ি। কলকাতা থেকে 35 কিলোমিটার দূরে বজবজ রেলস্টেশন। স্টেশন থেকে রিক্সা করে কিছুটা পথ গেলেই দেখা মিলবে এই রাজবাড়ির। এই রাজবাড়ির অংশ হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণকায় এই গোপালজীর মন্দির বা হরিহর মন্দির।
কথিত আছে যে রানী রাসমণি, কালীঘাট মন্দির দর্শন করে ফেরার পথে এই মন্দিরের আসেন, এবং এর শিল্প সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে পরবর্তী কালে এই মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বর ও দ্বাদশ শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এই রাধাগোবিন্দজীর মন্দিরটির 1867 শকাব্দে অর্থাৎ 1840 সাল নাগাদ নির্মাণ হয়, দক্ষিণেশ্বর মন্দির নির্মাণের 15 বছর আগে। এখানে আরাধ্য সকল দেবতার মূর্তিই কোষ্ঠি পাথরের নির্মিত, এছাড়া মন্দিরগাত্রেও কোষ্ঠি পাথর পরিলিক্ষত হয়, মন্দির প্রাঙ্গণে মূল প্রেবেশের পথে দুটি অস্পষ্ট প্রায় ফলক দেখা যায়, যার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায় এর প্রতিষ্ঠা কাল ও প্রতিষ্ঠাতার নাম, প্রবেশের পথে মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরে ডানদিকে কোষ্ঠি পাথরে খোদাই করা আরও একটি ফলক দেখতে পাওয়া যায়। এখানে অবস্থিত দ্বাদশ শিবলিঙ্গের আলাদা আলাদা নাম আছে, যেমন- ভোলেশ্বর, রামচন্দ্রেরশ্বর, কৈলাশনাথ, ভুথনাথ, গোবিন্দচন্দ্রেরশ্বর, ভাড়েরশ্বর, ভুবনেশ্বর, কমলাকান্তেরশ্বর, ভোলানাথ, তারকনাথ, রত্নেশ্বর এবং গোপেশ্বর । শিবরাত্রি, দোল, ঝুলন, রাস পূর্ণিমা ইত্যাদি উৎসব আজও পালিত হয়ে আসছে, তবে তা আগের মত অতি সমারহে আর পালিত হয় না অর্থনৈতিক কারণে। শোনা যায় এখানে আগে দোলপূর্ণিমার মত দধি উৎসব পালন হত, তবে কালের ফেরে আজ আর তা হয় না।
স্থাপত্যটির নির্মাণ কৌশল দেখে অনুমান করা যায়যে, এটির নির্মাণের সময়কাল উনবিংশ শতক। এটিতে বাংলার প্রথাগত নির্মাণ কৌশলের ছাপ স্পষ্ট। মন্দিরে প্রবেশের পথটি চারটি (4) পিলার (Pillar) এর সাহায্যে দাঁড়িয়ে আছে, ভিতরে একটি 'Courtyard' এর উপস্থিতি তার চারদিক ঘিরেই এই স্থাপত্যের বিস্তার। এর সোজাসুজি মূল নবরত্ন মন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার দুপাশে আছে পঞ্চরত্ন দুই শিবমন্দির এবং 'Courtyard' এর দুপাশে কিছু ছোটো ছোটো আটচালা শিব মন্দির, সেগুলির সামনে অবস্থিত ছাদমুক্ত উঠোন। গোটা স্থাপত্যটিকে মজবুত করার জন্যে 'Pillar' এর উপস্থিতি লক্ষণীয়।
মূল মন্দিরের সামনে 'Plinth' এর অবস্থান লক্ষণীয় যা ভূমি ও মন্দিরের মন্দিরের মধ্যে সংযোগের কাজ করছে, এই 'Plinth' এর সামনে বড়ো মাপের 'Staircase' রয়েছে যেটি ভূমি থেকে মন্দিরের উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি করেছে। এরপর 6টি 'Pillar' যুক্ত আয়তাকার দালান চোখে পরে। ইসলামীয় স্থাপত্যরীতির একটি মূখ্য নিদর্শন হল গর্ভগৃহের মূল 'Gateway' এবং তার দুপাশে একটি করে 'Compound Arch' এর উপস্থিতি, যা এখানে অবস্থিত।
গোটা স্থাপত্যটি ইঁটের তৈরী এবং তার উপর 'Plaster Work' চোখে পরে। মন্দিরের চূড়াটি বাংলার ঐতিহ্যগত নবরত্ন ধারা বিশিষ্ট, এগুলির মাথায় একই রেখায় 3টি করে 'Amalaka' এবং 'Kalasha' 'Finial' এর উপস্থিতি চোখে পরে।
এই স্থাপত্যটির যদি সঠিক পর্যবক্ষেণ না হয়, তবে হারিয়ে যাবে বহুমুখী এক বঙ্গঐতিহ্য, কালের নিয়মে এই স্থাপত্যটি এখন স্থানীয় বখাটেদের দের আস্তানায় রূপান্তরিত হয়েছে, যার থেকে এই স্থাপত্যটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য ।
(কোষ্ঠি পাথরের রাধাগোবিন্দজীর মূর্তি)
বজবজ এক সময়ে ছিল সুন্দরবনের অংশ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত খুকি মার মন্দির, 1897 সালে স্বামী বিবেকানন্দেরস্মৃতিবাহক পুরোনো বজবজ স্টেশন তুলে ধরে বজবজের ঐতিহাসিক মাহাত্ম্যকে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বজবজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে বাওয়ালি রাজবাড়ি। কলকাতা থেকে 35 কিলোমিটার দূরে বজবজ রেলস্টেশন। স্টেশন থেকে রিক্সা করে কিছুটা পথ গেলেই দেখা মিলবে এই রাজবাড়ির। এই রাজবাড়ির অংশ হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণকায় এই গোপালজীর মন্দির বা হরিহর মন্দির।
(প্রথম ফলক)
কথিত আছে যে রানী রাসমণি, কালীঘাট মন্দির দর্শন করে ফেরার পথে এই মন্দিরের আসেন, এবং এর শিল্প সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে পরবর্তী কালে এই মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বর ও দ্বাদশ শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এই রাধাগোবিন্দজীর মন্দিরটির 1867 শকাব্দে অর্থাৎ 1840 সাল নাগাদ নির্মাণ হয়, দক্ষিণেশ্বর মন্দির নির্মাণের 15 বছর আগে। এখানে আরাধ্য সকল দেবতার মূর্তিই কোষ্ঠি পাথরের নির্মিত, এছাড়া মন্দিরগাত্রেও কোষ্ঠি পাথর পরিলিক্ষত হয়, মন্দির প্রাঙ্গণে মূল প্রেবেশের পথে দুটি অস্পষ্ট প্রায় ফলক দেখা যায়, যার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায় এর প্রতিষ্ঠা কাল ও প্রতিষ্ঠাতার নাম, প্রবেশের পথে মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরে ডানদিকে কোষ্ঠি পাথরে খোদাই করা আরও একটি ফলক দেখতে পাওয়া যায়। এখানে অবস্থিত দ্বাদশ শিবলিঙ্গের আলাদা আলাদা নাম আছে, যেমন- ভোলেশ্বর, রামচন্দ্রেরশ্বর, কৈলাশনাথ, ভুথনাথ, গোবিন্দচন্দ্রেরশ্বর, ভাড়েরশ্বর, ভুবনেশ্বর, কমলাকান্তেরশ্বর, ভোলানাথ, তারকনাথ, রত্নেশ্বর এবং গোপেশ্বর । শিবরাত্রি, দোল, ঝুলন, রাস পূর্ণিমা ইত্যাদি উৎসব আজও পালিত হয়ে আসছে, তবে তা আগের মত অতি সমারহে আর পালিত হয় না অর্থনৈতিক কারণে। শোনা যায় এখানে আগে দোলপূর্ণিমার মত দধি উৎসব পালন হত, তবে কালের ফেরে আজ আর তা হয় না।
(কোষ্ঠি পাথরের দ্বিতীয় ফলক)
(কোষ্ঠি পাথরের তৃতীয় ফলক)
(মূল প্রবেশ পথের বাইরে)
(কাঠের নির্মিত ভাস্কর্য)
(কাঠের নির্মিত ভাস্কর্য)
** মন্দিরটির শিল্প শৈলী বিশ্লেষণ করেছেন, জুই সাহা ।
Khub valo hoyeche lekha ta. R amaro valo laglo tor research er part hote...thank you...☺️
ReplyDeleteধন্যবাদ বন্ধু, তুই না সাহায্য করলে লেখাটা শেষ করে উঠতে পারতাম না ।
DeleteKhub valo hoyeche dada onek ke6u history jante parlam
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDelete