Posts

কলকাতার জন্মদিন ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

Image
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সত্যি কী কল্লোলিনী তিলোত্তমা কলকাতার 330 তম জন্মদিন আজ! না আমার এমনটা মনে হয় না। জব চার্নকের আগমনের সময় থেকে এতগুলি বছর পেরিয়ে জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে কলকাতা। 1690 সালের 24 অগস্ট এক মেঘলা দিনে কলকাতার মাটিতে পা রেখেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলা জব চার্নক। জব চার্নক সেই দিনটি পালিত হয়ে আসছে কলকাতার জন্মদিন হিসাবে। তবে আমি আজ দিনটি কে কলকাতার জন্মদিনের থেকে জব চার্নকের কলকাতায় আগমনের 330 বছর বলতে পারি। কারণ জব চার্নকের মৃত্যুর 5 বছর পরে সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের 5 জন জমিদারের কাছ থেকে কলকাতার তিনটি গ্রামের প্রজাস্বত্ত্ব কেনে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি 1698 সালের 10 নভেম্বর। তাহলে কলকাতার নির্মাণে জব চার্নকের ভূমিকা কী ? এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। পরবর্তী সময়ে কলকাতা হাইকোর্ট 5 জন ঐতিহাসিকের উপরে ভার দেন, কলকাতার জন্মদিনের গুজব পরীক্ষা করে দেখতে। সেই পাঁচজন ঐতিহাসিক হলেন, অধ্যাপক নিমাই সাধন বোস, অধ্যাপক বরুণ দে, অধ্যাপক প্রদ্বীপ সিনহা অধ্যাপক অরুণকুমার দাসগুপ্ত অধ্যাপক সুশীল চৌধুরী এই বিশিষ্ট ঐতিহাসিকেরা তাঁদের রিপোর্টে বলেন, কলকাতার প্রতি

দুর্গাকাহিনী : একটি প্রাসঙ্গীক আলোচনা - শুভজিৎ দে

Image
" আকাশে বাতাসে ভাসে আগমনীর সুর, সেই সুরে মিলে যায় দূর হতে দূর, " দেবী দুর্গা  স্মৃতির স্মরণি বেয়ে অতীতে গেলে মনে হবে বর্তমনে দুর্গাপূজা তার নব কলেবরে, সাজ সজ্জায়, চিন্তা চেতনায় পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে উৎসবে পরিণত হয়েছে। মন্ডপ সজ্জায় এসেছে থিম, সাযুজ্য রেখে পরিবর্তন এসেছে মূর্তির গঠনেও। একচালার সাবেকি দুর্গা, ও তার পরিবার আজ তিন বা পাঁচ চালায় বিভক্ত নিউক্লিয়ার পরিবারের মতো। তবে দুর্গাপূজার মাহাত্ম বাঙালির কাছে সেই একই আছে, তা সে দেশে হোক, বা বিদেশে, সাবেকি পোষাকে হোক, বা আধুনিক পোষাকে, আর দুর্গাপুজো মানেই কাশফুল, ঢাকের তাল, আগমনীর সুর, সেই সুরে মত্তো হয়ে জেনে নেওয়া যাক অতীতের কিছু কথা। দেবী দুর্গার প্রাচীন মূর্তি মা দুর্গার প্রতি বাঙালির একটি অধিকারবোধ জন্মে গিয়েছে, যদিও এই শরৎকালের দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন রামচন্দ্র, তার রাজত্ব ছিল উত্তর ভারতে, কিন্তু সমগ্র উত্তর ভারতের মানুষ দুর্গাপূজার থেকে দশেরাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেক্ষেত্রে দেবী দুর্গার বাঙালিকরণ কীভাবে ঘটছে তা একটি প্রশ্ন। দেবী দুর্গার প্রাচীন মূর্তি দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে হিন্দুশাস্ত্রে ও ইতি

সুরের জাদুকর ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান - শুভজিৎ দে

Image
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব যার কাছে ধর্ম কোনো দিন প্রাধান্য পায়নি, যিনি মন্দিরে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতেন, যার সানাইয়ের সুর ছাড়া কোনো শুভ বিবাহ সম্ভব নয়, যার কাছে সঙ্গীতই ছিল ধর্ম, আর তিনি হলেন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব, 21 শে মার্চ 1916 সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় সানাই বাদক। ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে এই অমর শিল্পী ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি তৃতীয় যাঁরা ভারতরত্ন পদক পেয়েছেন। তিনি ছিলেন অল্পসংখ্যক গুণীদের মধ্যে একজন যিনি ভারতের চারটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে সম্মানিত হয়েছেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব  সঙ্গীত পরিবেশন করছেন সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার একক কৃতিত্ব ভারতের উচ্চাঙ্গ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের। 1937 সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। 1950 সালের 26শে জানুয়ারি দ

মোহনবাগানের শিল্ড জয় ও রবীন্দ্রনাথ - শুভজিৎ দে

Image
চিত্রঋণ - Wikipedia আই এফ এ শিল্ড জয়ী মোহনবাগান দল হীরালাল মুখার্জি, ভুতি সুকুল, সুধীর চ্যাটার্জি, মনমোহন মুখার্জি, রাজেন সেনগুপ্ত, নীলমাধব ভট্টাচার্য, কানু রায়, হাবুল সরকার, অভিলাশ ঘোষ, বিজয়দাস ভাদুড়ী, শিবদাস ভাদুড়ী (অধিনায়ক) আজ মোহনবাগান ক্লাবের শিল্ড জয়ের 109 তম বছর। এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থেকে এক ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব কে পরাস্ত করে। তবে এখনে বলে রাখা দরকার মোহনবাগানের আগে ইউরোপিয়ান ক্লাবকে হারানোর কৃতিত্ব "শোভাবাজার ক্লাবের" 1892 ট্রেডস কাপ প্রতিযোগীতায় ইস্ট সারে কে হারিয়ে দেয় শোভাবাজার। বাঙালি বুঝতে পারে, ইংরেজকে হারানো সম্ভব। 1911 সালে মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের আগে কোনও বাঙালি ক্লাবের এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু পরবর্তীকালে সবাই মাথা ঠুকেছিলো মোহনবাগানের শ্রেষ্ঠত্বের কাছে। এই শিল্ড জয়ের 100 বছর উপলক্ষে কয়েক বছর আগে, ‘এই সময়’ সংবাদপত্রে “দে গোল গোল” বলে একটি কবিতা ছেপেছিল। অনেকে ভেবেছিল কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের লেখা। আসলে ওটি ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ঝুলন’ কবিতার প্যারডি। যে কবিতার বিখ্যাত লাইন “দে দোল দোল।”  চিত্রঋণ - Wikipedia তবে রবিঠ

লর্ড ক্যানিং ও তাঁর বাড়ির গল্প - শুভজিৎ দে

Image
আমপানের পর ভগ্নপ্রায় বাড়িটির অবস্থা সাথে লর্ড ক্যানিং লর্ড ক্যানিং 1856 থেকে 1862 সাল পর্যন্ত ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল এবং 1858 সালের 1 নভেম্বর থেকে ভারতে প্রথম ভাইসরয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রশাসনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো 1857 সালের সিপাহি বিদ্রোহের সূত্রপাত। লর্ড ক্যানিং বিদ্রোহটি দমন করেন এবং এ ঘটনার পর 1858 সালে পার্লামেন্টারি আইন পাস হয়। রানী ভিক্টোরিয়া প্রকাশ্য ঘোষণা দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার নিজ হাতে গ্রহণ করেন। যারা এ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে যদিও তিনি (ক্যানিং) শাস্তি প্রদান করেন, তবুও তিনি যতদূর সম্ভব ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বাছবিচারহীন প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিহার করেন, এবং এভাবে তিনি ‘ক্ষমাশীল ক্যানিং’ এর উপাধি অর্জন করেন। লর্ড ক্যানিং এই সব কথা বিক্ষিপ্ত ভাবে বাংলার ইতিহাসের পাতায় পাতায় পাওয়া যাবে, তবে আজ বিশেষ কারণে ক্যানিং এর কথা বলা, আর তা হচ্ছে মূলত ক্যানিং টাউনে তার একটি বাড়ির জন্য। দূর থেকে পোর্ট ক্যানিং এর সদর দপ্তর, যা লোকমুখে লর্ড ক্যানিংয়ের বাড়ি 1856 থেকে 1862 এই সময়কা

সমস্যার সূত্রপাতে বিতর্কিত এই কালাপানি - শুভজিৎ দে

Image
বিতর্কিত অঞ্চল চিত্রঋণ - www.bbc.com কালাপানি অঞ্চল ভারত ও নেপালের মধ্যকার বিতর্কিত একটি অঞ্চল যা উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় অবস্থিত বর্তমানে ভারত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অঞ্চলটি হিমালয়ের কালী নদীর অন্যতম প্রধান জলপথ কালাপানি বা শার্দা নদী দ্বারা চিহ্নিত যার উচ্চতা ৩৬০০-৫২০০ মিটার পর্যন্ত। কালাপানি উপত্যকাটির সর্বোচ্চ চূড়া লিপুলেখ পাস যার মধ্য দিয়ে প্রাচীন তীর্থস্থান যাত্রার কৈলাস-মানস সরোবরপথ তৈরি হয়েছে। পথটি উত্তরাখণ্ডের ভুতিয়া গোত্রদের দ্বারা তিব্বতে বাণিজ্য করার অন্যতম সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কালী নদী পশ্চিম দিকে ভারত এবং নেপালকে বিভক্ত করেছে। তবে ভারত দাবী করে, নদীর তীরবর্তী শাখাসমূহ সীমানায় অন্তর্ভুক্ত নয়। সীমানাটি জলবিভাজিকার সাথেই অবস্থিত। ভারতের এই অবস্থানটি ব্রিটিশ ভারতের সময় অনুমানিক ১৮৬৫ থেকে চলে আসছে। এই অঞ্চলের কাছেই টিঙ্কার পাস নামে নেপালের আরো একটি পাস রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ভারত লিপুলেখ পাসটি বন্ধ করে দিলে অধিকাংশ বাণিজ্য টিঙ্কার পাস দিয়ে সংগঠিত হত।১৯৯৭ সালে যখন ভারত ও চীন উভয়ে লিপুলেখ পাসটি উন্মুক্ত করে দিতে সম্মত হয়

কেসোরাম কটন মিল - শুভজিৎ দে

Image
কেসোরাম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চিত্রঋণ - অনুসন্ধান কতৃক সংরক্ষিত যখন সারা বিশ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার বিস্তার ও তার প্রভাব দেখে হতবাক ঠিক তখনই কেসোরাম কটন মিল 1919 সালে প্রতিষ্ঠা হয় এদেশে, তাও একেবারে এই কলকাতার সন্নিকটে মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে। মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলের নাম বস্ত্র রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ প্রসিদ্ধ। আর সেই মেটিয়াবুরুজ নির্ভর দেশীয় বস্ত্র শিল্পের প্রাণ সঞ্চার করেছিল সেই সময়ই, আর সেই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কেসোরাম কটন মিল। সুদূর ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার নানারকম কারণ ছিল, তার মধ্যে একটি বড় কারণ ছিল পুঁজির জোগান। ভারতের ক্ষেত্রে তা একটু অন্যরকম ছিল, এই সব প্রতিষ্ঠান ভারতে এমনি এমনি হয়নি, এর অন্তরালে থেকেছে একটি বিপ্লব, একটি প্রতিবাদ, আর এই বিপ্লব ও প্রতিবাদ হচ্ছে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন। যার জন্য এদেশে গড়ে উঠেছিল নানান স্বদেশী প্রতিষ্ঠান, আর এই দেশীয় শিল্পায়ন প্রেক্ষাপটকে শিল্পবিপ্লব বলাই চলে, তবে বলে রাখা উচিত শিল্প বিপ্লবের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Industrial Revolution. এই শব্দটি সর্ব প্রথম ব্যাবহার করেন ইংরেজ ঐতিহাসিক Arnold Tynbee. ১৮৮০ সালে তিনি তাঁর লেখা "L