" মহালয়া অনুষ্ঠানটি " একবার নয়, দুইবার হয় - শুভজিৎ দে
তবে, মহালয়ার এই দিনটি দুর্গাপুজোর আরম্ভ বলেই আজকের ফেস্টিভ্যাল মুখি বাঙালি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, হবে নাইবা কেন! মহালয়ার দিন থেকেই এখন পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যায়, ভীড়ে ঠাসাঠাসি হয় রাজপথে। কিন্তু হিন্দু ধর্মানুযায়ী, তার কোনও ভিত্তি নেই। সম্ভবত আকাশবাণী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ-বাণীকুমারের গীতি-আলেখ্যটি চালানোর ফলেই এমন ধারণার সূত্রপাত। মনে রাখা দরকার, আকাশবাণীর অনুষ্ঠানটির নাম কিন্তু 'মহালয়া' নয়, তার নাম 'মহিষাসুরমর্দিনী'। অনুষ্ঠানটি এখনও মহালয়ার দিন সম্প্রচারিত হলেও শুরুতে তা সম্প্রচারিত হতো ষষ্ঠীর ভোরেই।
কাজেই, সামগ্রিক ভাবে এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ায় ইদানীং মহালয়া থেকেই ঢল নামে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছাবার্তার। অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মূল বিষয়টি উত্থাপন করেও অনেকে সচেতন করতে চাইছেন। তাই আজ অনেক দিন পর আবার লিখলাম, তাও মহালয়া নিয়ে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, মহালয়া অনুষ্ঠানটি কিন্তু দুইবার সম্প্রচারিত হয় এবং তা আলাদা আলাদা শিল্পীর, না মহিষাসুরমর্দিনী দুইবার নয়, মহালয়ার দিন প্রবাদ প্রতিম শিল্পী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী এবং ষষ্ঠীর দিন মহানায়ক উত্তমকুমারের কণ্ঠে দেবীং দুর্গতিহারিণীম। আর এমন ঘটনা কেন ঘটেছে আজ তা আপনাদের বলা, যদিও মহালয়া বলতেই আমাদের যা মনে পড়ে তা হচ্ছে -
আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর;ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন। তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন। আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহালয়া'
মহালয়ার দিন কাকভোরে রেডিওতে চলা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহালয়া' শুনতে শুনতেই শুরু হয় বাঙালির দুর্গাপুজো, এখন যদিও ট্যাটু হাতে হাসতে হাসতে বিভিন্ন মহালয়ার শুটিং চলে বিনোদন ও টি.আর.পি. এর জন্য। যাক সেই সব কথা, মহালয়ার দিন তখনই যেন বাঙালির মনে ঢাকে কাঠি পড়ে। তবে একবার এই রীতিতেই ব্যাঘাত ঘটেছিল। আর তাতেই তীব্র ক্ষোভ জমেছিল বাঙালির মনে। কি হয়েছিল তা হয়তো এই প্রজন্মের অনেকেই জানে না, তারা এও জানেনা যে প্রতি বছর মহাষষ্ঠীর দিন সকাল পাঁচটায় যে মহালয়ার সম্প্রচার হয় আকাশবাণীর তরফ থেকে, তবে তা অন্য একশিল্পীর কন্ঠে।
সালটা 1976, সেবছর মহালয়ার দিন ভোরে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী'র বদলে সম্প্রচারিত হয়েছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের কণ্ঠে 'দেবীং দুর্গতিহারিণী'। তবে যতই তিনি সিনেমাপ্রেমী বাঙালির হৃদয়ের মহানায়ক হোন না কেন, মহালয়ার ভোরে উত্তমকুমার নয়, সকলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় সেই 'মহিষাসুরমর্দিনী'ই শুনতে চান ও তাতেই সকলে অভ্যস্ত। বিষয়টি মেনে নেননি প্রায় কোনও শ্রোতাই।
এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। পরে সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকেই ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় আকাশবাণী। সেই সময় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র নিজে অত্যন্ত অপমানিত হয়ে শুধুমাত্র বলেছিলেন, “এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। মানুষ যা বলার বলবেন , আমি কোনও মন্তব্য করবো না।” উত্তমকুমারের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন অভিনেতা বসন্ত চৌধুরী প্রমুখ।
তাই অল ইন্ডিয়া রেডিওকে ঐ বছর পুনরায় ষষ্ঠীর দিন সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী'র রেকর্ড বাজাতে হয়। এবং ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ 1977 সালে মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী'র শুনি এবং ষষ্ঠীর দিনে উত্তম কুমারের কণ্ঠে দেবিং দুর্গতিহারিণী সম্প্রচারিত হওয়া শুরু হয়, যা আজ সচল। কিন্তু শহরবাসী যে বর্তমানে ফেস্টিভ মুডে চলে যান মহালয়ার পরের দিন থেকেই তাই অনেকেই ষষ্ঠীর দিনে উত্তম কুমারের কণ্ঠে দেবীং দুর্গতিহারিণী সম্প্রচারিত হওয়া কথা জানেই না। তাদের জন্য তার লিংক দিলাম যদি কেউ তা শুনে দেখেন -
তথ্যসূত্র -
- The Dailyhunt
- TheWall
- মহালয়া সিনেমা
- Wikipedia
চিত্রঋণ -
- মহালয়া সিনেমা
- Internet
Comments
Post a Comment
If you have any doubt, please let me know.