অন্ধকার নয়, মধ্যযুগ নবসৃষ্টির যুগ - শুভজিৎ দে

সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলা ভাষার জন্ম বলে অধিকাংশ পণ্ডিত মত প্রকাশ করেছেন। এই সময় থেকে শুরু করে ১২০০ সাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ। প্রাচীন যুগের নিদর্শন একমাত্র সাহিত্য-বৌদ্ধ সহজিয়াতান্ত্রিক মহাজনদের রচিত চর্যাপদ প্রথমস্তরের বাংলা ভাষায় রচিত। প্রাচীন যুগের পর ১২০৪ সাল থেকে মধ্যযুগের সূত্রপাত এবং ১৮০০ সাল তার বিস্তার। ১৮০০ সালের পর থেকে আজ অবধি আধুনিককাল। সাহিত্যের ইতিহাসের এই যুগ বিভাগ মূলত রাজনৈতিক পরিবর্তন ধরেই করা হয়ে থাকে। অবশ্য কোনো শাসক পরিবর্তন হলেই যুগান্তর ঘটে না। নতুন জাতির সঙ্গে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় নতুন মনন ও সংস্কৃতির জন্ম দেয়। নতুন মন-মত-ধর্ম-আচার-মনন-দর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের ফলে ব্যষ্টির চিন্তা-চেতনায় যে অভিঘাত আসে, তারই প্রভাবে বাহ্যজীবনে সমাজে-আচারে-আচরণে এককথায় মানস ও ব্যবহারিক জীবনে যে পরিবর্তন ঘটে, তাতেই ঘটায় যুগান্তর। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাগ সম্পর্কে এই হলো ধারণা। মসুলিম এবং অমুসলিম অনেক সুধীজন মধ্যযুগকে অন্ধকার যুগ বলতে চান। অর্থাৎ এই যুগটা জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-সভ্যতায় অজ্ঞতার যুগ মনে করেন। বর্তমানের এই উন্নত সভ্যযুগে কোথাও কোনো অমানবিক জুলুম-নির্যাতনের ঘটনার কথা শুনলে তারা মন্তব্য করেন, ‘এটা মধ্যযুগের বর্বরতা’ এবং নাক সিটকান। তারা মধ্যযুগকে একটা বর্বরযুগ ও অজ্ঞতার যুগ বলেই ধারণা করে থাকেন। এটা তাদের মধ্যযুগের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা হীনম্মতা।

চিত্রঋণ - ইন্টারনেট

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই সময়টা ছিল আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-সভ্যতা-সংস্কৃতি বিকাশের সোনালি সকাল। মধ্যযুগই দুনিয়ার মানুষকে অন্ধকার-অজ্ঞতা থেকে আলো ও জ্ঞানের জগতে নিয়ে আসে। অন্ধকারে বন্দী মানবত্মাকে মুক্তির আযান শুনিয়ে জাগিয়ে তোলে। আমাদের আলোচনা এখানে মধ্যযুগে বাংলদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনসাপেক্ষে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ( *বিন* কোনো কোনো ঐতিহাসিক তথ্যে পাওয়া যায় ) কর্তৃক বাংলাদেশ জয়ের পরই রাজত্বের পতনের সাথে বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রাচীন যুগের সমাপ্তি ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন এক জাতির সংস্পর্শে বাংলাদেশী মানুষের মন ও মননে এবং সামাজিক, ব্যবহারিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন শুরু হয়। ফলে এদেশের মানুষ নবতর জীবনবোধ ও নতুন চিন্তাভাবনা ধ্যান-ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই তা ঘটেছিল। ইসলাম ধর্মে মানুষে মানুষে ছোটবড় এর ভেদাভেদ নেই, সবাই সমান, এই অমিয় বাণী শ্রবণে এদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধরা যারা এতদিন শাসক শ্রেণী ও ব্রাহ্মণদের নির্যাতন ও শোষণের শিকারে পরিণত হয়েছিল, তাদের মৃতপ্রায় দেহে নতুন আশা ও নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে। সেন আমলে বৈশ্য ও শূদ্রদের মানুষই মনে করা হতো না। তাদের পশুর মতো শুধু খাটানো হতো। নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না সে সমাজে। বিধবা হবার পর বিয়ে তো বহু দূরের কথা, তাকে মৃত স্বামীর ঘরের চাকরাণী ও দেবরের সেবাদাসী হয়ে থাকতে হতো। অধিকাংশ বিধবাকে স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে হতো। মুসলমানরা যখন বিজিত দেশের মানুষের কাছে ইসলামের নীতি-আদর্শ প্রচার করলেন, তখন দীর্ঘকালের উৎপীড়িত শোষিত মানুষগুলো নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠলো। দিকে দিকে আনন্দের সাড়া পড়ে গেল। তারা ইসলাম এবং মুসলমানদের বরণ করে সহযাত্রী হয়ে গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, মধ্যযুগের প্রথম দিককার (১২০৪-১৩৫০ সাল) উৎকৃষ্ট সাহিত্যিক রচনা বা ধ্যান-ধারণাপ্রসূত। কোনো উঁচু দরের লেখা আজো পাওয়া না যাওয়ায় কোনো কোনো ঐতিহাসিক অনুমান করেছেন, এই অর্ধশতাব্দীর দীর্ঘসময়ে কোনো কিছুই রচিত হয়নি এবং তার জন্য তারা ঢালাওভাবে তুর্কি বিজয়কেই দায়ী করেছেন। তাদের মতে, ‘তুর্ক বিজয়ের প্রথম পর্বটা ছিল ধ্বংসের পর্ব। মোটামুটি ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল- এই দেড়শ’ বছরের বাংলাদেশের কোনো সাংস্কৃতিক বা সামাজিক চিত্র পায় না, সার্ধশতাব্দী জোড়া এই নিস্তব্ধতাই তুর্ক বিজয়ের ভয়াবহতার একটা প্রমাণ।...

১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি তুর্ক আঘাতে ও সংঘাতে ধ্বংসে ও অরাজকতায় মূর্ছিত অবসন্ন হয়েছিল। খুব সম্ভব, সেসময়ে কেউ কিছু সৃষ্টি করার মতো প্রেরণাই পাননি। বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় যা লেখা হয়েছে, তা-ও সামান্য। এই সন্ধিযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হচ্ছে তাই সাহিত্য শূন্যতার ইতিহাস। এই সাহিত্য শূন্যতার জন্য যে তুর্ক বিজয়ের ভয়াবহতাকে দায়ী করা হয়েছে, সেই ভয়াবহতার চিত্রাঙ্কন করেছেন অন্য আর একজন ঐতিহাসিক : ‘যখন লক্ষ্মণ সেনের সভাকে কেন্দ্র করিয়া সংস্কৃত কাব্য সাহিত্যের নতুন নতুন পরীক্ষা চলিতে ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে তাতার-তুর্কি খোরাসানের মরু-পর্বতবাসী ইসলাম ধর্মাবলম্বী একদল অশ্বারোহী বিদ্যুৎগতিতে বাংলাদেশের কিয়দংশ অধিকার করিয়া ফেলিল। তার পরে শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংসতার দ্বারা বাঙালাও তার চতুস্পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলামের অর্ধচন্দ্রখচিত পতাকা প্রোথিত হইল। ১৩০০ হইতে ১৫০০ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত প্রায় দুইশত বৎসর ধরিয়া এই অমানুষিক বর্বরতা রাষ্ট্রকে অধিকার করিয়াছিল। এই যুগ বঙ্গ সংস্কৃতির তামস যুগ।... এই সময় বর্বর শক্তির আঘাতে বাঙালী চৈতন্য হারাইয়া ছিল।’

এই সময়ে বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টি না হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, তুর্কিদের বাংলা বিজয়েরকালে দেশের ওপর দিয়া একটি ঝড় বহিয়া গিয়াছিল- ১২০০ হইতে প্রায় দেড়শত বৎসর ধরিয়া বাংলাদেশের সাহিত্য বা বিদ্যাচর্চার বিশেষ নিদর্শন পাওয়া যায় না। এই দেড়শত বৎসর ধরিয়া মুসলমান তুর্কিদের হাতে বাংলার হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিশেষ বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিল, এটি একটি যুগান্তরের কাল দেশময় মারামারি, কাটাকাটি, নগর ও মন্দির ধ্বংস অভিজাত বংশীয় ও প-িতদের উচ্ছেদ প্রভৃতি অরাজকতা চলিয়াছিল। এ সময়ে বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।’ এ প্রসঙ্গে ড. সুকুমার সেনের অভিমতও একইরূপ। তিনি বলেন, তুর্কি আক্রমণের ফলে বাঙালীর বিদ্যা ও সাহিত্যচর্চার মূলে কুঠারাঘাত পড়িল। প্রায় আড়াইশত বৎসরের মতো দেশ পিছাইয়া গেল। দেশে শান্তি নাই, সুতরাং সাহিত্যচর্চা তো হইতেই পারে না।’ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও বলেছেন, এই সময় যুদ্ধবিগ্রহে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ছিল না। সেইজন্য সাহিত্যচর্চা নামমাত্র ছিল। বস্তুত মুসলমান অধিকারকাল হইতে এই সময় পর্যন্ত কোনো বাংলা সাহিত্য আমাদের হস্তগত হয় নাই। আমরা এই ১২০১ হইতে ১৩৫২ পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্ধকার বা সন্ধিযুগ বলিতে পারি।’ (বাংলা সাহিত্যের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড)

তুর্কি আমলের ঘটনাপ্রবাহের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, এই সময়কার হিন্দু রচিত কোনো ইতিহাস নাই। সেই রাষ্ট্র বিপ্লবের যুগে কোনো বিদেশী পর্যটক গৌড়বঙ্গ ভ্রমণে আসেন নাই, সুতরাং মুসলমান রচিত মুসলমান বিজয়ের ইতিহাস হইতেই এ সমস্ত পূরণের চেষ্টা করিতে হইবে। কিন্তু সমসাময়িক ও পরবর্তী মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত কোন ইতিহাসেই তুর্কী অত্যাচারের এই ভয়াবহতার কথা উল্লেখ নাই। তা হলে বর্তমান প-িতগণ এসব তথ্য পেলেন কোথায়? নাকি এসব কাহিনী তাদের স্বকপোল কল্পিত? তা ছাড়া আর কি? হিংসা ও হীনম্মন্যতার কারণেই তারা এসব কল্পনা করে লিখেছেন তাতে সন্দেহের কি আর থাকতে পারে। কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক ইতিহাসেই এই উক্তির জোর সমর্থন পাওয়া যায় না।

মনে হয় বাংলা সাহিত্যের এই আদি মধ্যযুগের সাহিত্যের দুষ্প্রাপ্যতা ও তার জন্য তুর্কী বিজয়ের ভয়াবহতার কথা বলার সময় এই প-িতগণ ইউরোপীয় ইতিহাসের মধ্যযুগকে সামনে রেখে বিচার করেছেন। ইউরোপীয় ইতিহাসের মধ্যযুগের চিত্র সংক্ষেপে অংকন করেছেন একজন ঐতিহাসিক, রোমান সাম্রাজ্যের অধঃপতন হইতে শুরু করিয়া ১৫০০ খৃস্ট অব্দ পর্যন্ত ইউরোপীয় মধ্যযুগ বিস্তৃত। খৃ: ২৩৬ অব্দ হইতে ফ্রাঙ্ক, আলমন্নি, গ্লথ, ভ্যাগতাল প্রভৃতি বর্বর ও অর্ধবর্বর জাতির আক্রমণের ফলে রোমের হেলেনীয় সংস্কৃতির প্রাণরস ধীরে ধীরে শুষ্ক হইয়া আসিলো। পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে এই বর্বর জাতিসমূহ রোম সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ লইয়া দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দুর্মদ শক্তির আধিপত্য স্থাপন করে। ইহার পর হইতে ইউরোপে মধ্যযুগের আরম্ভ। এই মধ্যযুগের আদি ‘তামসযুগ (The Dark Age) নামে উল্লেখিত হইয়া থাকে।’ ইউরোপের পঞ্চম শতাব্দীর তামস যুগের লক্ষণ ধরেও ধ্যান ধারণা নিয়ে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইতিহাস বিচার করা সম্পূর্ণ অনুচিত। তুর্কী মামলুক বলবনীদের সাথে ইউরোপের ফ্রাঙ্ক, আলমন্নি গথ জাতিসমূহের সাথে কোনো তুলনাই চলতে পারে না। ইউরোপের এই বর্বর জাতির অভ্যুত্থানের সময়, বলা যেতে পারে, প্রায় সমগ্র পৃথিবীই সভ্যতার আলোক থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন ছিল। তাই ইউরোপে সেদিন বর্বর শক্তিসমূহ এক একটি সভ্যতা সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে, সৃষ্টি করেনি কিছুই। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে প্রথমে ইসলামই সভ্যতার আলোক-মশাল জ্বালে।’

আবির্ভাবের কাল থেকে অতি অল্প দিনের মধ্যে ইসলাম অর্ধপৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশে দেশে নিগৃহীত, অত্যাচারিত শোষিত মানুষের মধ্যে আশা ও মুক্তির আলোক প্রজ্জলিত করে। ইসলামের উদার নীতি ও সাম্য মৈত্রী ভ্রাতৃত্বের আদর্শে উজ্জীবিত তুর্কীজাতি নব মানবতার বাণী বহুন করে নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। তাদের আগমনে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতির চেতনার উন্মেষ ঘটে। তাই তুর্কীরা বিজিত জাতির উপর অত্যাচার চালিয়ে ছিল এসব ধারণা করা মোটেই ঠিক নয়।

তুর্কীগণ বাংলাদেশে এসেছিলেন রাজ্য স্থাপন করতে, লুটপাট করে স্বদেশে ফিরে যাবার জন্য নয়। ফলে রাজনৈতিক কারণেই অনাচার রোধ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনে দেশবাসীর মনে আস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। তাই এ কথা অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, সেদিন শাসকের পরিবর্তনে সমগ্র জনমণ্ডলীর উপর কোন চাপই সৃষ্টি হয়নি। একজন ঐতিহাসিকের কথায় এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘এ দেশে আসিয়া মুসলমান রাজারা সংস্কৃত হরফে মুদ্রা ও লিপি ছাপাইয়াছেন, বহু বাদশা হিন্দু মঠ ও মন্দিরের জন্য দানপত্র দিয়েছেন। সে সব ঐতিহাসিক নজির দিন দিন নতুন করিয়া বাহির হইতেছে।’ (ক্ষিতিমোহন সেন) মুসলমান বিজিতারা এ দেশে রাজ্য স্থাপন করেই হিন্দু পাইক (পদাতিক সৈন্য) ও কর্মচারী নিয়োগ করতে থাকেন। রাজ্য শাসনে ও রাজস্ব ব্যবস্থায় এমন কি সেনাপত্যেও হিন্দুর প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল।’ এবং গৌড়ের সুলতানরা মুসলমান হলেও রাজকার্য প্রধানত: হিন্দুর হাতেই ছিল।’ (সুকুমার সেন) অধিকাংশ আফগানই তাহাদের জায়গীর গুলি ধনবান হিন্দুদের হাতে ছাড়িয়া দিতেন। এই জায়গীরগুলির ইজারা ধনশালী হিন্দুরা লইতেন এবং ইজারা ব্যবসায় বাণিজ্যের সমস্ত সুবিধা ভোগ করিতেন। পাঠান রাজত্বকালে জায়গীরদারেরা দেশের ভিতরে রাজস্ব আদায়ের কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। দেশের শাসন ও শান্তি রক্ষার জন্য হিন্দুদের উপরই তাদের নির্ভর করতে হতো। সেই জন্য পাঠান আমলে হিন্দু ভূস্বামী ও অধিকারীদের যথেষ্ট উল্লেখ দেখা যায় । (বিনয় ঘোষ) তুর্কীগণ বাংলাদেশে লুণ্ঠন, নরহত্যা, মঠমন্দির বিহার ধ্বংস ইত্যাদি করে অত্যাচার চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন, এ কথা অনায়াসে স্বীকার করে নেয়া যায় না। বরং ইতিহাস থেকে আমরা তার বিপরীত চিত্রই পাই। স্যার যদুনাথ সরকার সম্পাদিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত History of Bengal (Vol.ii) গ্রন্থে বাংলাদেশ বিজয়ী তুর্ক সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ  বিন বখতিয়ার খিলজী সম্পর্কে বলা হয়েছে Malik Ikhyaruddin Muhammad Bakhtyar devoted the next two years (1203-1205) to the peaceful administration of his newly founded kingdom....He was not blood thirsty and look no delight of massacre or infficting misery of his subjects’ পরবর্তী শাসক ইয়াজউদ্দীন মুহাম্মদ শিরান খিলজীর (১২০৭-১২০৮) স্বল্পকালের শাসন কালও শান্তিপূর্ণ ছিল। এই বংশীয় সুলতান গিয়াস উদ্দীন ইয়াজ খিলজীর (১২১৩-১২২৭) উদার ন্যায়নীতি, সুবিচারের ফলে দেশে পূর্ণ শান্তি বিরাজমান ছিল। he  Kingdom of lakhnawati and Bihar enjoyed  unisterrupted peace... under the vigorous and  beneficent rule of sultan Ghyasuddin khilji.

Sultan Ghyasuddin reigh of about fourteen years was a pleasing epoch of peace and prosperity for his Kingdom.

ঐতিহাসিকগণ আরো বলেছেন, I was came like a veritable blessing if the almighty and all throyght his reign he laboured for the good of his people, (History of Bengal (vol.ii) গ্রন্থ থেকে গৃহীত।

অপরদিকে রাজশক্তি কর্তৃক স্থানীয় অধিবাসীদের জোরপূর্বক ব্যাপকভাবে ধর্মান্তরিতকরণের কথাও মোটেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। ইসলামের প্রথম পাদে (খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে) মুসলিম সেনাপতিগণ দেশ জয় ও ধর্মপ্রচারের উভয় দায়িত্ব পালন করলেও কোনো দেশে তারা কোনোদিনও স্থানীয় অধিবাসীদের জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছেন, এমন কোনো নজির নেই। ইসলামের উদার নীতি ও সমানাধিকারের আদর্শের ফলেই দেশে দেশে কালে কালে শোষিত বঞ্চিত মানুষ ইসলামের পতাকাতলে জড়ো হয়েছে, ইসলাম গ্রহণ করে মুক্তির আস্বাদ লাভ করেছে।

‘তাদের (ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের) আচরণে ছিল এমন একটা নতুন ভঙ্গি এবং কণ্ঠে ছিল এমন একটা নতুন সুর যা সেইকালের ভারতীয়দের মনে রেখাপাত করে এবং তাদের ইসলামের দিকে আকর্ষণ করে। অবশ্য বিজয়ী শক্তির ধর্মমতের প্রাধান্য সহজেই সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে, তথাপি এর আকর্ষণের মধ্যে কেহ কেহ এমন সম্ভাবনার সন্ধান পেয়েছিলেন যাতে তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তুর্কীগণ এ দেশ জয় করার বহু পূর্বেই এ দেশবাসী ইসলামের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠেছিল। আরব ব্যবসায়ী ও মুসলিম দরবেশদের আগমনে ইসলামের নব মানবতার বাণী শুনে এদেশবাসী মুগ্ধ হয়েছে- তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করেছে।’ (ডঃ অরবিন্দ পোদ্দার) এই সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সাহিত্য সৃষ্টি না হবার কোনো কারণ নেই। এ সময় বাংলার মানুষ নিজের সুখ-দুঃখের কাহিনী নিজের ভাষায় লিখেনি, কিংবা নিজের বিরহমিলনের গান নিজের কথায় রচনা করেনি- এমন একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির কথা ভাবতেও পারা যায় না। কিন্তু সে রচনার সামান্যই পাওয়া গেছে। এই দুষ্প্রাপ্যতার অজুহাতেই তুর্ক বিজয়ের ভয়াবহতাকে দায়ী করে কেউ বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব, আবার কেউ বলেছেন, ‘তুর্কী আগমনের ফলে বাঙালীর বিদ্যা ও সাহিত্য চর্চার মূলে কুঠারাঘাত পড়িল।’ স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে কোন বিদ্যা ও সাহিত্য চর্চার মূলে কুঠারাঘাত পড়েছিল? কারণ তুর্কীদের বাংলাদেশ বিজয়ের পূর্বেই বাংলা ভাষায় বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টির সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছিল এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। সেন আমলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই এ কথা প্রমাণ মিলবে।

বৌদ্ধদের পতনের পর কর্ণাট থেকে আগত ব্রাহ্মণেরা (সেন বংশীয়) বাংলাদেশের শাসনভার হস্তগত করেন। ব্রাহ্মণ ধর্মের পুনরুত্থানও পুনঃসংস্থাপনের চেষ্টায় সেনরাজগণ সমাজে বর্ণভেদ প্রথা চালু করেন। শাসন কার্য বিদ্যা চর্চা, পূজাপার্বণ, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাদি সমস্ত দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের হাতে। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়গণ উচ্চপদে আসীন থেকে সমগ্র সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। বর্ণাশ্রমের ভেতরে শূদ্ররা এবং বাইরে স্থানীয় অধিবাসী এদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। চাঁড়াল, চামার, দুলে, মালো, বারুই প্রভৃতি অন্ত্যজগণ ‘অধম সঙ্কর’ বলে হিন্দু সমাজে নিগৃহীত হতো। কৌলিন্য শাসিত এবং স্মার্ত বর্ণাশ্রম সমাজ ব্যবস্থার দ্বারা খ-িকৃত হিন্দুসমাজ ‘অধম সংঙ্কর’দের বাইরে ঠেলে দিচ্ছিল, আবার অপরদিকে বৌদ্ধদের প্রতিও সুবিচার করেনি। এই হিন্দু সমাজে অশ্রদ্ধেয় ‘পাষণ্ডি’ বৌদ্ধগণ নানা দিক দিয়ে নিপীড়িত হচ্ছিলেন। এ সময়েই ব্রাহ্মণদের সাংস্কৃতিক অধঃপতন শুরু হয়। সংস্কৃতি ছিল রাজ ভাষা এ ভাষা চর্চা করার অধিকার সাধাণ মানুষের তো ছিলই না, অধিকন্তু ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশের বিরুদ্ধাচারণ করায় বাংলা চর্চা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এ সম্পর্কে ব্রাহ্মণপণ্ডিতগণ শাস্ত্রীয় বিধান ও প্রচার করেন-

‘অষ্টাদশ পুরানানি রামস্য চরিতানি চ।
ভাষায়ং মানব: শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেং।’

অর্থ: অষ্টাদশ পুরান ও রামচতি মানব ভাষায় (দেশজ ভাষা-বাংলা) শ্রবণ করলে রৌরব নরকে স্থান হবে।

এ থেকে বোঝা যায়, বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টি না হওয়া এবং বাংলা সাহিত্য চর্চার মূলে কুঠারাগাত পড়ার জন্য তুর্কীরা মোটেই দায়ী নয়।

বরং বলা চলে, সামাজিক বিকৃতি, বর্ণ ও শ্রেণিগত সংকীর্ণতা ধর্ম অসহিষ্ণুতা নানা রকম আচার কুসংস্কার প্রভৃতির ভারে এক পঙ্গু সমাজ এর মাঝে সেদিন ‘সমগ্র মানবমণ্ডলী এক জাতি’ (কানান নাছু উম্মাতান ওয়াহেদাতান) ইসলামের এই মহানবাণী প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশে তুর্কীদের মাধ্যমে। ইসলামের সামাজিক সমানাধিকারের এই আদর্শ এবং শ্রেণীগত সংস্কারের অনুপস্থিতিই বর্ণসংস্কারের জর্জরিত ভারতে ইসলামের বিজয়াভিযানের অন্যতম কারণ। আর ইসলামের পরিধির বাইরে অবস্থিত বিভিন্ন উৎপীড়িত মানুষের কাছে এটা সর্বাপেক্ষা বড় আকর্ষণরূপে কাজ করেছে। হিন্দু সমাজের বিধানদাতাদের নিকট যারা ছিল শূদ্র ও অস্পৃশ্য পর্যায়ের, ইসলাম তাদের দিল মুক্ত মানুষের অধিকার এবং শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণদের উপরও প্রভুত্ব করার ক্ষমতা। মুসলিম সমাজ সংস্কৃতি ছিল প্রগতিশীল আর সে জন্য তার বিজয়ও হয়েছে অপ্রতিহত। সামাজিক চিন্তাধারার এই উদারতা এবং সমানাধিকারের আদর্শই ভারতের সামাজিক ইতিহাসে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। আর এই আদর্শের মধ্যে আছে মানুষের মানবতার স্বীকৃতি। বাঙালীর ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেদিন নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। এ কৃতিত্ব সম্পূর্ণটাই সেদিনের মুসলিম শাসনের। বিদ্যা চর্চা ও সাহিত্য চর্চা কোনোদিনই বন্ধ হয়নি। তার প্রমাণ এ সময় সংস্কৃত ভাষায় বেশকিছু গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। অনায়াসে ধারণা করা যায় সাধারণ মানুষের ভাষা বাংলারও সাহিত্য রচিত হয়েছিল। জানা যায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে গৌড়ের সুলতান নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতা সর্বপ্রথম মহাভারতের বাংলা অনুবাদ হয়। রামাই প-িতের শূন্য পুরানের অন্তর্গত ‘নিরঙ্গনের রুম্মা’ নামক গাঁথা জাতীয় ছড়া ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রচিত বলে প-িতেরা মন্তব্য করেছেন। এই সময়েই রচিত বলে অনুমিত ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ নামক গ্রন্থ সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ এনামুল হক বলেছেন, দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা ভাষা সৃজ্যমাপ অবস্থায় ছিল, চর্যাপদে সে ভাষা ধৃত হইয়াছে। এ কথা সহজেই অনুমান করা যায় যে, চর্চার বঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যময় অপ্রন্দ্রংশ তুর্কী আমলে আসিয়া আরো বেশি মাত্রায় বাংলা হইয়া উঠিয়াছে। এমন ভাষার কয়েকটি নমুনা ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ নামক অপন্দ্রংশ ভাষায় রচিত নীতি কবিতার সংকলনটিতে দেখিতে পাওয়া যায়। বাংলা ভাষার অনুরূপ ভাষায় যে কয়টি নমুনা এই গ্রন্থে পাওয়া যায়, সেগুলি বাংলাদেশেই রচিত হইয়া থাকিবে এবং এ গুলির রচনা কালও তুর্কী আমলের একেবারে গোড়ার দিকে বলিয়া মনে হয়।’ (মুসলিম বাংলা সাহিত্য)। এই ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে রচিত বলে অনুমিত সংস্কৃত গ্রন্থ শেক শভোদয়ার সংস্কৃত গদ্যের মূল কাঠামো এবং বাকভঙ্গি বেশ কিছুটা বাংলা। এ ছাড়াও পরবর্তীকালে ভাষা পরিবর্তিত হলেও এবং সেই আকারে সংগৃহীত হলেও ‘খনার বচন’ গুলিও এ সময়ে রচিত হয়েছিল বলে পণ্ডিতেরা দাবি করেন।

অধিকান্ত লিপি বিশারদ ও প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত স্বীকার করে নিলে বলতে হয়, ‘ইহা স্থির সিদ্ধান্ত যে, শ্রীযুক্ত বসন্তরঞ্জন মহাশয় ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের’ যে পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করিয়াছেন তাহা ১৩৮৫ খৃ: অব্দের পূর্বে, সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্থে লিখিত হইয়াছিল।’ এই মত স্বীকার করে নিলে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের রচনা কাল আমাদের আলোচ্য সময়ের মধ্যে পড়ে। এই হলো মোটামুটি এ সময়ের রচিত সাহিত্য নমুনা।

এই যুগে রচিত প্রচুর সাহিত্যিক নির্দশন পাওয়া যায়নি বা এ সময়ে ‘বড়দরের সাহিত্য সৃষ্টি’ হয়নি তার জন্যে দুঃখ নেই। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তুর্কীযুগ সৃষ্টির কাল নয়, ‘অন্ধকার যুগ’ তো নয়ই- এ হচ্ছে উন্মেষ ও প্রস্তুতির কাল। ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ভাষায় বাংলা সাহিত্যের তুর্কীযুগ প্রধানত ভাষা গঠনের কাল। বাঙ্গালীর মন এ সময়ে আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে নদীর ধারার মতো এঁকে-বেঁকে। নিজের পথ নিজের ভাষার খাতে কেটে চলেছে।

তুর্কী বিজয় প্রভাবের মর্মমূল থেকে সত্য উদ্ধার এবং তার যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন ড. আহমদ শরীফ-তুর্কীর ধর্ম, মনন ও সংস্কৃতির প্রভাবে যে নতুন চিন্তা চেতনার লাবণ্য এ দেশে দেখা গেল তা ড়ছিল ব্যাপক ও গভীর-ভক্তিবাদ, সন্ত ধর্ম-প্রেমবাদ তারই প্রসুন। তাতে বিজ্ঞান, জ্ঞান, বুদ্ধি ও উচ্চমার্গের তাত্ত্বিক চেতনা ছিল, ছিল মানবতার ও সংবেদনশীলতার স্নিগ্ধতা। সেদিন নিজির্ত-নিপীড়িত নির্বিত্ত নিম্নবর্ণের মানুষের মনে মুক্তি আকাক্সক্ষা ও দ্রোহের সাহস জাগিয়ে ছিল। ফলে মানুষের জীবনে জীবিকায় উন্মুক্ত হলো সম্ভাবনার অসীম দিগন্ত। তুর্কী প্রভাবে দেশী মানুষের চিন্তা চেতনায় যে বিপ্লব এলো তাতে ভারতীয় জীবন জিজ্ঞাসায় ও জগত ভাবনায় যুুগান্তর ঘটিয়েছিল। তাই শেষ করতে চাই, আমার স্যারের একটি কথা দিয়ে, আর তা হচ্ছে - " Dark side is the best side to open the another side."
রাতের অন্ধকারের গহীন আঁধারের মধ্যেই আগামী ভোরের আলো লুকিয়ে থাকে, ঠিক তেমনই এই সময়কে অন্ধকার যুগ বললেও, এই সময় সব সমৃদ্ধ লেখার সৃষ্টি হয়।

Comments

Popular posts from this blog

সহজ পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের অবনির্মান - শুভজিৎ দে

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক - শুভজিৎ দে

পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন - শুভজিৎ দে