শৌখিনতা ও ইতিহাসের আড়ালে গ্যালিফ স্ট্রিট - শুভজিৎ দে

চিত্রঋণ - Instagram

কলকাতা বাংলার ষষ্ঠতম রাজধানী। বর্তমানে এই শহর প্রাসাদনগরী, কখনবা City of JOY এমন নানা অভিধায় ভূষিত হয়ে থাকে, বর্তমানের কলকাতা জোব চার্নকের আমলের শিয়ালদহে ঐতিহাসিক বৈঠকখানায় গাছতলায় বসে হুঁকো খাওয়ার কলিকাতা আর নয়। বর্তমানে কলকাতার অনেক রাস্তা ও অলিগলি জন্মছে সেই সব রাস্তার অনেক গুলির নামের সাথে জুড়ে রয়েছে ইতিহাস ও কিছু প্রচলিত গল্প, গল্প কেন বললাম, তার কারণ অনেক ঘটনার ঐতিহাসিক সত্যতা এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি তাই। যাই হোক তেমনই কিছু রাস্তা আমার এই লেখনী পর্বের বিষয়, আজ যে রাস্তা নিয়ে আলোচনা করছি তা হয়তো অনেকেরই জানা, যাদের পোষ্য বা বাহারি ফুল, গাছ দিয়ে বাড়ি সাজাবার নেশা আছে তারা একবার এখানে গেছেন নিশ্চই। আর এই রাস্তাটি হচ্ছে গ্যালিফ স্ট্রিট।


চিত্রঋণ - Instagram

গ্যালিফ স্ট্রিট এই রাস্তাটি পশ্চিম দিকে পেরিন পয়েন্ট (বর্তমানে গঙ্গার ওপরে চিৎপুরের ঝুলন্ত ব্রিজ) থেকে শ্যামবাজার ব্রিজ (যেটাকে এখন দমদম ব্রিজ বলা হয়) পুবে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ক্রসিং পর্যন্ত। এই রাস্তাটি বাগবাজার খাল বরাবর চলেছে। এই খালটি 1824 সালে খনন করা হয়। স্যার গ্যালিফ ছিলেন কলকাতার কালেক্টর ও কমিশনার এবং খালটির পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে এই রাস্তাটি।


চিত্রঋণ - Instagram

তখন সময়টা 1756, যখন নবাব সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করেন, তাঁর সেনাপতি মীরজাফর বরানগর, কাশীপুর, চিৎপুর এবং টালায় তাবু খাটিয়ে কলকাতার গভর্নর হলওয়েল-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। হলওয়েল সাহেবও তাঁর সৈন্যদলকে নিয়ে বাগবাজারের দিকে প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। সেই যুদ্ধে মীরজাফর পরাজিত হন এবং দমদমের দিকে ফিরে যান। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় চার(4) পাঁচটি(5) বন্দুক ফেলে যান, কিন্তু তিনি এমন কাজ কেন করেন তা জানা যায় না, বন্দুকগুলি বাগবাজারে খালের দক্ষিণ দিকে গ্যালিফ স্ট্রিটের নিচে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়, আর কেইবা তা পুঁতে রাখে এটিও একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এগুলি পরে আর উদ্ধার হয়নি এখান থেকে।


চিত্রঋণ - শুভজিৎ দে (ব্যক্তিগত)

গ্যালিফ স্ট্রিট ও আর.জি. কর রোডের সংযোগস্থলে নতুন দমদম ব্রিজের নীচে যখন বাগবাজার খালের মাটি খোঁড়া হয় তখন দুটি বড় বন্দুক পাওয়া যায়। একটি ছিল দৈর্ঘ্যে 9 ফুট 8 ইঞ্চি অন্যটি 8 ফুট 9 ইঞ্চি। প্রথমটির মাজেল ছিল 4ই ইঞ্চি ও পরেরটি 4 ইঞ্চির। কিন্তু এই বন্দুকগুলি কাদের – ইংরেজদের না নবাবের তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। এই নিয়ে লোকমুখে নানা গল্প চালু আছে।


চিত্রঋণ - Instagram

এতো গেল ইতিহাস, তবে এ ছাড়াও গ্যালিফ স্ট্রিট অন্য ভাবেও পরিচিত এই শহরের শৌখিন মানুষের কাছে, স্থান সঙ্কুলানের অভাবে হাতিবাগানের সেই বিখ্যাত ‘পাখির হাট’ একসময় উঠে এসেছিলো বাগবাজার সংলগ্ন এই গ্যালিফ স্ট্রিটে। সে প্রায় আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। জায়গা বদলেছে, বদলেছেন মানুষজনও, কিন্তু ‘পাখির হাট’ তার ভোল বদলে ফেলেনি। আজও একইরকম ঐতিহ্য বহন করে এগিয়ে চলেছে বেচাকেনা, দরদাম, কখনো জমাটি আড্ডা, আবার কখনো বা চিরকালীন বন্ধুত্ব। এখানে গেলে দেখতে পাবেন নানা রকমের খড়গোশ, কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ এবং বাহারি ফুল ও বিভিন্ন বানসাই গাছ আছেই, তবে আপনি যদি পোষ্য সম্পর্কে সমঝদারদের দলে না পড়েন তবে আপনি ঠোকেও যেতে পারেন, রবিবার করে বসে এই মার্কেট, লকডাউন শেষে একবার ঢু মারতেই পারেন, কোনো পোষ্য কিনুন বা নাই কিনুন দেখতে কিন্তু তাদের দারুণ লাগে।

ভিডিও সৌজন্যে - Instagram


চিত্রঋণ - Instagram
ভিডিও সৌজন্যে - Instagram
তথ্যসূত্র - ইন্টারনেট

Comments

Post a Comment

If you have any doubt, please let me know.

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে