জন্ম নিলেন দেবতা : হাইকোটেশ্বর - শুভজিৎ দে

ট্রেনযাত্রায় দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে চান তবে আপনার জন্য আছেন লাইনেশ্বর (কাঁকুরগাছির), হিন্দমোটরে কিছু বেকারযুবক শিবমন্দির নির্মাণ করার পরই তারা চাকরি পান, সেই থেকে সেই শিব ঠাকুরের নাম হয় বেকারেশ্বর, মামলা-মোকদ্দমা থেকে রেহাই পেতে চান ? তবে দেখা করুন হাইকোর্ট এলাকায় চেম্বার খুলেছেন হাইকোটেশ্বর,   কলেজ পড়ুয়াদের সাপ্লির হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য এই কলকাতায় আছেন স্বয়ং গ্রাজুয়েটেশ্বর, ও কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ এলাকায় মানুষের চিন্তা দূর করার জন্য আছেন চিন্তানিবারণেরশ্বর, জানি না আর কোথায় কে আছেন !

চিত্রঋণ - বৈদ্যুতিন গনমাধ্যম

চলুন উল্লিখিত এই পাঁচবন্ধুর এক বন্ধুর কথা আজ জানা যাক, আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি হাইকোটেশ্বর মহাদেবকে নিয়ে। কথায় আছে, বাঙাল কে হাইকোর্ট দেখাচ্ছ ? একদমই ঠিক বাঙালীদের হাইকোর্ট চেনাবার প্রয়োজন পরে না, তবে বিষয়টি যদি হাইকোটেশ্বরকে নিয়ে হয়ে থাকে তবে তাঁকে চেনাবার দরকার আছে অবশ্যই। এতোক্ষণে বোঝাই যাচ্ছে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় যিনি তাঁর নিবাস হাইকোর্ট এলাকাতেই। 

কলকাতা হাইকোর্ট

এই হাইকোর্ট ভবনটি নির্মিত হয়েছে 1872 সালে, এখন যেখানে হাইকোর্ট আগে তার একাংশ ছিল সুপ্রিম কোর্ট, তার প্রথম ও প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পে এখনও এই শহরে ঘুমিয়ে আছেন South Park Street Cemetery তে। এই হাইকোর্ট ভবনের নকশা করে দিয়েছিলেন ওয়াল্টার গ্রাবভলি সাহেব। 


স্যার এলিজা ইম্পে

জনশ্রুতি আছে, প্রায় একশো বছরের কিছু আগে ওরিশা থেকে আগত এক জনৈক ব্যক্তি কোর্ট চত্ত্বরে হটাৎ খুঁজে পান একটি গাছতলায় এক প্রস্তরখণ্ড, তিনি মানসিক করেন তিনি যাতে মামলায় জয়লাভ করেন এবং তিনি কোর্টের উদ্দেশ্য যান, এবং ভাগ্যক্রমে তিনি মামলাও জিতে যান, তার বিশ্বাস জন্মায় সেই প্রস্তরখণ্ডটি তার প্রার্থনা শুনেছেন, আর এমন ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আলোর গতিবেগের থেকেও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পরে। আর এই ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই পরে সেই প্রস্তরখণ্ডটির নাম হয় হাইকোটেশ্বর মহাদেব। তবে তাঁর বাসভবন অর্থাৎ মন্দিরটি নির্মাণ হয় 1956 নাগাদ। হাইকোটেশ্বরের জন্মকাহিনীর সাথে বাংলা সাহিত্যের পাঠক এতক্ষনে মিল পেয়ে গেছেন শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা ' দেবতার জন্ম ' নামক গল্প থেকে, আবার সিনেমাপ্রেমী পাঠক মিলে খুঁজে পাবেন PK সিনেমার একটি চর্চিত দৃশ্যের সাথে।


হাইকোটেশ্বর মন্দির চিত্রঋণ - ইন্টারনেট

সাহিত্যে হাইকোটেশ্বর এর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটান যিনি তাঁর নাম শংকর। তিনি লিখছেন " আইন পাড়ায় একজন হাইকোটেশ্বর ছিলেন, কিন্তু তাঁর দাপট তেমন নয়, তিনি বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের কাছ থেকেই আগাম পূজা নিতে আপত্তি করতেন না।" উকিল-ব্যারিস্টার, জর্জ-এটর্নিতে হাইকোর্ট চত্ত্বর ভরা দিনের বেলা একেবারে জমজমাট এলাকা, কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই সেই  জমজমাট এলাকা একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কিন্তু তাতে ছেদ পড়েনা হাইকোটেশ্বর এর পুজোয়। দিনে দুইবার তার পুজো হয়, সকালে ও সন্ধ্যাতে। আইন ব্যবসায়ীরা তো আছেনই, সাথে বাদী-বিবাদী পক্ষ'ও যারা রায় বেরোবার আগে এখানে এসে মাথা ঠুকে যান তারাও, আর তাই আইনমাফিক হাইকোটেশ্বর এর ইনকাম ও হয় যথেষ্ট। এই হাইকোটেশ্বর এর মাথার ওপর এক সাদা পাথর ফলকে লেখা 'ওম হাইকোটেশ্বরনাথ মহাদেব' এবং তা বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দি তিন ভাষাতেই।




মামলা-মোকদ্দমায় আপনার নাম উঠুক বা না উঠুক, যদি এই লক ডাউন শেষে যাবার ইচ্ছা হয় তবে ঢু'মেরে  আসতে পারেন কিরণশঙ্কর রায় রোডে অবস্থিত হাইকোটেশ্বর মহাদেবের এই মন্দির থেকে, তবে দেখবেন যে ভাবে দিন যাচ্ছে, তাতে একশ্রেনীর মানুষের মধ্যে মহামারী উপেক্ষা ধর্মীয় বিশ্বাস যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে এমন হতেই পারে, এই কলকাতাতেই কোরোনানিবারণেশ্বর লকডাউননিবারণেশ্বর নামে দুই ঈশ্বরের জন্ম হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না ! কারণ শিবরাম বাবু তাঁর "দেবতার জন্ম" লেখায় খুব সুন্দর ভাবে বলে গেছেন কী ভাবে দেবতার জন্ম হয়েছিল। মাথা ঘুরছে তো ! ঘুরবেই, তাই সাবধানে থাকুন, বাড়িতে থাকুন। সুস্থ থাকুন।



এই প্রতিবেদনটি ব্লগে ও গল্প কুটিরের পেজে (https://golpokutir.in/know-the-facts-about-highcourteshwar-mahadev/ ) প্রকাশিত (19 & 20শে May, 2021) হওয়ার  একদিন পর অর্থাৎ 21শে May, 2021. ABP NEWS এ এই খবর প্রচারিত হয়, "কোয়েম্বাতুরে কোরোনা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে " এবং উপরের এই ছবিটি সেই কোরোনা দেবীর।



চিত্রঋণ - বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম

তথ্যসূত্র - বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম

Comments

Post a Comment

If you have any doubt, please let me know.

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে