বিদ্যাসাগরের ইচ্ছাপত্র ও তার ভবিষ্যত - শুভজিৎ দে

1875 সালে 31শে মে, আমহাস্ট স্ট্রিটের 63 নম্বর বাড়ির দোতলায় বসে বিদ্যাসাগর মহাশয় 25টি অনুচ্ছেদে বিন্যস্ত একটি ইচ্ছাপত্র লেখেন নিজের হাতে। এই ইচ্ছাপত্রে স্থান পেয়েছে তাঁর নিজেস্ব সম্পত্তির তালিকা, 45জন মাসিক বৃত্তিপ্রাপকের নাম, যার মধ্যে অনেকেই তাঁর আত্মীয় নন। এছাড়াও দাতব্য বিদ্যালয় সহ তাঁর ইচ্ছাপত্রের সর্বশেষ অনুচ্ছেদটি, যা সকলকেই আকর্ষিত করে, আর সেই অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু তাঁর পুত্র নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।

চিত্রঋণ - Wikipedia

তাঁর ইচ্ছাপত্রের সর্বশেষ অনুচ্ছেদটি হয়তো আমাদের সকলেরই জানা, তাই সেই বিষয়টিকে অপেক্ষাকৃত গৌণ মনে করে, সেই ইচ্ছা পত্রের প্রথম দিককার অনুচ্ছেদ গুলির উপর আলোকপাত করার এই ব্লগটি লেখার উদ্দেশ্য। তাই দেখে নেওয়া যাক, তার ইচ্ছাপত্রের বক্তব্য।

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্রঋণ - Wikipedia


তাঁর ইচ্ছাপত্রের বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো 

1। আমি স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া স্বচ্ছন্দচিত্তে আমার সম্পত্তির অন্তিম বিনিয়োগ করিতেছি।

2। চৌগাছা নিবাসী শ্রীযুক্ত কালীচরণ ঘোষ, পাথরা নিবাসী শ্রীযুক্ত ক্ষীরোদনাথ সিংহ, আমার ভাগিনেয় জনপুর নিবাসী শ্রীযুক্ত বেণীমাধব মুখোপাধ্যায় এই তিনজনকে আমার এই অন্তিম বিনিয়োগের পত্রের কার্য্যদর্শী নিযুক্ত করিলাম। তাঁহারা এই পত্রের অনুযায়ী যাবতীয় কার্য্য নির্বাহ করিবেন।

3। আমি অবিদ্যমান হইলে আমার সমস্ত সম্পত্তি নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের হস্তে যাইবেক।

4। এক্ষণে আমার যে সকল সম্পত্তি আছে কার্য্যদর্শীদিগের অবগতিনিমিত্ত তৎসমুহের বিবৃতি এই বিনিয়োগ পত্রের সহিত গ্রথিত হইল।

5। কার্য্যদর্শীরা আমার ঋণ পরিশোধ ও আমার প্রাপ্য আদায় করিবেন।

6। আমার সম্পত্তির উপস্ব্ত্ত্ব হইতে আমার পোষ্যবর্গ ও কতকগুলি নিরুপায় জ্ঞাতি কুটুম্ব আত্মীয় প্রভৃতির ভরণপোষণ ও কতিপয় অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ হইয়া আসিতেছে। এই সমস্ত ব্যয় এককালে রহিত করিয়া আপণ আপণ প্রাপ্য আদায়ে প্রবৃত্ত হইবেন, আমার উত্তমণেরা সেরূপ প্রকৃতির লোক নহেন, কার্য্যদর্শীরা তাঁহাদের সম্মতি লইয়া এইরূপ ব্যবস্থা লইবেন যে বিনিয়োগ পত্রের বৃত্তি প্রভৃতি প্রচলিত থাকিয়া তাহাদের প্রাপ্য ক্রমে আদায় হইয়া যায়।

7। এক্ষণে যে সকল ব্যক্তি আমার নিকট মাসিক বৃত্তি পাইয়া থাকেন আমি অবিদ্যমান হইলে তাঁহাদের সকলের সেরূপ বৃত্তি পাওয়া সম্ভব নহে। তন্মধ্যে যাঁহারা আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যেরূপ মাসিক বৃত্তি পাইবেন তাহা নিম্নে নির্দিষ্ট হইতেছে।
  • পিতৃদেব শ্রীযুক্ত ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় - 50 টাকা
  • মধ্যম সহোদর শ্রীযুক্ত দিনবন্ধু ন্যায়রত্ন - 40 টাকা
  • তৃতীয় সহোদর শ্রীযুক্ত শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন - 40 টাকা
  • কনিষ্ঠ সহোদর শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় - 30 টাকা
  • জ্যেষ্ঠা ভগিনী শ্রীমতী মনোমোহিনী দেবী - 10 টাকা
  • মধ্যমা ভগিনী শ্রীমতী দিগম্বরী দেবী - 10 টাকা
  • কনিষ্ঠা ভগিনী শ্রীমতী মন্দাকিনী দেবী - 10 টাকা
  • বনিতা শ্রীমতী দীনময়ী দেবী - 30 টাকা
  • জ্যেষ্ঠা কন্যা শ্রীমতী হেমলতা দেবী - 15 টাকা
  • মধ্যমা কন্যা শ্রীমতী কুমুদিনী দেবী - 15 টাকা
  • তৃতীয় কন্যা শ্রীমতী শরৎকুমারী দেবী - 15 টাকা
  • পুত্রবধূ শ্রীমতী ভবসুন্দরী দেবী - 15 টাকা
  • পৌত্রী শ্রীমতী মৃণালিনী দেবী - 15 টাকা
  • জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র শ্রীমান সুরেশচন্দ্র সমাজপতি - 15 টাকা
  • কনিষ্ঠ দৌহিত্র শ্রীমান যতীন্দ্রনাথ সমাজপতি - 15 টাকা
  • দৌহিত্রী শ্রীমতি রাজরাণী দেবী - 15 টাকা
  • কনিষ্ঠা ভ্রাতৃবধূ শ্রীমতী এলোকেশী দেবী - 15 টাকা
  • শাওড়ী শ্রীমতী তারাসুন্দরী দেবী - 10 টাকা

(এ'ছাড়াও আরও 27 জন আছেন যাঁরা প্রাপক হিসেবে 10, 08, 05, 03, 02 টাকা করে বৃত্তি পেয়েছেন।)

8। যদি কার্য্যদর্শীরা দ্বিতীয় শ্রেণীবিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে মাসিক বৃত্তি দেওয়া অনাবশ্যক বোধ করেন অর্থাৎ আমার দত্ত বৃত্তি না পাইলেও তাঁহার চলিতে পারে এরূপ দেখেন তাহা হইলে তাঁহার বৃত্তি রহিত করিতে পারিবেন।

9। আমার দেহান্ত সময়ে আমার মধ্যমা, তৃতীয়া ও কনিষ্ঠা কন্যার যে সকল পুত্র ও কন্যা বিদ্যমান থকিবেক কোনও কারণে তাহাদের ভরণ-পোষণ, বিদ্যাভ্যাস প্রভৃতির ব্যয় নির্বাহের অসুবিধা ঘটিলে তাহারা প্রত্যেকে দ্বাবিংশ বর্ষ বয়ঃক্রম পর্যন্ত মাসিক 15 (পনের) টাকা বৃত্তি পৈবেক।

10। আমার দেহান্ত সময় আমার যে সকল পৌত্র ও দৌহিত্র অথবা পৌত্রী ও দৌহিত্রী বিদ্যমান থকিবেক তাহাদের মধ্যে কেহ অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব, প্রভৃতি দোষাক্রান্ত অথবা অচিকৎস্য রোগগ্রস্থ হইলে আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যাবজ্জীবন 10 টাকা বৃত্তি পাইবেক।

11। যদি আমার মধ্যমা অথবা কনিষ্ঠা ভগিনীর কোনো পুত্র উপাজ্জনক্ষম  হইবার পুর্ব্বে তাঁহার বৈধব্য ঘটে তাহা হইলে যাবৎ তাঁহার কোনো পুত্র উপাজ্জনক্ষম না হয় তাবৎ তিনি আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে সপ্তম ধারা নির্দিষ্ট বৃত্তি অতিরিক্ত মাসিক আর 20 টাকা বৃত্তি পাইবেক।

12। যদি শ্রীমতী নৃত্যকালী দাসীর কোনো পুত্র উপাজ্জনক্ষম হইবার পূর্বে তাঁহার বৈধব্য ঘটে তাহা হইলে যাবৎ তাঁহার কোনো পুত্র উপাজ্জনক্ষম না হয় তাবৎ তিনি আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে সপ্তম ধারা নির্দিষ্ট বৃত্তি ব্যতিরিক্ত মাসিক আর 10 টাকা বৃত্তি পাইবেক।

13। কার্য্যদর্শীরা আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে নীলমাধব ভট্টাচার্যের বনিতা শ্রীমতী সারদা দেবীকে তাঁহার নিজের স্বত্ব পুত্রত্রয়ের ভরণপোষণার্থে মাস মাস ত্রিশ টাকা আর তাঁহার পুত্রেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে যাবজ্জীবন মাস মাস 10 টাকা দিবেন। তিনি বিবাহ করিলে অথবা উৎপথবর্ত্তিনী হইলে তাঁহাকে উক্ত উভয় বিধেয় মধ্যে কোনও প্রকার বৃত্তি দিবার আবশ্যকতা নাই।

14। আমি অবিদ্যমান হইলে আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যে অনুষ্ঠানে যেরূপ মাসিক ব্যয় হইবেক তাহা নিম্নে নির্দিষ্ট হইতেছে।

  • জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে আমার স্থাপিত বিদ্যালয় - 100
  • ঐ গ্রামে আমার স্থাপিত চিকিৎসালয় - 50
  • ঐ গ্রামের অনাথ ও নিরুপায় লোক - 30
  • বিধবাবিবাহ - 100

15। যদি শ্রীযুক্ত জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রনাথ পালিত, শ্রীযুক্ত গোবিন্দচন্দ্র ভর এই তিনজন আমার দেহান্ত সময় পর্যন্ত আমার পরিচারক নিযুক্ত থাকে তাহা হইলে কার্য্যদর্শীরা তাহাদের প্রত্যেককে এককালীন 300 টাকা দিবেন।

16। কার্য্যদর্শীরা বিষয় রক্ষা, লৌকিক রক্ষা, কন্যা দান প্রভৃতির আবশ্যক ব্যয় স্বীয় বিবেচনা অনুসারে করিবেন।

17। এই বিনিয়োগপত্রে যাঁহার পক্ষে অথবা সেই বিষয় যেরূপ নির্বন্ধ যদি তাহাতে তাঁহার পক্ষে সুবিধা অথবা সে বিষয়ের সুশৃঙ্খলা না হয় তা হইলে কার্য্যদর্শীরা সকল বিষয়ের সবিশেষ পর্যালোচনা করিয়া যাঁহার পক্ষে অথবা সে বিষয়ে যেরূপ নির্বন্ধ করিবেন তাহা আমার স্বকৃতের ন্যায় গণনীয় ও মাননীয় হইবেক।

18। এক্ষণে আমার সম্পত্তির যেরূপ উপস্বত্ব আছে যদি উত্তরকালে তা খর্ব্বতা তা হইলে যাহাকে বা যে বিষয় যাহা দিবার নির্বন্ধ করিলাম কার্য্যদর্শীরা স্বীয় বিবেচনা অনুসারে তাহার ন্যূনতা করিতে পারিবেন।

19। আবশ্যক বোধ হইলে কার্য্যদর্শীরা আমার সম্পত্তির কোন অংশ বিক্রয় করিতে পারিবেন।

20। আমার রচিত ও প্রচারিত পুস্তক সকল শম্ভুচন্দ্রের সংস্কৃত যন্ত্রের পুস্তকালয়ে বিক্রীত হইতেছে, আমার একান্ত অভিলাষ শ্রীযুক্ত ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায় যাবৎ জীবিত ও উক্ত পুস্তকালয়ের অধিকারী থাকিবেন তাবৎকাল পর্যন্ত আমার পুস্তক সকল ঐ স্থানেই বিক্রিত হয় তবে এক্ষণে যেরূপ সুপ্রণালীতে পুস্তকালয়ের কার্য্য নির্বাহ হইতেছে তাহার ব্যতিক্রম ঘটিলে ও তণ্নিবন্ধন ক্ষতি বা অসুবিধা বোধ হইলে কার্য্যদর্শীরা স্থানান্তরে বা প্রকারান্তরে পুস্তক বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন।

21। কার্য্যদর্শীরা একমন হইয়া কার্য্য করিবেন। মতভেদস্থলে অধিকাংশের মতে কার্য্য নির্বাহ হইবেক।

22। নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের মধ্যে কেহ অবিদ্যমান অথবা এই বিনিয়োগ পত্রের অনুযায়ী কার্য্য করিতে অসম্মত হইলে অবশিষ্ট দুই জন তাঁহার স্থলে অন্য ব্যক্তিকে নিযুক্ত করিবেন । এইরূপে নিযুক্ত ব্যক্তি আমার নিজের নিয়োজিত ব্যক্তির ন্যায় কার্য্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইবেন।

23। যদি নিযুক্ত কার্য্যদর্শীরা এই বিনিয়োগ পত্রের অনুযায়ী  কার্য্যভার গ্রহণে অসম্মত বা অসমর্থ হন তাহা হইলে যাঁহারা এই বিনিয়োগ পত্র অনুসারে বৃত্তি পাইবার অধিকারী তাঁহারা বিচারালয়ে আবেদন করিয়া উপযুক্ত কার্য্যদর্শী নিযুক্ত করাইয়া লইবেন। তিনি এই বিনিয়োগ পত্রের অনুযায়ী  সমস্ত কার্য্য নির্বাহ করিবেন।

24। যাবৎ আমার ঋণ পরিশোধ না হয় তাবৎকাল পর্যন্ত এই বিনিয়োগ পত্রের নিয়ম অনুসারে নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের হস্তে সমস্ত ভার থকিবেক। ঋণ পরিশোধ হইলে ঐ সময়ে যাঁহার  শাস্ত্রনুসরে আমার উত্তরাধিকারী থাকিবেন তাঁহারা আমার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হইবেন এবং সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ,  ত্রয়োদশ,  চতুর্দ্দশ, পঞ্চদশ ধরায় নির্দিষ্ট বৃত্তি প্রভৃতি প্রদান পূর্বক উপস্বত্ব ভোগ করিবেন। ঐ উত্তরাধিকারীরা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে কার্য্যদর্শীরা তাঁহাদিগকে সমস্ত বুঝাইয়া দিয়া অবসৃত হইবেন।

25। আমার পুত্র বলিয়া পরিচিত শ্রীযুক্ত নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় যারপরনাই যথেচ্ছাচারী ও কূপথগামী এজন্য ও অন্য অন্য গুরুতর কারণ বশত আমি তাঁহারা সংস্রব ও সম্পর্ক পরিত্যাগ করিয়াছি এই হেতু বশত নির্বন্ধস্থলে তাঁহার নাম পরিতক্ত হইয়াছে এবং এই হেতু বশত তিনি চতুর্বিংশ ধারা নির্দিষ্ট ঋণ পরিশোধ কালে বিদ্যমান থাকিলেও আমার উত্তরাধিকারী বলিয়া পরিগণিত অথবা দ্বাবিংশ ও ত্রয়োবিংশ ধারা অনুসারে এই বিনিয়োগ পত্রের কার্য্যদর্শী নিযুক্ত হইতে পারিবেন না। তিনি চতুর্বিংশ ধারা নির্দিষ্ট ঋণ পরিশোধ কালে বিদ্যমান না থাকিলে যাঁহাদের অধিকার ঘটিত তিনি তৎকালে বিদ্যমান থাকিলেও তাঁহারা চতুর্বিংশ ধরায় লিখিত মত আমার সম্পত্তির অধিকারী হইবেন। 

ইতি 
তাং 18 জ্যৈষ্ঠ 1282 বঙ্গাব্দ, ইংরেজি 31শে মে 1875 সাল।
(স্বাক্ষর) শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মোকাম কলিকাতা।

বিদ্যাসাগরের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী তাঁর ছেলে অর্থাৎ নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির কোনো অংশই পাওয়ার কথা ছিলনা। কিন্তু বাস্তবে ঘটে একদম বিপরীত ঘটনা। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইচ্ছাপত্র করেছিলেন কিন্তু তার ভবিষ্যত কী হয়েছিল ? তা আমাদের অজানা, আর সেই অজানা দিকটিও আমাদের একটু জানা দরকার। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মৃত্যুর আগে থেকেই নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত ছক সাজিয়ে রেখেছিলেন, কারণ মনে রাখতে হবে ইচ্ছাপত্রটি লেখার পর বিদ্যাসাগর মহাশয় 16 বছর জীবিত ছিলেন। 29 জুলাই 1891 সালে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মৃত্যুর পর, তাঁর করা সেই ইচ্ছাপত্রের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে নারায়ণচন্দ্রের পুত্র প্যারীমোহনের দিদিমা সারদা দেবী, এবং তিনি হাইকোর্টেও একটি অভিযোগ পেশ করেন যার সূত্র [ Suit No - 182 of 28th feb 1892 ]

এখানে একটি জিনিস বলে রাখা দরকার, কারণ এই উল্লেখিত মামলার মধ্যে আর একটি মামলা ছিল। হাইকোর্টে যখন বিতর্কিত এই মামলার প্রেক্ষাপটে ইচ্ছাপত্রটিকে খারিজ করার আবেদন করা হয়, হাইকোর্ট তা সাথে সাথে খারিজ না করে ক্ষীরোদনাথ সিংহকে প্রোবেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই সময়ই দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের হয়, যেখানে বলা হয় 25 নং ধারাটি বাতিল করার কথা। এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি ইচ্ছা পত্রের সব ধারা একই রেখে, 25 নং ধারাটির পরিবর্তন করেন, যার ফলে বিদ্যাসাগরের বর্তমনে যে ইচ্ছা তার ছিল, তা তাঁর ইচ্ছেপত্রেও প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তাঁর অবর্তমানে তাঁর ইচ্ছাকে ধূলিসাৎ করে নারায়ণচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন।

এখানেই বোঝা যায় পরবর্তীকালে সেই ইচ্ছাপত্রের বাকি ধারাগুলি সঠিকভাবে মান্যতা পেয়েছিল কি না। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে সুপুত্র নারায়ণ বীরসিংহ গ্রামের ভগবতী বিদ্যালয় বন্ধ করে দিলেন, পরিবর্তে সেই স্কুল বাড়িতেই একটি নতুন বিদ্যালয় খুলে নাম দিলেন ' ঠাকুরদাস ইনস্টিটিউশন ' এর ফলে ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী স্কুলকে আর বৃত্তি দিতে হবে না। এছাড়াও ভাইদের ফাঁকি দেওয়া তার কাছে ছিল জলভাত। লেখা পড়া না শিখলেও, এসব বিদ্যায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের  বইগুলির কপিরাইট নারায়ণচন্দ্র দানপত্র করেন নিজ পুত্র প্যারীমোহনকে। বর্ণপরিচয়ের নব-সংস্করণ প্রকাশ করেন নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন নামে। বিলাসে এবং অপব্যবহারের ফলে নারায়ণচন্দ্র নষ্ট করে ফেলেন সব সম্পত্তি। হয়তো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিদ্যাসাগর মহাশয় এই জিনিসটি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন।


তথ্যসূত্র

আদালতে ছয় মনীষী - বারিদবরণ ঘোষ

বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ - বিনয় ঘোষ

বিদ্যাসাগর : একুশ শতকের চোখে - ( সম্পাদনা ) পল্লব সেনগুপ্ত ও অমিতা চক্রবর্তী

Comments

  1. Replies
    1. ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে পড়ে দেখার জন্য।

      Delete
  2. Replies
    1. ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে পড়ার জন্য।

      Delete
  3. Replies
    1. ধন্যবাদ, সময় নিয়ে পড়ে দেখার জন্য।

      Delete

Post a Comment

If you have any doubt, please let me know.

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে