গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী হাই স্কুল - শুভজিৎ দে

আজ (09-03-2021) গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী হাই স্কুলের 165 তম জন্মবার্ষিকী, এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি, স্কুলকে কিছু উপহার দেওয়ার ক্ষমতা আজও আমার হয়নি, পরেও কোনো দিন তা হবে না, কথায় আছে না মাতৃঋণ পরিশোধ যোগ্য নয়, ঠিক তেমনই স্কুলের ঋণ শোধ করা এ জীবনে সম্ভব নয়, না চাইতেই স্কুল আমায় পরিচিতি দিয়েছে জেলা ও রাজ্য জুড়ে কবাডি প্রশিক্ষক হিসেবে, যা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই স্কুলের জন্মদিনে তাকে নিয়ে লেখার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা করছি বহুদিন ধরে, যার বহিঃপ্রকাশ আজ হচ্ছে। 

গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী স্কুলের বহু বছর আগের প্রবেশ পথ


প্রথমেই বলে রাখি এলাকার ও স্কুলের এমন নাম, অর্থাৎ মুদিয়ালী কেন হল ? যদিও তা নিয়ে জনসমাজে একটি গল্প প্রচলিত আছে, আর তা হল এক সময়ে এই অঞ্চলে মহম্মদ আলী নামক এক ব্যক্তির মুদিখানার দোকান ছিল, সে মারা যাওয়ার পর এই অঞ্চলের নাম লোকমুখে মুদিয়ালী হয়ে ওঠে তার নাম ও দোকানকে মাথায় রেখে, তবে ঠিক কোথায় তার দোকান ছিল তা জানা যায়নি, তবে মুদিয়ালী মোরেই গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী স্কুলটি অবস্থিত আজ ও।

গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী স্কুলের বর্তমান প্রবেশ পথ

যদিও, তখন কলকাতা শহর আজকের মতো এতো জমজমাট ছিল না, লখনউ এর পাট চুকিয়ে, নবাব ওয়াজিদ আলী'ও তখন এসে হাজির হননি এই কলকাতায়।  এ দিকে মহাবিদ্রোহ তার পরিণত রূপ গ্রহণ না করলেও বিক্ষিপ্তভাবে তার আগুন এদিক ওদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ততোদিনে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও তখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি, যুগসন্ধিক্ষণের ঠিক এমন সময়ই মেটিয়াবুরুজের ফতেপুর দ্বিতীয় লেন অঞ্চলের গোবিন্দচন্দ্র ঘোষের বাড়ির দালানে কয়েক জন ছাত্র কে নিয়ে শুরু হয় পড়াশোনার কাজ। সেখান থেকেই শুরু, তবে এটা ঠিক কোন সময় তা সঠিক ভাবে জানা যায় না, সেই বাড়ির খোঁজ বর্তমনে এলাকার কেউ দিতে পারেনি। তবে বর্তমান বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস উক্ত ঘটনার অনেক পরের কথা। যা পরবর্তী পর্যায় আলোচিত হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের ঘরের পাশেই এক ফলক থেকে জানা যায় গোবিন্দচন্দ্র ঘোষ ছাড়াও আরও কয়েক জনের নাম, যাঁরা এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, আর তারা হলেন -  শিবচন্দ্র ঘোষ, তারিণীচরণ পাল, নবীনচন্দ্র পাল।

প্রতিষ্ঠাতা দের নামের ফলক

মেটিয়াবুরুজ এলাকার একটি অন্যতম স্কুল, এই গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। 1856 সালের 9 ই মার্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়, যদিও তার বহু আগে থেকে বিদ্যালয়টি শুরু হয়েছিল বলে আমরা আগেই জেনেছি, ফতেপুর সেকেন্ড লেন এর ঘোষেদের বাড়ির দালানে, পরে বর্তমান স্কুল ভবনটির পাঁচ কাটা জায়গা এক পার্সি ভদ্রলোক দান করেন 9ই মার্চ 1856, তবে সেই ভদ্রলোকের নাম জানা সম্ভব হয়নি, সেই থেকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস এই দিনটিতেই পালিত হয়ে আসছে। 2005 সালে যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় বিদ্যালয়ের সার্ধশতবর্ষ উৎসব। 


মুদিয়ালী মোড় থেকে বিদ্যালয়

বর্তমান বিদ্যালয় ভবন যেখানে, সেখানে প্রথমে একটি ঘরে টিনের দেওয়াল দিয়ে দুই দিকে দুটি আলাদা আলাদা ক্লাস চললেও পরে আসতে আসতে সেখানে ভবন নির্মিত হয়। 1867 সালে গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী স্কুল এম.ই (M.E.) এবং 1949 সালে একসটেন্ডেড এম.ই (M.E.) স্তরে উন্নীত হয় স্কুলটি। 1952 সালে বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয় রূপে অনুমোদন লাভ করে, বর্তমনে বিদ্যালয়টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল রূপে অনুমোদন প্রাপ্ত। 


বিদ্যালয়ের উঠানে দাড়িয়ে

বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কলা বিভাগ শুরু হয় ও তিন বছর পর বিজ্ঞান বিভাগ এর শুরু হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে এই স্কুলের জনপ্রিয়তা লাভ পায়। বর্তমনে বিদ্যালয় ভবনটি দুইটি ভাগ, একটি পুরাতন ভবন ও একটি নতুন ভবন, পুরাতন ভবনটি 31টি কক্ষ বিশিষ্ট, এছাড়াও অনুষ্ঠান করার জন্য হল ঘর (চার তলায়) যেখানে অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা দের যৌথ উদ্যোগে। আজ আমাদের বিদ্যালয় 165 বছরে পা দিয়েছে। বর্তমনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন সম্মানিয় শ্রী সুষেণ কুমার মন্ডল মহাশয়, তিনি এবং তাঁর সকল সহকর্মী একত্রে গার্ডেনরীচ অঞ্চলে এবং এই শহরে গার্ডেনরীচ মুদিয়ালী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রী দের মাধ্যমে।

এই স্কুলের কিছু কৃতী শিক্ষার্থী হলেন -


 

  • ডা: দুলাল বোস, প্রাক্তন শেরিফ, কলকাতা,
  • অনন্ত চৌধুরী, IAS
  • অর্নব মন্ডল, প্রাক্তন অধিনায়ক, ভারতীয় ফুটবল দল,
  • অসিতরঞ্জন জোয়ারদার, বিশিষ্ট ভাস্কর 

তথ্যসূত্র 

  • বিদ্যালয় পত্রিকা
  • প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সাক্ষাত্কার
  • শতবর্ষ প্রাচীন বিদ্যালয় - সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 
চিত্রঋণ - বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম

Comments

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে