Posts

থমাস লিওন ও কলকাতার প্রথম তিনতলা বাড়ি - শুভজিৎ দে

Image
দীর্ঘ দিনের ইতিহাস নিয়ে মধ্য কলকাতায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক সেই লালবাড়িটি। কলকাতাকে ‘city of joy’ বা ‘city of culture’ ও বলা হয় কিন্তু তার সাথে একে ‘city of palace’ ও বলা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ আমলে চৌরঙ্গিতে অনেক বড় বড় বাড়ির থাকার জন্য এরকম নামকরণ। কিন্তু আপনি কি জানেন কলকাতার প্রথম তিনতলা বাড়ি কোনটি? ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মহাকরণ হয়ে ওঠা রাইটার্স বিল্ডিং তার পুরনো ইটের আনাচেকানাচে বয়ে নিয়ে চলছে পুরনো তিলোত্তমার নানা রক্তাক্ত ও ঠাণ্ডা মাথায় করা ভারতীয়দের পরাধীন করে রাখার নানান ইতিহাস। যখন যে ক্ষমতায় এসেছে রেখে গিয়েছে তার নিজেস্ব শাসনতন্ত্রের ছাপ। বর্তমানে ব্রিটিশ নির্মিত এই লালরঙা পুরনো বাড়িটি নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা হলেও আজও তার শাস্ত্রীয় ইউরোপীয় স্থাপত্যিক ধারা মনে করায় স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনাত্তোর এই দুই প্রজন্মের ইতিহাসের কথা। মহাকরণ ১৭৫৬ সালে কলকাতা আক্রমণ করল সিরাজউদ্দৌলা। ইংরেজদের সাথে এই আক্রমণে ধূলিসাৎ হয়ে গেল সেইসময় এর বিখ্যাত চার্চ সেন্ট এন্স । কিন্তু যুদ্ধের পর ইংরেজ সরকার আর সেই চার্চটি পুনর্নির্মাণ করল না বরং সে

যার আদলে তৈরী রাণী রাসমণির স্বপ্নের দক্ষিণেশ্বর মন্দির - শুভজিৎ দে

Image
টালিগঞ্জ দক্ষিণ কলকাতার একটি অঞ্চল। এর উত্তরসীমায় পূর্ব রেলওয়ের দক্ষিণ শহরতলি লাইন, পূর্বে লেক গার্ডেন্স ও গলফ গ্রিন দক্ষিণে পশ্চিম পুটিয়ারি ও পূর্ব পুটিয়ারি এবং পশ্চিমে নিউ আলিপুরও বেহালা অবস্থিত। এই টালিগঞ্জ নামেরও আছে এক ইতিহাস। প্রথমে জানা যাক তা, কলকাতার দ্য ফার্দিনান্দ দে লেসপ্স মেজর উইলিয়াম টলির নামে টালিগঞ্জের নামকরণ হয়। এই টলি সাহেবই 1775-76 সালে কলকাতার সঙ্গে অসম ও পূর্ববঙ্গের যোগসূত্র হিসাবে টালির নালা খনন ও ড্রেজ করার কাজ শুরু করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই টালির নালাটিও টলি সাহেবের নামেই নামাঙ্কিত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টলি সাহেবকে এই নালা দিয়ে যাতায়াতকারী নৌকাগুলি থেকে টোল আদায় ও নালার ধারে একটি গঞ্জ বা বাজার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল। (রাধাগোবিন্দজীর মন্দির) 1776 সালে তার এই স্বপ্নের প্রকল্পটি সম্পন্ন হয় এবং পরের বছরেই এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই এই সতেরো মাইল দীর্ঘ খালটি টালির নালা (ইংরেজিতে টলি’জ ক্যানেল) ও তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি টালিগঞ্জ নামে পরিচিত হয়। নালার পূর্ব পাড়ে বর্তমান টালিগঞ্জ রোডের কাছেই কোথাও এই বাজারটি অবস্থ

বসন্ত এসেগেছে : ফিরে দেখা দোলপূর্ণিমার বিভিন্ন মিথ - শুভজিৎ দে

Image
আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে.. ঠিক তা-ই। অনেকের কাছেই বসন্ত হলো প্রেমের ঋতু। প্রেমের বার্তা নিয়েই যেন আগমন ঘটে ঋতুরাজের। পশ্চিমা সংস্কৃতির দেখাদেখি আমাদের দেশেও ভ্যালেন্টাইনস ডে'র প্রচলন ঘটেছে বেশ কয়েক যুগ ধরেই, কিন্তু আকাশে-বাতাসে, হৃদয়ে-মননে প্রেমের আলোড়ন তুলতে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের বসন্ত বরণও কোনো অংশে কম নয়। শীতের আবেশ কাটিয়ে প্রকৃতির নতুনরুপে জেগে উঠা। চারিদিকে গাছের নতুন পাতা, পলাশ-শিমুল গাছে রঙের খেলা, কোকিলের কুহু কুহু ডাকে মানবমনে লাগে দোলা। আর এসবই হলে বুঝতে হবে বসন্ত এসে গেছে। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতেই প্রকৃতি ও জীব এমনভাবে জানান দেয়। ফাল্গুনের হাত ধরেই বসন্তের আগমন। পয়লা ফাল্গুন বা পহেলা ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিন ও বসন্তের প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব পালিত হয়। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই বসন্ত উৎসব কিভাবে এলো? বসন্ত উৎসবকে দোলযাত্রাও বলা হয়। দোলযাত্রা মূলত একটি হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব বলেই বিবেচিত। ইংরেজরা প্রথম দিকে এ

তিলোত্তমা শহরের চার্চনামা - শুভজিৎ দে

Image
কলকাতা শহরে খ্রিষ্টানদের উপাসনার জন্যে প্রথম যে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল তা কোনও গির্জা নয়, ছোট একটা উপাসনাগৃহ৷ এখনকার জিপিও-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অঞ্চলে ছিল ইংরেজদের প্রথম কুঠি ও দুর্গ৷ তার মধ্যেই ছিল সেই উপাসনাগৃহ৷ তার পর বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছে আর্মেনিয়ান চার্চ (১৭০৭), সেন্ট অ্যান’স চার্চ (১৭০৯), মিশন চার্চ (১৭৭০), সেন্ট জন্ স্ চার্চ (১৭৮৭), পর্তুগিজ চার্চ (১৭৯৯), সেন্ট অ্যান্ড্রূজ চার্চ (১৮১৮), সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল (১৮৪৭), সেন্ট জেমস চার্চ (১৮৬৮), সেন্ট মেরিজ চার্চ (১৮৮৭), গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ (১৯২৫) আরও অনেক গির্জা৷ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ কলকাতায় আজও নজর কাড়ে বেশ কিছু গির্জা। বড়দিনের আগে থেকেই এগুলি আলোকমালায় সেজে উদাসী শীতের মরসুমে আবারও শহরে উৎসবের মেজাজ ফিরিয়ে আনে। কলকাতায় বড়দিন উৎসব ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে কথা সঠিক ভাবে জানা না গেলেও, অনুমান করা হয় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা এ দেশে আসার পর থেকেই উপাসনার জন্য তৈরি হয়েছিল প্রার্থনাকক্ষ। তবে ইংরেজরা এ দেশে আসার অনেক আগেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান ও পর্তুগিজরা বাংলায় এসেছিল। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ফিরিঙ্গি বণিকদের

ন' দশক পার, এখনও Not-Out : হাওড়ার বড়ঘড়ি - শুভজিৎ দে

Image
একাধিক সাহিত্যে , বহু বাংলা সিনেমায় এই বড় ঘড়িকে দেখানো হয়েছে। আসলে বাঙালির জীবনে এই ঘড়ি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। অসংখ্য গল্প আর নস্টালজিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বড় ঘড়িকে ঘিরে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তো বড়ঘড়ি বেশ জড়িয়ে আছে। হবু স্ত্রী এর সঙ্গে দেখা করার জায়গা ছিল তো এই বড় ঘড়ি। আসলে বড় ঘড়ি যে, আস্তে আস্তে আমাদের জীবনে ল্যান্ডমার্কের থেকেও অনেক বড় নস্টালজিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুবার আমি নিজেও যখন কবাডি খেলার জন্য বাইরে যেতাম, তখন ফোন না থাকায়, আগের দিন মাঠে অনুশীলন শেষে সতীর্থ সবাইকে বলে দিতাম এখানে অপেক্ষা করতে। ফোন ব্যবহার শুরু করলেও কলেজের বিভাগীয় ভ্রমণের জন্য সব জুনিয়র দের এখানেই অপেক্ষা করতে বলি, এই জায়গাটা থেকেই যেন এই অঞ্চলের জি.পি.এস. সিস্টেম শুরু হয়। বছর কয়েক আগে 2010 নাগাদ একবার কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও দ্রুত তা মেরামত করা হয়। ঘড়িটি স্থাপনের 94 বছর পরেও এতদিন ধরে অক্লান্তভাবে সঠিক সময় দিয়ে চলেছে আজও। দেখা যায়, এখনও অনেক যাত্রী নিজেদের ঘড়ির সময় বড় ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে নেন। পাশাপাশি 9 দশকের বেশি সময় ধরে অসংখ্য মানুষের মিলনস্থল হিসেবেও স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হ

বাংলার স্থাপত্যকীর্তি : চালা মন্দির শৈলি - শুভজিৎ দে

Image
প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে সৌধ নির্মাণের প্রথা অব্যাহত রয়েছে। নগরায়ণের অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে উপাসনার ক্ষেত্রেও স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কাল থেকে নির্মিত অনেক সৌধ প্রাকৃতিক কারণে কিংবা বিরুদ্ধবাদীদের আঘাতে বর্তমানে নিশ্চিহ্ন প্রায়। যদিও বিরুদ্ধমতাবলম্বীদের আচরণে বৈপরীত্যের নজির অতীতেও যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমন আছে। যেমন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের বিষ্ণুমন্দির নির্মাণে অকুণ্ঠ সহয়তা; হিন্দু ও মুসলিম শাসক কর্তৃক মঠ-মন্দির, দরগা নির্মাণে সহয়তাদান ইত্যাদি। বাংলার চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সোনালি ফসলের ক্ষেত্র অথবা উঁচুনিচু অনুর্বর প্রান্তর ও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বনভূমি। প্রবাহমান নদী-নালার জলধারায় সঞ্জীবিত ভূভাগের স্থানে স্থানে আজও চোখে পড়ে নানান ধর্মীয় ইমারত। কালের প্রবাহে অযত্ন ও কংক্রিটের জঙ্গলে কর্মব্যস্ত মানুষ ডুব দেওয়ায় সেসব স্থাপত্যসৌধের অধিকাংশ জীর্ণ হয়ে পড়লেও যেগুলি টিকে আছে, তার থেকে অনুমান করা যায় প্রাচীন বাংলার জীবনচর্চা ও শৈল্পিকবোধের পরিচয়। পরবর্তীকালে মূলত খ্রিস্টিয় পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলায় নবপর্যায়ে মন্দির নির্মাণের সূত্রপাত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতা বিংশ শতক

কালাপানির অন্ধকার থেকে "শহীদ" ও "স্বরাজ" দ্বীপপুঞ্জ - শুভজিৎ দে

কালাপানি অঞ্চল ভারত ও নেপালের মধ্যকার বিতর্কিত একটি অঞ্চল যা উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় অবস্থিত বর্তমানে ভারত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অঞ্চলটি হিমালয়ের কালী নদীর অন্যতম প্রধান জলপথ কালাপানি বা শার্দা নদী দ্বারা চিহ্নিত যার উচ্চতা ৩৬০০-৫২০০ মিটার পর্যন্ত। কালাপানি উপত্যকাটির সর্বোচ্চ চূড়া লিপুলেখ পাস যার মধ্য দিয়ে প্রাচীন তীর্থস্থান যাত্রার কৈলাস-মানস সরোবরপথ তৈরি হয়েছে। পথটি উত্তরাখণ্ডের ভুতিয়া গোত্রদের দ্বারা তিব্বতে বাণিজ্য করার অন্যতম সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কালী নদী পশ্চিম দিকে ভারত এবং নেপালকে বিভক্ত করেছে। তবে ভারত দাবী করে, নদীর তীরবর্তী শাখাসমূহ সীমানায় অন্তর্ভুক্ত নয়। সীমানাটি জলবিভাজিকার সাথেই অবস্থিত। ভারতের এই অবস্থানটি ব্রিটিশ ভারতের সময় অনুমানিক ১৮৬৫ থেকে চলে আসছে। এই অঞ্চলের কাছেই টিঙ্কার পাস নামে নেপালের আরো একটি পাস রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ভারত লিপুলেখ পাসটি বন্ধ করে দিলে অধিকাংশ বাণিজ্য টিঙ্কার পাস দিয়ে সংগঠিত হত।১৯৯৭ সালে যখন ভারত ও চীন উভয়ে লিপুলেখ পাসটি উন্মুক্ত করে দিতে সম্মত হয় তখন নেপাল কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধীতা শুরু