Posts

নিমতলা শ্মশান ঘাট ও ঘাটের মরা প্রবাদের প্রচলনের অজানা কথা - শুভজিৎ দে

Image
এখন যেখানে আনন্দময়ী কালীর মন্দির আছে, আগে নিমতলা শ্মশান ঘাট সেখানেই ছিল, তখন মন্দির তৈরী হয়নি, শ্মশানের মধ্যেই কালী ছিলেন, তার জন্যেই ইনি শ্মশানকালী দেবী, আর এই শ্মশানের পাশেই ছিল গঙ্গা, তখনও স্ট্যান্ড রোড হয়নি। তারপর স্ট্যান্ড রোড তৈরি হলে শ্মশান উঠে গেল কালী মন্দিরের সোজা পশ্চিমে গঙ্গার ধারে, বর্তমানে নিমতলা শ্মশানের দক্ষিণে। 160 ফুট লম্বা 90 ফুট চওড়া জায়গা, তিন দিকে 15 ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, শুধু নদীর দিকটা খোলা ছিল এই শ্মশান। এই শ্মশান ঘাট তৈরি হয় 1828 সালের মার্চ মাসে। 17-03-1828 থেকে এই শ্মশানে শবদাহ আরম্ভ হয়। নিমতলা মহা শ্মশান ঘাট 1945 ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ সিনেমাটার কথা ভাবুন একবার ! অথবা খুব সাম্প্রতিক রানি রাসমণি ধারাবাহিকে ওনার আত্মীয়দের মৃত্যু, শুধু সিনেমা বা গল্পে নয়, একটা সময় কলকাতা এবং তার আশপাশের ঘাটগুলোতেও দেখা যেত মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। তাদের জন্যই তৈরি হয় এই ঘরগুলি যা আজও কোনো কোনো গঙ্গার ঘাটে দেখা মেলে নিমতলা ঘাটের মত সে যুগে পরাত পক্ষে কোনো মুমূর্ষুকে নিজের বাড়িতে মরতে দেওয়া হত না। বাড়িতে মরা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের কথা ও অধর্মের কাজ বলে মন

কিছু জানা ঘাটের কিছু অজানা কথা - শুভজিৎ দে

Image
Bathing in the Hooghly River -  Calcutta (Kolkata) c1885 Source: British Library যে কোনো সভ্যতা তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন তা এক নদীর স্পর্শ পায়। আর আমাদের কারোরই অজানা নয় নদীমাতৃক সভ্যতার কথা, কলকাতাও বলতে গেলে একটি নদী কেন্দ্রীক নগর সভ্যতা। বাণিজ্যের কারণেই এই শহর কলিকাতা ও গঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বহুঘাট। যার অবশিষ্ট কিছু আজ স্থানীয় মানুষের অবহেলার সাথে লড়াই করে কোনোভাবে বেঁচে আছে, আর কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে অনেক বহু ঘাট। যাদের নাম ও ইতিহাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই শহর কলকাতার জীবনস্রোতের সাথে। অষ্টাদশ শতকের কলকাতায় একদিকে যেমন শহর গড়ে উঠেছিল, পথ-ঘাট, রাস্তা তৈরি হচ্ছিল তেমনই ভাগীরথীর তীরে ঘাট সমূহ নির্মিত হয়েছিল। এই সকল ঘাট হয় সরকারি ব্যয়ে অথবা কোনো বিত্তশালী ব্যক্তির অর্থানুকূল্যে তৈরি হয়েছিল। সরকারি ব্যয়ে বোধহয় মাত্র দুটি ঘাট নির্মিত হয়েছিল, একটি কেল্লার ঘাট (যা থেকে কয়লাঘাট ষ্ট্রীট নামের উৎপত্তি হয়েছে) আর অন্যটা হচ্ছে বাগবাজারের পুরানো বারুদখানার ঘাট। উচ্চ ও নিম্ন সকল শ্রেনীর মানুষ এই ঘাট ব্যবহার করত। মেয়েরা সেযুগে ছিল কট্টর অসূর্যম্পশ্যা (যে স্ত্রীলোক সূর্

আন্দুল রাজার বাড়ির গল্প - শুভজিৎ দে

Image
আমি যদিও সাইকেল নিয়েই গিয়েছিলাম, তাও কলকাতা থেকে গাড়ি করে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে যেতে। আন্দুল রোড ধরে আন্দুল পৌঁছে যাকেই জিজ্ঞেস করা যায়, রাজবাড়ির কথা সে-ই বলে দেবে। ট্রেনে করে গেলে, হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে আন্দুল নেমে রিক্সা বা টোটো করে আন্দুল রাজবাড়ি। (আন্দুল রাজবাড়ি ও বিশাল মাঠ)  আসলে আমার বাবার মামারবাড়ি হাওড়ার মানিকপুর অঞ্চলে, আমার ঠাকুমা মানিকপুর জমিদার বাড়ির মেয়ে, আমার ঠাকুমার ঠাকুরদা রামলোচন কর ছিলেন আন্দুল রাজবাড়ির এক নায়েব । সেই সূত্রে এবং যেহেতু হাওড়া জেলার আগামী দিনের বাসিন্দা তাই নিজের চারিপাশের ইতিহাস তুলে ধরা কর্তব্য। সেই কর্তব্যবোধ থেকে আজকের লেখা আন্দুল রাজবাড়ি । (আন্দুল রাজবাড়ির সাথে নিজ্স্বী) ১৮৩০ সালে রাজা রামনারায়ণ রায় বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু করেন। কাজ চলে ১৮৩৪ পর্যন্ত। পেল্লাই এই প্রাসাদের সর্বাঙ্গে এখন জীর্ণতার ছাপ। বাড়ির সামনে কেবল মাঝের অংশে গোটা ১২ স্তম্ভ, একেকটি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু। এটি এক সময়ের নাচঘর। এই অংশে, ভিতরে এককালে ছিল ২০টি বাহারি স্তম্ভ। উপর থেকে ঝুলত ঝাড়বাতি। নামী বাঈজি, নর্তকীদের মজলিস লেগেই থাকত। এই ভবনের দু’পাশে তিন তলা দুটি ভবনের

অফিস পাড়ার গল্প : ডালহৌসী স্কোয়ার - শুভজিৎ দে

Image
ইংরেজ গভর্নর লর্ড ডালহৌসীর স্মৃতি বহনকারী সুবিখ্যাত পার্ক। ভেতরে মস্তবড় দীঘি, নাম লাল দীঘি। সামনেই উত্তর দিকে প্রকান্ড লাল বাড়ি - রাইটার্স বিল্ডিং। বাংলা তথা ভারতের ইংরেজ শাসনের পাকাপোক্ত দপ্তরখানা। পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোনে দাঁড়িয়ে আছে হলওয়েল মনুমেন্ট। যা মনে করিয়ে দেয় অন্ধকূপ হত্যার কথা। ঠিক যেন ঐতিহাসিক মিথ্যাচারের অনৈতিহাসিক নিদর্শনের মত। উত্তর-পূর্ব কোণে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখা যায় সেন্ট জনস চার্চ। চার্চের পূর্ব দিকে ওল্ড কোর্ট হাউস কর্ণার। ছোটো একটি সরু রাস্তার নাম ওটা। ঐ রাস্তা এসে মিসেছে লালবাজার ষ্ট্রীটের সঙ্গে। এই লালবাজার ষ্ট্রীটের ওপর অবস্থিত লালবাজার পুলিশ হেড কোয়ার্টার। লাল দীঘি, লালবাড়ি, লালবাজার অর্থাৎ সবই লালে লাল। মহারাজ রণজিৎ সিং একদিন ভারতবর্ষের মানচিত্রে ইংরেজদের অধীনস্থ প্রদেশগুলি লাল রঙে রাঙিত দেখে, তিনি সখেদে মন্তব্য করেছিলেন, " সাব লাল হো যায়েগা ! " অর্থাৎ গোটা ভারতবর্ষটা ইংরেজদের পদানত হয়ে যাবে, তাই হয়েছে। " বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল, পোহালে শর্বরী, রাজদন্ড রূপে। " (লর্ড ডালহৌসী ও ডালহৌসী স্কোয়ার) বণিকের বেশে ভারতে এসেছিল ইস্ট ইন্ড

তিন কবির ধ্বংসস্তূপ স্মৃতি নিয়ে খিদিরপুর - শুভজিৎ দে

Image
তিন কবির বাসভূমি একসময় ছিল কলকাতার খিদিরপুর অঞ্চলে, যাঁদের অন্যতম অবশ্যই মধুসূদন দত্ত, এবং বাকিরা হলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। খিদিরপুর মোড়ের কাছে একটি কাল্পনিক ২০০ মিটারের ব্যাসার্ধ আঁকলে তার মধ্যে পড়বে তিন বিখ্যাত কবি— রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি। এরমধ্যে হেমচন্দ্র ও রঙ্গলালের বাড়ি কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বাড়ির কোনও কোনও অংশ মাঝেমধ্যেই ভেঙে পড়ে। বর্তমান বাসিন্দাদের মেরামতির সামর্থ্য নেই। সঙ্গে রয়েছে প্রোমোটারের চাপ। অভিযোগ, পুরসভাও নিষ্ক্রিয়। মাইকেলের বাড়ির হেরিটেজ তকমা নিয়ে চলছে আইনি লড়াই। অভিযোগ, স্থানীয় এক প্রোমোটার চেষ্টা করছেন বাড়ি ভেঙে বহুতল তৈরির। বাড়িটির বিভিন্ন ঘর দোকান হিসাবে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে, কার্যত অন্ধকারে পড়ে রয়েছে খিদিরপুরের বিখ্যাত কবিতীর্থ। মধুসূদন দত্ত রঙ্গলাল   বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হেমচন্দ্র   বন্দ্যোপাধ্যায় মধুসূদন দত্ত অনুমান নির্ভর করে মধুসূদনের বিভিন্ন জীবনী থেকে জানা যায়, মধুসূদনের প্রপিতামহ রামকিশোর দত্ত খুলনার (সেকালের যশোর) বাসিন্দা ছিলেন।

ধর্মতলা আর এসপ্ল্যানেড কিন্তু এক জায়গা নয় - শুভজিৎ দে

Image
এসপ্ল্যানেড হল মধ্য কলকাতার একটি অঞ্চল। এটি আক্ষরিক অর্থে "এসপ্ল্যানেড" নয়; কারণ এই অঞ্চলটি কোনো জলাশয়ের ধারে অবস্থিত নয়। যদিও হুগলি নদী এই অঞ্চলের কিছু দূর দিয়েই প্রবাহিত হয়। এসপ্ল্যানেড শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। কলকাতার ময়দান অঞ্চলটি অতীতে ছিল জঙ্গল এলাকা। এই জঙ্গলের উত্তর অংশটিকে এসপ্ল্যানেড নাম দেওয়া হয়। পুরনো কলকাতার ধর্মতলা (অধুনা লেনিন সরণি) থেকে হুগলি নদীর তীরবর্তী চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত এসপ্ল্যানেড বিস্তৃত ছিল। ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় এই অঞ্চলটি ব্রিটিশদের প্রমোদ ভ্রমণের জন্য প্রিয় রাস্তায় পরিণত হয়। ১৭৮০ সালে সোফিয়া গোল্ডবর্ন লিখেছেন, কলকাতার পাঁচটি প্রধান রাস্তা এই অঞ্চলটি ঘিরে ছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ১৭৫৮ সালে এসপ্ল্যানেডের কাছেই ফোর্ট উইলিয়ামদুর্গের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর কলকাতায় ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর বসতি ছোটো অঞ্চল ছেড়ে ধীরে ধীরে ময়দানের আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এসপ্লানেড ও ধর্মতলা এক জায়গা নয়।   Esplanade in Calcutta in India, 1800 কলকাতা তখন বেশ

শতবর্ষ যায়, শতবর্ষ আসে, ইতিহাস একই পথে নিরন্তর ঘুরতে থাকে - শুভজিৎ দে

Image
দেখে মনে হয় ইতিহাস প্রতি ১০০ বছর পরে নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে , এটি কি কেবল কাকতালীয় ঘটনা? একদমই না । তবে কি ভাবে এটা সম্ভব তার উত্তর দিতে গেলে বলতেই হয় -  " চারপাশের সমস্ত কিছু নিয়ে গড়ে উঠেছে পরিবেশ; দূষণের কারণে ধীরে-ধীরে হচ্ছে প্রকৃতি শেষ, পরিবেশের অবদানে গড়ে উঠেছে জাগতিক পরিস্থিতি, মানব সভ্যতার ভুলের কারণে প্রকৃতির হচ্ছে দুর্গতি!" বুবোনিক প্লেগ পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যে (বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য)প্রথম প্লেগ দেখা যায় যা সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান এর নামানুসারে জাস্টিনিয়ানের প্লেগ নামকরণ করা হয়। সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান প্লেগে আক্রান্ত হলেও ব্যাপক চিকিৎসায় তিনি বেঁচে যান। উক্ত মহামারীতে প্রায় আড়াইকোটি(৬ষ্ঠ শতাব্দীর মহামারী) থেকে পাঁচ কোটি লোক প্রাণ হারায়। ঐতিহাসিক প্রকোপিয়াস তার হিস্ট্রি অব দ্যা ওয়ারস গ্রন্থের ২য় ভলিউমে প্লেগের সাথে তার নিজের লড়াই ও উদীয়মান সাম্রাজ্যের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে লিখেছিলেন। ৫৪২ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তকালে, প্লেগ কনস্টান্টিনোপলে পৌঁছে বন্দর থেকে বন্দরে ও ভূমধ্যসাগরের চারিদিকে ছড়াতে থাকে। পরবর্তীতে