বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 126 তম জন্মবার্ষিকী - শুভজিৎ দে
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম লেখক ও ঔপ্যন্যাসিক। 1894 সালে আজকের দিনেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন কল্যানীর কাছে মুরারীপুরে মামার বাড়িতে । তাঁর বাবার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মায়ের নাম-মৃণালিনী দেবী। আজ তার 126 তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।
তাঁর লেখা বিখ্যাত একটি উক্তি “সংসার যে কি ভয়ানক জায়গা, দুঃখে-কষ্টে না পড়লে বোঝা যায় না।” এই সহজ কথার মাধ্যমে তিনি সংসারের মূলকথাটি তুলে ধরলেন। কথাসাহিত্যে বাঙালীর আকাশে হাজার তারার ভিড় সেই তারারা সকলেই নিজের জ্যোতিতে ভাস্বর। রবীন্দ্রসূর্য যখন সায়াহ্নে তখন বাংলার সাহিত্য আকাশে নিজের অনন্যতায় আগমন হয় বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর লেখনী যেমন শিশুমনকে আনন্দ দেয় , তেমনই প্রাপ্তবয়স্ক মনকেও ভাবায়। তবে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পাঠকদের মধ্যে কিশোরদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তাঁর প্রকৃতি প্রেম, তাঁর গল্পের গা ছমছমে ভাব আমাদের দেয় মনের আরাম। তাঁর সাহিত্য সম্ভার গোটা দুনিয়াকে মুগ্ধ করেছে। তাঁর সাহিত্যের সম্ভারে যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় তা আমাদের অবাক করে, তেমনই মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত।
স্ত্রীর মৃত্যুশোক নিয়ে ভবঘুরের মতো জীবন কাটাতে থাকেন। সে সময় 1921 সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘উপক্ষিতা’ গল্প রচনার মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা হয়। 1925 সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘পথের পাঁচালী’ লেখা শুরু করেন। 1928 সালে তিনি সেই লেখা শেষ করেন। সেই রচনার মধ্যে তাঁর জীবনের বহু ঘটনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। গোরক্ষিনী সভার প্রচারক হিসেবে তিনি ত্রিপুরা, আরাকান প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণ করেন। তাঁর পরবর্তী রচনা অপরাজিত যা পথের পাঁচালীর দ্বিতীয় অংশ। এই দুই উপন্যাস তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসূত্রে ভারতবর্ষের প্রচুর জায়গাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে তিনি গৃহশিক্ষকতার কাজ করেন। পরবর্তীকালে খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলেও পড়িয়েছেন। শেষে গোপালনগর হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁর জীবনের বেশির ভাগটাই কেটেছে ছাত্রদেরফ মাঝে তাই তাঁর গল্পে কৈশোরদের পছন্দ প্রাধান্য পায়। তাঁর লেখা চাঁদের পাহাড়, আরণ্যক প্রভৃতি উপন্যাসগুলি আজও কিশোরদেরকে স্বপ্নিল আনন্দের অবকাশ।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের জীবন আমাদেরকে অবাক করে। সারা জীবন তিনি থেকেছেন ভারতবর্ষেই, তবু তাঁর চাঁদের পাহাড় রচনায় আমরা বর্ণনা পাই আফ্রিকার জঙ্গলের, সেই বর্ণনা এতটাই নিখুত যে আমাদের সামনে আফ্রিকার জঙ্গল ভেসে ওঠে। শুধুমাত্র বইতে পড়া জায়গাকে নিজের লেখাতে ফুটিয়ে তোলার মতো কষ্টসাধ্য কাজ তিনি করেছেন অনায়াসে। তাঁর জীবনের চরাই উতরাই তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। তাঁর প্রকৃতির কাছে যাওয়ার ইচ্ছে, জীবনে নতুন জায়গা খোঁজার ইচ্ছে প্রকাশ পায় শঙ্করের চরিত্রে। তাঁর লেখা আরণ্যক সত্যজিৎ রায়ের প্রিয় রচনা।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনীকে শুধুমাত্র কিশোরদের লেখক বলা যেমন ভুল, তেমনই শুধুমাত্র বড়োদের লেখক বলাও অন্যায় হবে। তাঁর লেখা আজও আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। তাঁর লেখারা আজও জীবন্ত এবং প্রাসঙ্গিক। আজও বাঙালিদের স্বপ্নের চরিত্রের নাম শঙ্কর। আজও কাশবন আর রেলগাড়ি আমাদের কাছে অপু দুর্গাকে জীবন্ত করে রেখেছে। বাংলা সাহিত্যে তাঁর নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করতে তিনি সফল হয়েছিলেন । তাঁর কলম তাঁকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অনেকেই মনে করেন অপু ট্রিলজি আসলে তাঁরই আত্মকথা। এই কথাসাহিত্যিক 1950 সালের 1 নভেম্বর বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর কিছু বিখ্যাত কাজ
উপন্যাস
- পথের পাঁচালি (1929)
- অপরাজিত (1ম ও 2য় খণ্ড 1932)
- দৃষ্টিপ্রদীপ (1935)
- আরণ্যক (1939)
- আদর্শ হিন্দু হোটেল (1940)
- বিপিনের সংসার (1941)
- দুই বাড়ি (1941)
- অনুবর্তন (1942)
- দেবযান(1944)
- কেদার রাজা (1945)
- অথৈজল (1947)
- ইামতি(1950)
- অশনি সংকেত (অসমাপ্ত)
- দম্পতি (1952)
ছোটো গল্প
- মেঘমল্লার (1931)
- যাত্রাবাদল (1934)
- জন্ম ও মৃত্যু (1937)
- কিন্নর দল (1938)
- বেণীগির ফুলবাড়ি (1941)
- নবাগত (1944)
- তালনবমী (1944)
- উপলখন্ড (1945)
- বিধুমাস্টার (1945)
- ক্ষণভঙ্গুর (1945)
- অসাধারণ (1946)
- মুখোশ ও মুখশ্রী (1947)
- জ্যোতিরিঙ্গণ (1949)
- কুশল পাহাড়ী (1950)
- সুলোচনা (1963)
তাঁর যে সমস্ত লেখা নিয়ে সিনেমা হয়েছে
- পথের পাঁচালি(1955)
- অপরাজিত (1956)
- আদর্শ হিন্দু হোটেল(1957)
- অপু সংসার (1959)
- বাক্স বদল (1970)
- নিশি পদ্ম (1970),
- অমর প্রেম (1971)
- নিমন্ত্রণ (1971)
- অশণী সংকেত(1973)
- ফুলেশ্বরী(1974)
- আলো (2003)
- চাঁদের পাহাড় (2013)
তথ্যসূত্র
- বিভিন্ন বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় - রাহুল পাঠক
- চিত্রঋণ - Wikipedia
👍
ReplyDelete