Posts

সময়ের সাথে সাথে ফ্যাসিবাদেরও রূপ বদলায় - শুভজিৎ দে

Image
রোমান ক্যাথলিকদের এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায় আছে। পঞ্চদশ খৃষ্টাব্দ ১৪০০-১৫০০ মাঝামাঝি। "পেগান" বা পূর্বদেশীয় অ-খৃষ্টীয় চর্চা বা নারীবাদী তান্ত্রিক বিশ্বাসের নামে, বহু নিরীহ মানুষকে জ্যান্ত জ্বালানো হয়। বিজ্ঞান ও শিক্ষার অগ্রগতি চার্চ মেনে নিতে পারেনি। তাই জিওদার্নো ব্রুনো থেকে কোপারনিকাসের ওপর ধর্মীয় খাঁড়া নেমে এসেছে। আমরা হিটলারের ইহুদী হত্যার কথা জানি। তবে এটাও কথিত আছে ইউরোপের মহামারী প্লেগের বাহকের নাম করে শত শত ইহুদীদের হত্যা করা হয়। আমরা যে পশ্চিমী সভ্যতাকে আধুনিক মনে করি সেটা এই সময় আরো কদর্য ছিলো। ধিরে ধিরে শিক্ষার উন্মেষ কুসংস্কার থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে এসেছে। নবজাগরণের কালে সাম্রাজ্য বিস্তারের লোভ মানুষকে বিশ্ব পরিভ্রমণে পাঠায়। নতুন দেশ আবিষ্কারের লোভে একের পর এক দেশ দখল করা হয়। আমরা কলম্বাসের আমেরিকা যাত্রা জানি। ইনকা মায়া রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যার ইতিহাস জানিনা। প্লেগ ও টাইফয়েড চিকেন পক্সে সংক্রমিত চাদর গিফট করা হত মায়া ইনকা দের। এইভাবে লাতিন আমেরিকায় স্প্যানিশদের আধিপত্য। মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অধ্যায় লিখেছিলো শ্বেতাঙ্গ অধিবাসীরা। ট্রান্স আমেরিকান রেল

মান্ধাতা : পিতার গর্ভে জন্ম নেওয়া ইতিহাসের প্রথম সন্তান - শুভজিৎ দে

Image
মান্ধাতার আমলে এই শব্দযুগল আমাদের অনেকেরই প্রাত্যহিক জীবনে বহুল ব্যবহৃত শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন আসতেই পারে, কে এই মান্ধাতা? কী এমন হয়েছিল তার আমলে যে তিনি এত বিখ্যাত হয়ে গেলেন? (যুবনাশ্বের গর্ভ হতে মান্ধাতার জন্ম হচ্ছে) মান্ধাতা এক রাজার নাম। তিনি ছিলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের ছেলে। রামও এই সূর্য বংশেরই রাজা ছিলেন। মান্ধাতার জন্মের ইতিহাসটাও বেশ অবাক করা। তার বাবা যুবনাশ্বের কোনো ছেলে হচ্ছিল না। তখন তিনি একটি পুত্র সন্তান লাভের আশায় মুনীদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা করতে শুরু করলেন। দিনের পর দিন নিষ্ঠার সাথে সাধনা করার পর এক সময় মুনীরা তার সাধনায় সন্তুষ্ট হলেন। যুবনাশ্বের পুত্র লাভের জন্য মুনীরা এক যজ্ঞ আরম্ভ করলেন। ভোরের দিকে শুরু হওয়া সেই যজ্ঞ শেষ হলো মধ্যরাতে। কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত জল বেদীতে রেখে তারা গেলেন ঘুমাতে। যাওয়ার আগে নিজেরা নিজেরা বলাবলি করলেন, এই কলসির জল যুবনাশ্বের স্ত্রী খেলে তাদের ছেলে সন্তান হবে। সে কথা অবশ্য যুবনাশ্ব জানতেন না। রাতে তার খুব তৃষ্ণা পেল। তখন তিনি নিজেই সেই কলসির পানি পান করে ফেললেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলসিতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া দেখ

ব্যাংক ব্যবস্থা : তখন ও এখন - শুভজিৎ দে

Image
ব্যাংক জাতীয়করণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বনাম উপপ্রধানমন্ত্রীর বিবাদের জেরে ভেঙেছিল শাসক কংগ্রেস দলও৷ আজকের প্রজন্ম সেভাবে পরিচিত নয় ‘ব্যাংক ফেল’ হওয়ার সঙ্গে ৷ কিন্তু স্বাধীনতার আগে বলে নয় তার পরেও বেশ কয়েক বছর এদেশে মাঝে মধ্যেই ব্যাংকে তালা পড়তে দেখা যেত ৷ চিত্রঋণ Wikipedia একদিকে সেজন্য কাজ হারাতেন সেই ব্যাংকের কর্মীরা আবার অন্যদিকে সেখানে সঞ্চিত টাকা রেখে সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসতেন গ্রাহকরা৷ তখনকার বহু গল্প উপন্যাস কিংবা সিনেমায় এই ব্যাংক উঠে যাওয়া কথা উঠে আসত ৷ কারণ অবশ্য সেসময় ব্যাংক জাতীয়করণ হয়নি ফলে সেগুলি ছিল বেসরকারি মালিকানায়৷ এই সামাজিক ব্যাধির পাশাপাশি বাম এবং ব়্যাডিকাল কংগ্রেস নেতারা মনে করতেন এই রকম ব্যাংক ব্যবস্থার ফলে বেসরকারি হাতে পুঁজি সঞ্চিত হচ্ছে যা একেবারেই কাম্য নয়৷ ফলে ব্যাংক জাতীয়করণ করার জন্য দাবি উঠত ৷ অবশেষে ১৯৬৯ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক জাতীয়করণ করেন৷ পরবর্তীকালে আবার ১৯৮০ সালে আরও ছয়টি ব্যাংক জাতীয়করণ করা হয়েছিল৷ তবে ব্যাংক জাতীয়করণ ঘিরে ইন্দিরা গান্ধী এবং মোরারজি দেশাইয়ের সম্পর্কের তিক্ততা চরমে পৌঁছে

অন্ধকার নয়, মধ্যযুগ নবসৃষ্টির যুগ - শুভজিৎ দে

Image
সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলা ভাষার জন্ম বলে অধিকাংশ পণ্ডিত মত প্রকাশ করেছেন। এই সময় থেকে শুরু করে ১২০০ সাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ। প্রাচীন যুগের নিদর্শন একমাত্র সাহিত্য-বৌদ্ধ সহজিয়াতান্ত্রিক মহাজনদের রচিত চর্যাপদ প্রথমস্তরের বাংলা ভাষায় রচিত। প্রাচীন যুগের পর ১২০৪ সাল থেকে মধ্যযুগের সূত্রপাত এবং ১৮০০ সাল তার বিস্তার। ১৮০০ সালের পর থেকে আজ অবধি আধুনিককাল। সাহিত্যের ইতিহাসের এই যুগ বিভাগ মূলত রাজনৈতিক পরিবর্তন ধরেই করা হয়ে থাকে। অবশ্য কোনো শাসক পরিবর্তন হলেই যুগান্তর ঘটে না। নতুন জাতির সঙ্গে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় নতুন মনন ও সংস্কৃতির জন্ম দেয়। নতুন মন-মত-ধর্ম-আচার-মনন-দর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের ফলে ব্যষ্টির চিন্তা-চেতনায় যে অভিঘাত আসে, তারই প্রভাবে বাহ্যজীবনে সমাজে-আচারে-আচরণে এককথায় মানস ও ব্যবহারিক জীবনে যে পরিবর্তন ঘটে, তাতেই ঘটায় যুগান্তর। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাগ সম্পর্কে এই হলো ধারণা। মসুলিম এবং অমুসলিম অনেক সুধীজন মধ্যযুগকে অন্ধকার যুগ বলতে চান। অর্থাৎ এই যুগটা জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-সভ্যতায় অজ্ঞতার যুগ মনে করেন। বর্তমানের এই উন্নত সভ্

ঘুরি ও সমসাময়িক ইতিহাস - শুভজিৎ দে

Image
          ঘুরি রাজবংশ ছিলেন পূর্ব ইরানীয় সুন্নি মুসলিম রাজবংশ। এই রাজবংশ তাজিক বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সীমায় থাকাকালে আধুনিক আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরান এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৮৯৭ থেকে ১২১৫ সাল পর্যন্ত এই রাজবংশ শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং গজনভিদের উত্তরাধিকারী হয়। ঘুরি রাজবংশের কেন্দ্র ছিল বর্তমান আফগানিস্তানের ঘুর প্রদেশ বা মান্দেশ। এটি পশ্চিমে বৃহত্তর খোরাসান এবং পূর্বে বঙ্গ পর্যন্ত পৌছেছিল।প্রথম রাজধানী ছিল ঘুরের ফিরোজকোহ। পরবর্তীতে তা হেরাতে স্থানান্তর করা হয়। এর পাশাপাশি গজনি ও লাহোরকে অতিরিক্ত রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করা হত, বিশেষত শীতের সময়। ঘুরিরা পারস্য সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।ঘুরিদের পর পারস্যে খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য এবং ভারত উপমহাদেশে দিল্লি সালতানাতে মামলুক সালতানাত ক্ষমতায় আসেন।মুইজউদ্দিন বা মুহাম্মদ শিহাবউদ্দিন অথবা মুহাম্মদ ঘুরি ছিলেন ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান। তার ভাই গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদের সাথে তিনি ১১৭৩ সাল থেকে ১২০২ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। তারপর ১২০২ সাল থেকে ১২০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সর

সম্রাট শাহজাহান কেমন শাসক ছিলেন ? - শুভজিৎ দে

Image
সম্রাট শাহজাহান কি একজন জঘন্য ও বিকৃত যৌন চাহিদা সম্পন্ন শাসক ছিলেন ? মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে উপস্থিত হয়ে,  1628 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1658 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"। তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর, এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট। ভাসি শরমা নামক একজন লেখক তার বই "দ্যা নেকেট মোঘল" বইয়ে উল্লেখ করেন,  সম্রাট বাবর থেকে আকবর পর্যন্ত, মোগল সাম্রাজ্য ইতিহাসে কিছুটা ধার্মিক এবং সুশাসনের জন্য সুপরিচিত কিন্তু মোঘল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী সম্রাট শাহজাহান কিছুটা ভিন্ন। শাহজাহান চিত্রঋণ - Wikipedia সম্রাট শাহজাহান একজন জঘন্য ও বিকৃত যৌন চাহিদা সম্পন্ন শাসক ছিলেন ।  কিন্তু বাস্তবে তাকে মোগল সাম্রাজ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয় এবং তার সময়ে ভারতীয় সভ্যতা সবচেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। দাদু আকবরের মতো তিনিও তার সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী ছিলেন। তাজমহলকে ‘ভালোবাসার’ প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। মুঘল সম্রাট শাহাজাহন তাঁর প্রিয় স্ত্রীর প্রতি ভালোবা

তরাইনের যুদ্ধ : ভারতের ইতিহাস পরিবর্তনের ধারা - শুভজিৎ দে

Image
চিত্রসূত্র : ইন্টারনেট গজনভী সাম্রাজ্য নবম শতাব্দীর শেষের দিকে তুর্কীরা সুলতান আলপ্তগীনের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে একটি নতুন রাজ্য গঠন করে। পরবর্তীতে ইতিহাসে এই সাম্রাজ্যটি ‘গজনভী’ সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ৯৭৭ সালে সুলতান আলপ্তগীন নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার বিশ্বস্ত এবং যোগ্য কৃতদাস সবুক্তগীন ‘গজনভী’ সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রায় ২০ বছর শাসন করার পর ৯৯৭ সালে সবুক্তগীন মৃত্যুবরণ করেন। সবুক্তগীনের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মাহমুদ গজনীর সিংহাসনে আরোহন করেন। সিংহাসনে বসেই তিনি হিন্দুস্তানের দিকে মনোযোগ দেন। ১০০০ সালের দিকে প্রাথমিক একটি অভিযান পরিচালনা করে তিনি হিন্দুস্তান সীমান্তের বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা দুর্গ দখল করে নেন। এরপর ১০০১ থেকে ১০২৬ সালের মাঝে গজনীর সুলতান মাহমুদ মোট ১৭ বার হিন্দুস্তানে আক্রমণ পরিচালনা করেন। তাঁর এতবার আক্রমণের পেছনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণ ছিলো। কোনো আক্রমণের কারণ ছিলো রাজনৈতিক আবার কোনোটি ধর্মীয় কারণে হয়েছিলো। হিন্দুস্তানের রাজারা অনেক সময় সুলতানের সাথে পূর্বের করা চুক্তির বরখেলাপ করতেন, কখনো সুলতানের হিন্দুস্তানীয় মিত্রদের আক্রমণ করতেন।